ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

ভারত

চিরঞ্জিতের কথায় অস্বস্তিতে তৃণমূল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫১ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৩
চিরঞ্জিতের কথায় অস্বস্তিতে তৃণমূল

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে প্রায় একদশক ধরেই দলবদল যেন অতি সহজ বিষয় হয়ে গিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সংযোজন মুর্শিদবাদের জেলার সাগরদিঘিতে কংগ্রেসের টিকিটে জেতা বাইরন বিশ্বাস।

সোমবার (২৯ মে) অভিষেকের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন তিনি। ফলে বাংলার বিধানসভায় সিপিআইএম-এর পর কংগ্রেসের আসন সংখ্যাও এখন শূন্য।

এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল যখন উচ্ছ্বাসে মগ্ন তখন দলবদলের সংস্কৃতি নিয়ে তীব্র আক্রমণ করেছেন শাসকদলের বিধায়ক তথা অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। তিনি বর্তমানে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের বিধায়ক।

মঙ্গলবার (৩০ মে) সংবাদমাধ্যমে চিরঞ্জিত বলেছেন, এভাবে দলবদল করা আমি পছন্দ করি না। এটা লোক ঠকানো। মানুষ তো তাকে (বাইরন) একটা প্রতীক দেখে ভোট দিয়েছেন। তিনি যদি দলবদল করেন তাহলে আসলে মানুষকেই অপমান করা হয়। সে অঞ্চলেরর ভোটারদের অপমান করা হয়।

সন্দেহ নেই চিরঞ্জিতের এই কথা একেবারে আদর্শ রাজনীতির সংজ্ঞা। কিন্তু, এখন সে সব বাংলায় কার্যত মিউজিয়ামে চলে যেতে বসেছে, তখন চিরঞ্জিতের এই বক্তব্য তৃণমূলেরই অস্বস্তি বাড়াবে বলে মত অনেকের।

চিরঞ্জিতের যখন এই মন্তব্য তখন গতকাল  বাইরন বলেছিলেন, রাজ্যের উন্নয়নে শামিল হতে এবং নিজের কেন্দ্রের উন্নয়নের জন্যই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। একই সাথে বাইরনের অভিমত ছিল, তার জেতার পিছনে কংগ্রেসের কোনো অবদান নেই। তিনি নিজের মুরোদেই সাগরদিঘিতে জিতেছিলেন।

তবে শুধু বাইরন নয়, চিরঞ্জিতের কথায়, যারা অন্যদল থেকে আসছে অর্থাৎ তৃনমূল যাদের দলে নিচ্ছে অন্তত এক বছর দেখে তারপর দলে নেওয়া হোক। অভিনেতার এসব বলার কারণ, সম্প্রতি তৃনমূলত্যাগী অর্জুন সিং ব্যারাকপুর আসন থেকে বিজেপির টিকিটে এমপি হন। এবং পরে একুশের বিধানসভায় মমতা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসায় তৃনমূলে ফের যোগ দেন অর্জুন সিং। অথচ এমপি পদ এখনও ছাড়েননি।

এ বিষয়ে চিরঞ্জিত মঙ্গলবার বলেছেন, একজন একটা দলের এমপি। তিনি আবার অন্য দল করছেন। এটা কী করে হয়? এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়। তিনি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর এমপি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। এরপর তৃনমূলের টিকিটে কলকাতার বালিগঞ্জ বিধানসভা থেকে উপনির্বাচনে জিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছেন। দলত্যাগীদের নীতি এটাই হওয়া উচিত। যারা দলে নিচ্ছেন তাদের এ বিষয়ে ভাবা উচিত।

চিরঞ্জিতের এসব নীতিকথায় অস্বস্তিতে তৃণমূল। কারণ, তার দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই বাইরনের হাতে দলের পতাকা তুলে দিয়েছিলেন।

তবে ২ মার্চ সাগরদিঘিতে জেতার পর বাইরন বলেছিলেন, আমায় কেউ কিনতে পারবে না। রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী সাগরদিঘির মাটি কামড়ে পড়ে না থাকলে আমার জেতা সম্ভব হতো না। সেইসঙ্গে তার বক্তব্য ছিল, সিপিআইএমও সাংগঠনিক শক্তি উজাড় করে দিয়ে ভোটের ময়দানে নেমেছিল। কিন্তু, দল পাল্টে বেমালুম উল্টো সুর ধরেছেন বাইরন। এদিন সেটাকেই লোক ঠকানো হিসেবে চিহ্নিত করেছেন অভিনেতা চিরঞ্জিত।

বাইরন বিশ্বাসের তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর তীব্র অসন্তোষ জানিয়েছে সর্বভারতীয় কংগ্রেস। এ ব্যাপারে ট্যুইট করে রাহুল গান্ধী ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, তৃণমূল এটা ভালো করল না। সাগরদিঘির মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হলো। এর আগেও যেভাবে গোয়া, মেঘালয় ও ত্রিপুরায় কংগ্রেস ভাঙানো হয়েছে, তা বিরোধী ঐক্যকে কোনভাবেই মজবুত করবে না। বরং বিজেপিকে সাহায্য করবে।

এরও আগে রাহুলের ভারতজোড়ো যাত্রায় বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক সব দলগুলোকে কংগ্রেস ডাকলেও তৃনমূলকে সঙ্গী করেনি। এ বিষয়ে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি রাজ্য কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় বলেছিলেন, রাহুল গান্ধী, ভারতজোড়ো যাত্রার দিল্লির পথে নামতে তৃণমূলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তৃণমূল তখন স্পষ্ট জানিয়েছিল, তারা এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবে না। আমরা জানি, বিজেপি বিরোধী যেকোনো আন্দোলনে তৃণমূলকে পাওয়া যায় না। তাই আমরা পশ্চিমবাংলার ভারতজোড়ো কর্মসূচিতে তাদের আমন্ত্রণ জানাইনি। এই কর্মসূচি বিজেপির বিরুদ্ধে। তৃণমূল হলো বিজেপির বি-টিম। মোদির দোসর। তাই তৃণমূলকে এই কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

এদিকে ২০২৪ সালের লোকসভার ভোটের আগে ঠিক করা হয়েছে বিরোধী ঐক্য করতে আগামী ১২ জুন বিজেপি বিরোধী ২১টি দল বিহারে বৈঠক করবে। সেই বৈঠকে যোগ দেবেন মমতা, জাতীয় কংগ্রেসসহ অন্যান্যরা। এখন দেখার বিষয় মমতা যেভাবে কংগ্রেস ভাঙছেন, সেখানে একসাথে কীভাবে চলে তৃনমূল এবং জাতীয় কংগ্রেস। আর ভারতের প্রধান বিরোধী শক্তি কংগ্রেসকে সঙ্গে না নিলে এবারও বিজেপিকে বেগ দেওয়া সহজ হবে না। ফলে জয়রাম রমেশের কথা সত্য কিনা তা সময় বলবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৬ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।