কলকাতা: কলকাতা জুড়ে রয়েছে সম্প্রীতির বাতাবরণ। একদিকে যেমন নবী দিবস নিয়ে উৎসবে মেতেছে শহরের মুসলিম সম্প্রদায়, ঠিক তেমনভাবে সনাতন বাঙালিরা ঘরে ঘরে পালন করছেন লক্ষ্মীপূজা।
ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ১২ রবিউল আউয়াল, এই দিনে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। মানুষের মধ্যে অজ্ঞতা, মুর্খতা ও বিভেদ দূর করতেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর আবির্ভাব। তিনি বিশ্বে শান্তির ধর্ম ইসলাম প্রচার করেছেন। একই সঙ্গে মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শ, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং মানবকল্যাণ অশান্ত পৃথিবীতে শান্তি সৃষ্টির আবহ তৈরি করেছে।
দিনটি উপলক্ষে কলকাতার মুসলিম মহল্লাগুলো সেজে উঠেছে। কোনো কোনো মহল্লায় শনিবার (৮ অক্টোবর) রাতেই মিলাদ, নাথ এবং কাওয়ালির আয়োজন করা হয়েছিল। এদিন সকালে বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে জশনে জুলুস শোভাযাত্রা বের হয়েছিল। বিতরণ করা হয়েছে খেজুর, বিস্কুট, শরবত। শহরের বিভিন্ন গোরস্থানে প্রিয়জনদের মোনাজাত করতেও দেখা গেছে। নতুন জামাকাপড় পরে মহল্লায় আড্ডা-আনন্দে মেতে ওঠেন সকলে।
কলকাতার টালিগঞ্জের কেওড়া পুকুর মসজিদের ইমাম শেখ হাফেজ আবদুল হালিম গফর সম্প্রিতির বার্তা দিয়ে বলেন, পশ্চিমবঙ্গে সম্প্রিতি ও শান্তি বিরাজ করে। একই দিনে দুই সম্প্রদায় উৎসবে মেতে উঠেছেন। যা নজিরবিহিন। যে যার মতো উৎসব পালন করছেন। এটাই তো বাংলার পরিচয়, কলকাতার সংস্কৃতি।
অপরদিকে, কেটে গিয়েছে শারদীয়া দুর্গাপূজা। শরৎকালের লক্ষ্মীপূজাকেই কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা বলে। শনিবার (৮ অক্টোবর} ভোররাত ৩টা ২৯ মিনিটে পূর্ণিমা শুরু হয়েছে, শেষ হবে ৯ অক্টোবর রাত ২টা ২৫ মিনিটে। এই সময়ের মধ্যে সনাতন হিন্দুরা লক্ষ্মীপূজা করে থাকেন।
এদিন বাড়ি বাড়ি শুরু হয়েছে কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার আয়োজন। পূজার আগে চালেরগুঁড়ো দিয়ে বাড়িতে দেওয়া হয় আলপনা। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। মনে করা হয়, এই লক্ষ্মীপূজায় যে বাড়ির লোকজন রাত জাগেন, সেই বাড়িতে লক্ষ্মীদেবী প্রবেশ করেন। যারা রাত পর্যন্ত জেগে আরাধনা করেন, তাদের বিশেষ আশীর্বাদ করেন মা লক্ষ্মী।
বলা হয়, লক্ষ্মীর আসার সময় যে বাড়ির গৃহস্থরা ঘুমিয়ে থাকেন, সেই বাড়ি থেকে মুখ ফেরান দেবী। সনতনী বিশ্বাস হল, এই কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার দিনে মা লক্ষ্মী তাঁর বাহন পেঁচার পিঠে বসে পৃথিবী দর্শন করেন। এদিনের পূর্ণিমার জ্যোৎস্না মনের শান্তি ও ঘরের শ্রীবৃদ্ধি করে। ভক্তের প্রার্থনায় এদিন সাড়া দেন দেবী লক্ষ্মী।
পুরোহিত শুকদেব ভট্টপাচার্য বলেন, উপোস রেখে গৃহিণীরা যেমন পরিবারের মঙ্গল কামনায় পূজা করেন, ঠিক তেমনি আমরাও সারাদিন উপোস থেকে বাড়ি বাড়ি উপসনা করি। আমি ইসলাম ধর্ম সমন্ধে খুব বেশি না জানলেও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্বন্ধে কিছুটা জানি। আমি একটাই কথা বলতে পারি, বিশ্ব কল্যাণের জন্য এ ধরনের মহামানবের পৃথিবীতে আরও একবার আবির্ভাবের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, জুন ৯ অক্টোবর, ২০২২
ভিএস/এমএমজেড