ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

উত্তর ২৪ পরগনা ঘিরে ইডির তৎপরতা, নজরে পার্থ-পিকে

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২২
উত্তর ২৪ পরগনা ঘিরে ইডির তৎপরতা, নজরে পার্থ-পিকে

কলকাতা: সাময়িক বহিষ্কৃত পশ্চিমবঙ্গের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও বাংলাদেশের পি কে হালদারের মধ্যে কি কোনো যোগসাজশ খুঁজে পাচ্ছে ইডি? পৃথক ঘটনায় গ্রেফতার হলেও দুজনের মধ্যে কোনো যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হালদারদের বিরুদ্ধে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) দাবি, বাংলাদেশের টাকা আত্মসাৎ করে অবৈধভাবে পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা।

তাদের সহযোগিতা করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালীরা।

অপরদিকে, পশ্চিমবঙ্গের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী, অভিনেত্রী অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে পাওয়া গেছে রাশি রাশি রুপি, বিপুল পরিমাণে স্বর্ণ, বৈদেশিক মুদ্রা, জমির দলিল। ইডির জেরায় অর্পিতা জানিয়েছেন, শিল্পমন্ত্রীর কথায় অর্থ-স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রা ফ্ল্যাটে রেখেছিলেন তিনি। আবার শিল্পমন্ত্রীর দাবি, ওই অর্থ তার নয়। জেরায় উঠে আসছে এমনই নানান তথ্য। পাশাপাশি শিল্পমন্ত্রীর বাংলাদেশের সঙ্গে অবৈধ যোগাযোগের সন্ধান পাচ্ছে ভারতের তদন্তকারী সংস্থাটি।

অর্থাৎ, হুন্ডির মাধ্যমে বাংলাদেশের অবৈধ টাকা যেমন হালদারদের হাত ধরে ভারতে এসেছে ঠিক তেমনভাবে পশ্চিমবঙ্গের টাকা শিল্পমন্ত্রীর সহযোগিতায় বাংলাদেশ গেছে। তবে ইডির দাবি, শুধু বাংলাদেশে যায়নি, বাংলাদেশ হয়ে বিদেশেও গেছে। তবে বাংলাদেশ বাদে কালো টাকা সরাসরি বিদেশে কেন যায়নি এ কথাও ভাবাচ্ছে ইডিকে। তদন্তকারী সংস্থাটি মনে করছে অবৈধ অর্থ একটি টেক্সটাইল সংস্থার খাতে বিনিয়োগ হয়েছে বা সেটারর মাধ্যমে আদান প্রদান হয়েছে এবং সেই প্রতিষ্ঠানটি উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে।

ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকের সঙ্গে সুম্পর্ক ছিল পার্থ-অর্পিতার। আবার কলকাতার পর পার্থ-অর্পিতার সবচেয়ে বেশি অবৈধ অর্থ পাওয়া গিয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনার বেলঘরিয়া থেকে। পাশাপাশি বাংলাদেশি পিকে হালদার ও তার ৬ সহযোগীদের গত ১৪ মে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা থেকেই গ্রেফতার করেছে ইডি। এই মুহূর্তে তারা কলকাতার জেল হেফাজতে। পিকে-অর্পিতা ইডির হেফাজতে। ফলে দেখা যাচ্ছে ইডির যত কাণ্ড পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা ঘিরে।

হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ইডির পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারতে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি পি কে হালদার ওরফে শিবশঙ্কর হালদার ও তার পরিবারের নামে। পিকে হালদার ওরফে শিবশঙ্কর হালদার নামে ভারতে ১৩টি ভুয়া কোম্পানি রয়েছে। বাংলাদেশের অবৈধ অর্থ পশ্চিমবঙ্গে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন। তার ও পরিবারের নামে ৮৮টি ভারতীয় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। মালয়েশিয়ায় সম্পত্তির হদিস পাওয়া গছে। দুবাইতে ব্যবসা। ভারত, বাংলাদেশ, গ্রানাডার পাসপোর্ট এবং কানাডায় নাগরিকত্বের নথি। ৮১টি ইলেকট্রনিক গ্যাজেট। হালদারের মোবাইল ঘেঁটে সিঙ্গাপুর, কানাডাসহ কয়েকটি রাষ্ট্রে ফোন কলের হদিস। পাশাপাশি পাওয়া গেছে পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালীদের যোগসাজশ।

এ বিষয়ে পিকে হালদার মামলায় ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী বলেছেন, তদন্ত এখনও চলছে। এখন ভারতীয় পার্টের দিকে নজর দিয়েছি। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের প্রভাশালীদের নাম উঠে আসছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই কোনো নাম সামনে আনছি না। অপরদিকে, দেখা যাচ্ছে হালদারদের তদন্তকারী ইডির কয়েকজন কর্মকর্তাকে পার্থ-অর্পিতা ঘটনায় তল্লাশি চালাতে।

এদিকে শিল্পমন্ত্রীর বান্ধবী অর্পিতার নামে একাধিক ফ্ল্যাটের খবর জানা গেছে। মঙ্গলবার (২ আগস্ট) কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণের পাঁচ জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে ইডি। আর কী কী পাওয়া যায় সেদিকেই নজর রাজ্যবাসীর। এর আগে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দুই ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার ৫৫ কোটি ৪৩ লাখ রুপি, ছয় কেজি স্বর্ণের গহনা ও বার, মিলেছে প্রচুর সম্পত্তির দলিলও। এরপর থেকে প্রকাশ্যে আসছে একের পর এক সম্পত্তির খবর। বাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি, গাড়ির যে তালিকা এখনও পর্যন্ত উঠে এসেছে, তার বাজারমূল্য ১০০ কোটি রুপির কম নয় বলে ইডির ধারণা। পাওয়া গেছে একাধিক ভুয়া কোম্পানি।

পাশাপাশি বাংলাদেশে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের যোগসাজশ রয়েছে বলে মনে করছে ইডি। এবার সেই তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছে সংস্থাটি। এই রহস্য সন্ধানের জন্য ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাহায্য নেবে ইডি। টালিগঞ্জের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া পাটের ব্যাগ থেকে বারাসতের একটি টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠান নজরে আসে ইডির। এমনকি মাঝে মধ্যেই ওই প্রতিষ্ঠানের দোকান থেকে প্রচুর শাড়িও কিনেছেন পার্থ-অর্পিতা। ইডির ধারণা ওই প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে বিপুল পরিমাণে অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়েছে।

কলকাতার লেখক, সাংবাদিক সাদউদ্দিন মনে করছেন, পিকে হালদারের সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কোথাও একটা যোগসূত্র আছে। তিনি বলেন, পিকে হালদারের ঘটনা সামনে আসার পর অনেক কিছুই আমাদের চোখের সামনে ভাসছে। কারণ, যখন দুই দেশের সংস্কৃতি ও ভাষাগত মিল থাকে তখন এটা হওয়া কঠিন কিছু নয়। পার্থ চট্টোপাধ্যায় জন্ম সূত্রে সাতক্ষীরার লোক। আমি নিজেও জানি বাংলাদেশের অনেক সংস্কৃতি কর্মীর সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মেলামেশা ও লেনদেন ছিল। আমি অনেকের নামই জানি, কিন্তু বিচার বিভাগীয় তদন্ত চলার স্বার্থে সংবাদমাধ্যমে কারও নাম বলব না।

পার্থের ঘটনায় বাংলাদেশও নজর রাখছে। এ বিষয়ে সাদউদ্দিন বলেন, রাখাটাই স্বাভাবিক। চীন যেমন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটা অর্থনৈতিকভাবে উঠে আসা দেশ। তেমনি সাউথ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বিশেষ করে আমাদের উপমহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশ ক্রমশ ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করছে। তারা তো লক্ষ্য রাখবেই। কারণ, তাদের সব থেকে কাছের প্রতিবেশী রাষ্ট্র হচ্ছে ভারত। সেখান থেকে যদি হুন্ডির মাধ্যমে কোনো টাকা অবৈধভাবে বাংলাদেশে চলে যায় তাতে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে।

পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অর্থপাচার আইনে মামলা করা হয়েছে। একই মামলা দেওয়া হতে পারে পার্থ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধেও। ১০ আগস্ট পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের তোলা হবে কলকাতার নগর দায়রা আদালতে। ঠিক তার এক সপ্তাহ আগে বুধবার (৩ আগস্ট) পার্থ চট্টোপাধ্যায়দের তোলা হচ্ছে ওই একই আদালতে।

তবে পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের সঙ্গে পার্থ-অর্পিতার কোনো যোগসাজশ আছে কিনা, তা এখনও প্রমাণিত না হলেও বিষয়টি খতিয়ে দেখছে ভারত ও বাংলাদেশের তদন্তকারী সংস্থাগুলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০২২
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।