ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

শক্তির দেবীর আরাধনা আর দীপাবলিতে মেতেছে ভারত

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২২
শক্তির দেবীর আরাধনা আর দীপাবলিতে মেতেছে ভারত

কলকাতা: ভারতজুড়ে আজ উৎসবের বাতাবরণ। সোমবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে একদিকে যেমন সনাতন বাঙালিরা কালীপূজা এবং প্রদীপ প্রজ্বলন করে বাড়ি সাজাবেন, তেমনি অবাঙালিরা লক্ষ্মী-গণেশ পূজা আর আলোর উৎসবে মাতবেন।

রামায়ণ অনুসারে, চৌদ্দ বছর বনবাস জীবন কাটিয়ে শ্রীরাম যখন ফেরেন, সেই আনন্দে অযোধ্যাবাসী গোটা রাজ্য প্রদীপ দ্বার আলোকিত করে। এসবেরই মেলবন্ধনে দীপাবলি উৎসব। তবে মাকালী আর সনাতন বাঙালির যোগসূত্র চিরকাল। শক্তির উপাসনায় বরাবরই এগিয়ে বাংলা। কালীঘাট, তারাপীঠ, দক্ষিণেশ্বর, নৈহাটি থেকে বারাসাত সেজে উঠেছে আলোর উৎসবে। শক্তির আরাধনা মেতে উঠেছেন বঙ্গবাসী। আলোর উৎসবে মাতোয়ারা তিলোত্তমা কলকাতাও।

বীরভুম জেলার তারাপীঠ মন্দির: 
কালী পূজার সকাল থেকেই তারাপীঠে উপচে পড়ছে ভক্তদের ভিড়, রাতভর খোলা থাকবে মন্দির। আজ দীপান্বিতা কালীপুজো। প্রতি বছর প্রচুর ভক্তের সমাগম হয় তারাপীঠের মন্দিরে।   তারাপীঠে পুজোর প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, এদিন ভোরে মা তারাকে অন্যান্য দিনের মতো স্নান করানো হয়। এরপর অষ্টধাতুর মুখাভরণ, মুণ্ডমালা, সোনার অলংকার, ফুল, মালা আর শোলা দিয়ে শ্যামা রূপে সাজানো হয়। মায়ের প্রথম পূজার সময় দেওয়া হয় শীতল ভোগ। আর পাঁচটা দিনের মতোই এদিনও নিত্যভোগ দেওয়া হবে।

এরপর সন্ধ্যারতির আগে মাকে পুনরায় ফুল মালা দিয়ে সাজানো হয়। একদিকে চলে চণ্ডীপাঠ অন্যদিকে চলে পূজা। পূজা শেষে মায়ের আরতির পাশাপাশি দ্বিতীয়বার ভোগ নিবেদন হয়। ভোগে থাকে পোলাও, খিচুড়ি, মাছ, মাংস, ভাজা, মিষ্টি ও পায়েস। তবে রান্নায় ব্যবহার হয় না পেঁয়াজ, রসুন।  এরই পাশাপাশি মোমবাতি আর মাটির প্রদীপে আলোকিত করা হয়ে থাকে শ্মশান চত্বর। মনস্কামনা পূরণে মা তারার কাছে নিজের সাধ্যমত পূজা দেন দূরদূরান্ত থেকে আসা অসংখ্য ভক্ত।

এই জেলায় রয়েছে সতীর দুটি পীঠ আছে। একটি, বোলপুরের কঙ্কালীতলা, আরেকটি নলহাটি। দীপান্বিতা অমাবস্যায় এই দুই মন্দিরে মহা ধূমধামের সঙ্গে কালীপূজা হয়। তারা পীঠের পাশাপাশি বিশেষ আয়োজনে সেজে উঠেছে কঙ্কালীতলা, নলহাটি মন্দির। এখানে কালীপূজায় পঞ্চব্যঞ্জন সহযোগে ভোগ নিবেদন করা হয়। ভোগ হিসেবে থাকে পোলাও, খিচুড়ি, সাদা ভাত, পাঁচরকম ভাজা, পাঁচ মিশালি তরকারি, মাছ, চাটনি, পায়েস এবং মিষ্টি। এখানকার অন্নভোগের বিশেষত্ব পোড়া শোলমাছ মাখা। দীপান্বিতা অমাবস্যা বিশেষ সন্ধ্যারতি পর নিবেদন করা হয় লুচি, পায়েস, সুজি দিয়ে শীতল ভোগ।

হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত একটি কালীমন্দির দক্ষিণেশ্বর মন্দির। জনপ্রিয়তার নিরিখে দক্ষিণেশ্বরের কালীপূজা শীর্ষে। সকাল থেকে মন্দিরে ভক্তদের বিরাট লাইন নজরে এসেছে। একটি বার এখানকার মায়ের দর্শন পেতে সারা বছরই দেশ বিদেশ থেকে ছুটে আসেন প্রচুর সংখ্যক ভক্ত। ফলে কালীপূজার দিনে ভিড় যে উপচে পড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রানি রাসমণি প্রতিষ্ঠিত মন্দির পূজিত হন ভবতারিণী রূপে। দীপান্বিতা কালীপুজোর দিনে এখানে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখার মতো। প্রদীপ ও রঙিন আলোয় কালীপুজোর রাতে যেন আরও মায়াবী হয়ে উঠেছে ভবতারিণীর মন্দির।

কলকাতার কালীঘাট মন্দির। ৫১ সতীপীঠের অন্যতম পীঠ কালীঘাট। সকাল থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে আগত বহু ভক্ত কালীঘাট মন্দিরে ভিড় জমিয়েছেন। এখানে কালী মায়ের ভোগ সাজানো হয়, বেগুনভাজা, পটলভাজা, কপি, আলু ও কাঁচকলা ভাজা, ঘিয়ের পোলাও, ঘি ডাল, শুক্তো, শাকভাজা, মাছের কালিয়া, পাঁঠার মাংস ও চালের পায়েস। ব্যবহার হয় না পেঁয়াজ রসুন। তবে রাতে নিরামিষ ভোগ নিবেদন করা হয় কালীঘাটে। লুচি, বেগুন ভাজা, আলু ভাজা, দুধ, ছানার সন্দেশ আর রাজভোগ থাকে কালীঘাটের ভোগে।

উত্তর কলকাতার ঠনঠনিয়া কালীবাড়িতে শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির। অতি প্রাচীন ও অত্যন্ত জনপ্রিয়। কথিত আছে যে অতীতে ডাকাতদের আক্রমণ থেকে সতর্ক করার জন্য এই মন্দিরের ঘণ্টা বাজিয়ে ঠনঠন শব্দ করা হত। সেই থেকেই এই মন্দিরের নাম ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি। প্রতি বছর এই কালীমূর্তি নতুন ভাবে সাজানো হয়। তা দেখতে জমায়েত হয় অগণিত ভক্তের। কালীপূজার রাতে ভোগ দেওয়া হয়, লুচি, পটল ভাজা, ধোঁকা বা আলুভাজা, আলুর দম ও মিষ্টি।

উত্তর ২৪ পরগনা শ্যামনগর কালীবাড়ি মহিমা কম নয়। কালীপুজোর দিন সেখানেও বিশেষ পূজা হয়। সকাল থেকেই ভক্তবৃন্দের ঢল নেমেছে শ্যামনগর কালীবাড়িতে। অন্যদিকে শ্যামা পূজার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ নৈহাটি অরবিন্দ রোডের বড়মা। বড়মার মূর্তির উচ্চতা ২১ ফুট। তিনি এখানে দক্ষিণাকালী রূপে পূজিত হন। বড়মা’র পুজো উপলক্ষে সকাল থেকেই সাজো সাজো রব নৈহাটিতে।

মালদহ জেলার মাশান কালী। সেফালি বেওয়া নামে এক মুসলিম বৃদ্ধা নারী হাতে শক্তির দেবীর আরাধনা হয়। এই পূজা ঘিরে উন্মাদনা তুঙ্গে থাকে। ৬৫ বছরের বৃদ্ধা সেফালি স্বনাদেশ পাওয়ার পর ৪০ বছর ধরে পূজা দিয়ে আসছেন মা কালী। তার হাতেই এ পূজার শুরু হয়। বছরের পর বছর ধরে চলে আসা মালদহের হবিবপুরের এই কালীপূজা ঘিরে এলাকায় উৎসাহ-উদ্দীপনার শেষ নেই। এখানকার দেবী-মূর্তিকে ‘মাশান কালী’ নামে ডাকা হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২২
ভিএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।