ঢাকা: রাজধানীতে এক সেমিনারে নিরবচ্ছিন্ন দ্রুতগতির ইন্টারনেট, স্মার্ট ডিভাইস এবং ডাটামূল্যের সহজলভ্যতার ওপর জোর দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে বিটিআরসি এবং বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের যৌথ উদ্যোগে শুরু হওয়া এই সেমিনার চলবে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত।
বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের সিনিয়র সচিব কে.এম আবদুস সালাম।
তিন দিনব্যাপী সেমিনারে মোট আটটি সেশনে প্রযুক্তিবিদ, গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, উদ্যোক্তা, টেলিযোগাযোগ খাত সংশ্লিষ্ট অংশীজনসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা, বাংলাদেশ উইমেন ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের প্রতিনিধি ও বিটিআরসির কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করবেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে বাংলাদেশ বর্তমানে যে অবস্থানে এসেছে, তা সারা বিশ্বের জন্য রোল মডেল।
দেশের তরুণ প্রজন্ম আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকার উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল সংযুক্তি হবে স্মার্ট বাংলাদেশের মেরুদণ্ড। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ টুজি নেটওয়ার্কের যুগে প্রবেশের পর গত ২৬ বছরে দেশের প্রায় শতভাগ এলাকা মোবাইল নেটওয়ার্ক কাভারেজের আওতায় এসেছে।
বিটিআরসি কর্তৃক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের জন্য ‘এক দেশ এক রেট’ সেবা চালু হওয়ার কারণে শহর ও গ্রামের মধ্যে ইন্টারনেটের দামের বৈষম্য হ্রাস পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের সুফল ভোগ করতে হলে প্রতিটি নাগরিককে প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি খাতের অগ্রগতির জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ খাতে গবেষণা ও উন্নয়নে পিছিয়ে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি সম্প্রসারণের পাশাপাশি সকলের জন্য স্মার্ট ডিভাইসের সহজলভ্যতাও নিশ্চিত করতে হবে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনধারায় ইন্টারনেট অপরিহার্য হয়ে উঠেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ডিজিটাল সংযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়নে বিটিআরসি বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে জাতীয় সংসদের সিনিয়র সচিব কে.এম আবদুস সালাম বলেন, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহীত ডিজিটাল বাংলাদেশের যে যাত্রা শুরু হয়, তার সুফল দেশের সকল মানুষের নিকট পৌঁছে গেছে। গত ১০ বছরে ডিজিটাল খাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বর্তমান ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের যে রুপকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তা যথাসময়ে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আ.হ.ম বজলুর রহমানের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের মহাসচিব মোহাম্মদ আবদুল হক অনু, মতামতভিত্তিক নিউজ পোর্টাল ভিউস বাংলাদেশ এর সম্পাদক রাশেদ মেহেদী, এশিয়া ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ, অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটর’স বাংলাদেশ এর মহাসচিব লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার।
সেমিনারের প্রথম দিনে দুটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেশনে বক্তব্য দেন বিটিআরসির লিগ্যাল অ্যান্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগে. জেনা. মো. খলিল-উর-রহমান, দৈনিক আমাদের সময়ের নির্বাহী সম্পাদক মইনুল আলম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খায়ের মাহমুদ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শাহ আলম চৌধুরী, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. জুলকারিন জাহাঙ্গীর, আর্টিকেল-১৯ দক্ষিণ এশিয়া এর সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মিস রুমকী ফারহানা।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, দেশের সকল মানুষকে কানেক্টিভিটির আওতায় নিয়ে আসতে এবং ডিজিটাল রূপান্তরের সুফল জনগণের দোরগোঁড়ায় পৌঁছে দিতে দেশের অধিকাংশ উপজেলাকে উচ্চগতির ফাইবার অপটিক ক্যাবলের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
আলোচনায় নেটওয়ার্ক কাভারেজ, নিরবচ্ছিন্ন দ্রুতগতির ইন্টারনেট, স্মার্ট ডিভাইস এবং ডাটামূল্যের সহজলভ্যতা, ডিজিটাল অবকাঠামো বিনির্মাণের ওপর গুরুত্বরোপ করা হয়। টেকসই ইন্টারনেট সুবিধা, ইন্টারনেটের অর্থবহ ব্যবহার এবং এ খাতে গবেষণা অত্যন্ত জরুরি বলেও মতামত দেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২৩
এমআইএইচ/এমজেএফ