ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

স্মার্টফোন বিক্রি করে সাইবার ঝুঁকিতে পড়ছেন না তো?

সাফ্‌ফাত আহম্মদ খান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২২
স্মার্টফোন বিক্রি করে সাইবার ঝুঁকিতে পড়ছেন না তো?

বর্তমানে আমাদের জীবনের অপরিহার্য একটি ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস ‘স্মার্টফোন’। নিজেদের প্রয়োজনের সঙ্গে এটি ফ্যাশনের যন্ত্রও হয়ে গিয়েছে।

মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিত্য নতুন ফিচার সম্বলিত স্মার্টফোন বাজারে নিয়ে আসছে। এতে আজকে যে স্মার্টফোন সবচেয়ে আধুনিক—অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সেটি পুরনো হয়ে যাচ্ছে।

কয়েক বছর আগে হয়তো কয়েক মেগাপিক্সেল ক্যামেরা যুক্ত ফোন যথেষ্ট ছিল। কিন্তু এখন দৃশ্যপট বদলে গেছে। একশোর বেশি মেগাপিক্সেল আর সঙ্গে তিন-চারটি ক্যামেরা যুক্ত স্মার্টফোন খুব সহজেই পাওয়া যাচ্ছে।

অন্যদিকে প্রযুক্তি প্রিয় মানুষের মাঝে ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মেলাতে ঘন ঘন স্মার্টফোন পরিবর্তনের প্রবণতা রয়েছে। এতে বেড়েছে পুরনো ফোন বেচাকেনাও। যে কেউ চাইলেই খুব সহজে পুরনো ফোন বিক্রি করতে বা কিনতে পারছেন। কিন্তু এই সহজ কাজটিই কখনো কখনো জীবন জটিল ও কঠিন করে দিতে পারে।

কিছুদিন আগের একটি ঘটনা। এক ব্যক্তির মোবাইলে তার কিছু ব্যক্তিগত ছবি পাঠানো হয়। এরপর তিনি ভাবতে লাগলেন, এত সচেতনতার সঙ্গে মোবাইল ব্যবহার করেন, কিন্তু ব্যক্তিগত ছবি অন্য ব্যক্তি পেলেন কীভাবে? এদিকে ব্ল্যাকমেইলার তাকে ক্রমাগত হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে ধরতে সক্ষম হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ওই ব্যক্তি কিছুদিন আগে তার পুরনো ফোনটি একটি দোকানে বিক্রি করেছিলেন। সেই ফোনটিই হাত ঘুরে ব্ল্যাকমেইলারের কাছে যায়। আর তিনি প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেই ফোন থেকে পুরনো ডাটা পুনরুদ্ধার করেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে—ফোন থেকে সব কিছু মুছে দিলেও কি তা পুনরায় পাওয়া সম্ভব?

এর উত্তর, সম্ভব তো বটেই। এমনকি ফ্যাক্টরি রিসেট করলেও তা রিকভার করা সম্ভব। সত্যি বলতে আমরা যখন কোনো ফাইল মুছে দিই, তখন তা ফাইল সিষ্টেমের লিষ্ট থেকে চলে যায়। পরবর্তীতে শূন্য জায়গা দেখালেও ফাইলটি সেই ডিক্সেই থাকে, যা কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করে উদ্ধার করা সম্ভব। আর এটিকে বলা হয় ডাটা কারভিং। তাই পুরনো ফোন বিক্রির আগে চাই একটুখানি সতর্ক থাকা।

ডাটা এনক্রিপশন: এন্ড্রয়েড ফোনগুলোতে ডাটা এনক্রিপশনের একটা সুবিধা আছে। সিষ্টেম সেটিংসে গিয়ে মোবাইলের ডাটাগুলো এনক্রিপ্ট করে নিলে তা ডিক্রিপ্ট করার জন্য একটি পাসওয়ার্ড দিতে হবে। আর এটি শুধু আপনিই জানবেন। ফলে কেউ যদি আপনার ডাটাগুলো রিকভারও করে ফেলে—তা দেখার জন্য সেই পাসওয়ার্ডটি প্রয়োজন হবে। সেক্ষেত্রে হ্যাকার বা দুষ্কৃতীর পক্ষে ডিক্রিপ্ট করা সম্ভব হলেও পাসওয়ার্ড না পাওয়া পর্যন্ত তা রিকভার করা অনেক কঠিন হবে।

ডাটা প্রতিস্থাপন: ডিজিটাল ডাটা তখনই রিকভার করা সম্ভব হয় যতক্ষণ পর্যন্ত সেই ডিভাইসে নতুন কোনো ডাটা দ্বারা প্রতিস্থাপন করা না হয়। একবার ডিভাইসে নতুন ডাটা রাইট হয়ে গেলে পুরনো ডাটা ফিরে পাওয়া কঠিন। তাই মোবাইলের ফ্যাক্টরি রিসেট করার পর কিছু পুরনো অপ্রয়োজনীয় ডাটা যেমন গান, নাটক-চলচ্চিত্র বা অন্যকোনো ফাইল কপি করে আবার রিসেট করা যেতে পারে।

এছাড়াও কিছু থার্ড পার্টি সফটওয়্যারের মাধ্যমে ডাটা মুছে ফেলা যায়। সফটওয়্যারের এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় ডাটা ওয়াইপ। তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। প্রযুক্তিতে অসম্ভব বলে কিছু নেই। নিত্য নতুন সফটওয়্যার ব্যবহার করে অনেক পুরনো ডাটা রিকভার করা সম্ভব। তাই একজন সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহারকারী হিসেবে নিজের তথ্য সুরক্ষিত রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টার বিকল্প নেই।

লেখক: কম্পিউটার হ্যাকিং ফরেনসিক ইনভেস্টিগেটর

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২২
এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।