হবিগঞ্জ: রেস্তোরাঁয় খেতে গেলেন, মেন্যু দেখে দিলেন অর্ডার। দেখলেন খাবারের ট্রে নিয়ে টেবিলের দিয়ে এগিয়ে যিনি আসছেন তিনি পায়ে নয়, চলেন চাকায়! নিচে জ্বলছে আলো!
দেখতে একজন নারী হলেও কোথায় যেন রয়েছে ভিন্নতা।
এরই মাঝে প্রশ্ন জাগতে পারে, রেস্তোরাঁয়, বাসা-বাড়িতে রোবটসেবার কথা শুনেছি জাপানের মতো প্রযুক্তিসমৃদ্ধ দেশগুলোতে।
উন্নয়নশীল বাংলাদেশে কি এখনই এমন কিছু সম্ভব?
হ্যাঁ বিষয়েটিকে সম্ভব করেছে হবিগঞ্জের একটি রেস্তোরাঁ। সেখানে নারী আকৃতির রোবটের মাধ্যমে খাবার সরবরাহ হচ্ছে।
জেলা শহরের বদিউজ্জামান খান সড়কে আলেয়া-আহনাফ টাওয়ারের ৩য় তলায় রয়েছে রেস্তোরাঁটি। নাম ‘কিচেন-২০’। সেখানে ভোক্তাদের দেওয়া হচ্ছে রোবটিক সেবা।
রোবটটি অবশ্য ক্রেতার কাছ থেকে কোনো অর্ডার নেয় না। কেবল রান্নাঘর থেকে তৈরি খাবার টেবিলে পৌঁছে দেয়। নির্দিষ্ট লাইন (ট্র্যাক) ধরে চলাচল করে এটি।
খাবার নিয়ে ভোক্তার টেবিলের সামনে গিয়ে ইংরেজি ভাষায় স্বাগত জানায় রোবটটি। এর পর ট্রে থেকে খাবার নামিয়ে নিতে বলে। এরপর হাতে থাকা নীল সুইচে চাপ দিতে অনুরোধ করে। এতে চাপ দিলে রোবটি ফিরে যায় রান্নাঘরে।
‘কিচেন-২০’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালেহ চৌধুরী জানান, সিলেটের দুজন প্রকৌশলী তিন মাসে এই রোবটটি বানিয়েছেন। একে পুতুলের মতো রূপ দেওয়া হলেও এর ভেতরের পুরোটাই যন্ত্র। এটি ব্যাটারিচালিত। নিয়ন্ত্রণ হয় রান্নাঘরে থাকা সুইচের মাধ্যমে। রোবটটির চলাচলের জন্য একটি ছোট রেল সড়ক তৈরি করা হয়েছে রেস্তোরাঁয়। যা দিয়ে খাবার পৌঁছানো হয় কাস্টমারদের টেবিলে।
রেস্তোরাঁটিতে একসঙ্গে ১০০ জন বসে খাবার খেতে পারেন। এর নাম ‘কিচেন-২০’রাখা হলেও স্থানীয়ভাবে এ রেস্তোরাঁ ‘রোবট রেস্টুরেন্ট’ নামে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে । রোবটটির কার্যক্রম দেখতে ও সেবায় নতুনত্ব পেতে কাস্টমাররা সেখানে ভিড় করছেন নিয়মিত।
এ রেস্তোরাঁয় খেতে আসা তেমন একজন কাস্টমার হবিগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মো. বদরুল আলম।
তিনি বলেন, ‘রোবট রেস্টুরেন্টের’ কথা শুনে মেয়েদের নিয়ে খেতে এসেছি। সবকিছু দেখে ভাল লেগেছে। রোবটের সেবায় খাবার খেয়ে এ প্রজন্ম আগামীর প্রযুক্তি নির্ভর পৃথিবীর কথা ভাবতে আগ্রহী হবে।
জানা গেছে, সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা ডিপ্লোমা প্রকৌশলী অর্পণ চন্দ ও নীহাল চন্দ অঙ্কুর রোবটটি বানিয়েছেন।
অর্পণ চন্দ বলেন, দীর্ঘ তিন মাস আমরা দুজন এটি বানাতে কাজ করেছি। এমন কাজে দেশে এটিই প্রথম। এই প্রজেক্ট আমাদের চ্যালেঞ্জ ছিল। রোবট ট্রে নিয়ে কি চলতে পারবে? আসলেই কি দাঁড়াতে পারবে? সফল হতে পারব কি? এসবে প্রশ্ন ছিল। সুন্দর একটি বডি তৈরি, রোবাটের হাত বাঁকা করাসহ আনুষঙ্গিক কাজে অনেকবার আটকে যেতে হয়েছে। পরে সমাধানও বের করেছি। অবশেষে আমরা সফল হয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২৩
এসএএইচ