ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

তুরস্কে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে রাশিয়ার জ্বালানি সরবরাহ শুরু 

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২৩
তুরস্কে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে রাশিয়ার জ্বালানি সরবরাহ শুরু  তুরস্কের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আকুইয়ু এনপিপি। ছবি- আনাদোলু এজেন্সি

ঢাকা: রাশিয়ার তত্ত্বাবধানে তুরস্কে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দ্রুতই উৎপাদনে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে।  এ লক্ষ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ শুরু করেছে রাশিয়া।

 

এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন- রোসাটমের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয় ৷ রোসাটমই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খুব শিগগিরই পারমাণবিক বিদ্যুৎ পেতে চলেছে তুরস্ক। ২৭ এপ্রিল এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে দেশটি তাদের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আকুইয়ু এনপিপির জন্য প্রয়োজনীয় পারমাণবিক জ্বালানির প্রথম বহরটি গ্রহণ করেছে। এর মাধ্যমে তুরস্ক অভিজাত নিউক্লিয়ার ক্লাবে যুক্ত হলো এবং দেশটি পারমাণবিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশগুলোর কাতারে যুক্ত হওয়ার একেবারেই দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।  

আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি এজেন্সির (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি, তুরস্কের এনার্জি ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়ক মন্ত্রী ফাতিহ ডোনমেজ, রুশ রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশন রসাটমের মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ, আকুইয়ু পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী আনাস্তাসিয়া জোতিয়েভাসহ অনেকেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

রাশিয়া এবং তুরস্কের শীর্ষ নেতারা পারমাণবিক জ্বালানির প্রথম বহরের ডেলিভারি সংক্রান্ত প্রতীকী অনুমোদন দেন। এরপর, ফুয়েল অ্যাসেম্বলিগুলোকে ফ্রেশ ফুয়েল সংরক্ষণ স্থাপনায় নিয়ে যাওয়া হয়। রোসাটম মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ তুর্কি এনার্জি ও প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রীকে এ সংক্রান্ত একটি সনদপত্র হস্তান্তর করেন যে, সকল নিরাপত্তা স্ট্যান্ডার্ড ও চাহিদা পূরণ করে জ্বালানি ডেলিভারি করা হয়েছে।

গুলনার ডিস্ট্রিকটের তিন প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বকারী- প্রবীন প্রজন্মের একজন, তার স্কুলগামী দৌহিত্র এবং একজন তরুণ নিউক্লিয়ার প্রকৌশলী আকুইয়ু এনপিপি সাইটে শান্তিপূর্ণ এটম ফ্ল্যাগ উত্তোলন করেন। এর মাধ্যমে নিজ দেশে পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশগুলোর তালিকায় তুরস্কের অন্তর্ভূক্তি ঘোষিত হলো।

অনুষ্ঠানে অ্যালেক্সি লিখাচেভ তার বক্তব্যে বলেন, তুরস্কে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সত্যিকার অর্থেই একটি যৌথ প্রয়াস। চার শতাধিক তুর্কি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিয়েছে। এটা বলা যেতেই পারে যে, তুরস্ক ইতোমধ্যে নিজস্ব পারমাণবিক শিল্প ক্লাস্টার স্থাপনে সমর্থ হয়েছে। আমাদের পারষ্পরিক সহযোগিতা থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা অন্যান্য প্রকল্পগুলোতে এই ক্লাস্টারের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সহায়ক হবে।

ফাতিহ ডোনমেজ বলেন, তুরস্ক এই আকুইয়ু এনপিপির স্বপ্ন গত পাঁচ দশকের অধিক সময় ধরে দেখে এসেছে। আজকে তুরস্কের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাইটে প্রথম জ্বালানির ডেলিভারি হলো, যা প্রকল্পটির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতের দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে।

আইএইএ-এর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি বলেন, পারমাণবিক শক্তি কল্যাণ্যের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি দায়িত্বও বটে। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই প্রকল্পের শুরু থেকেই আইএইএ নিবিড়ভাবে এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। আজকের এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের ফলে তুরস্ক আগামী একশ বছর এখান থেকে ক্লিন এনার্জি পাবে। এখন থেকে প্রতিটি পদক্ষেপে আপনারা এভাবেই আইএইএ-এর ওপর আস্থা রাখতে পারেন।

আকুইয়ু এনপিপির জন্য ডেলিভারি করা জ্বালানি অ্যাসেম্বলিগুলোকে নির্ধারিত সকল প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ফ্রেশ ফুয়েল সংরক্ষণাগারে রাখা হবে। বিদ্যুৎ প্রকল্পের ইউনিটটি জ্বালানি লোডিংয়ের জন্য প্রস্তুত হওয়ার পর ফুয়েল অ্যাসেম্বলিগুলো রিয়্যাক্টরের ভেতর স্থাপন করা হবে।

আকুইয়ু প্রকল্পের ১০০ ভাগ মালিকানাই রোসাটমের। তবে আন্তঃসরকারি চুক্তি অনুযায়ী, এর সর্বোচ্চ ৪৯ ভাগ একক বিনিয়োগকারী বা কয়েকটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করা যাবে। আকুইয়ু প্রকল্পের প্রথম ইউনিটটি সকল নির্মাণ অথোরাইজেশন পাওয়ার সাত বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০২৫ সালে সম্পন্ন হবার কথা থাকলেও, তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের শতবার্ষিকীতে অর্থাৎ চলতি ২০২৩ সালেই এটির কমিশনিং করার লক্ষ্যে সকল পক্ষ সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালায়।

তুরস্কের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আকুইয়ু এনপিপিতে মোট চারটি ইউনিট স্থাপন করা হচ্ছে। ইউনিটগুলোতে ব্যবহৃহ হচ্ছে ৩+ প্রজন্মের রুশ ভিভিইআর রিয়্যাক্টর। প্রতিটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ১২০০ মেগাওয়াট। তুরস্কের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার দশ ভাগ পূরন করতে সক্ষম হবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। প্রকৃতি সুরক্ষার কথা বিশেষভাবে বিবেচনা করে এই প্রকল্পটির নকশা প্রণয়ণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২৩
এসকে/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।