জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল-হামাসের স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দেবে জার্মান। দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি এ কথা বলেছেন।
শনিবার (২৫ নভেম্বর) পর্তুগাল ও স্লোভেনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোয়াও গোমেজ ক্রাভিনহো এবং তানজা ফাজনের সঙ্গে বৈঠক করেন সাফাদি। পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। সেখানেই এসব কথা বলেন জর্ডানের উপ-প্রধানমন্ত্রী।
আয়মান সাফাদি বলেন, ফিলিস্তিনিদের হত্যা করে ইসরায়েল তার নিরাপত্তা উপভোগ করতে পারবে না। এ বছরে যে আগ্রাসন ফিলিস্তিন দেখেছে, সেটি গত ১০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী। ইসরায়েল তাদেরই আক্রমণ করে যারা তার নীতির সঙ্গে একমত হয় না। ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে পারে না। আমরা সবাই চাই এই যুদ্ধবিরতি স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পরিণত হোক এবং এই আগ্রাসনের সম্পূর্ণ অবসান হোক।
এ সময় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল-হামাসের স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য জর্ডান চাপ দেবে বলে জানান সাফাদি। তিনি বলেন, আরব-ইসলামিক লিয়াজোন কমিটি সেখানে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দেবে। যদি এ সিদ্ধান্ত নেওয়া না হয়, নিরাপত্তা পরিষদ গাজায় আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিনিধিত্বকারী ও চলমান বর্বরতাকে স্থায়ী করার জন্য দায়ী বলে বিবেচিত হবে।
আগামী বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
গত সাত দিন আগেও ইসরায়েলকে হুঁশিয়ার করেন সাফাদি। তিনি বলেন, দখলদারদের বিদ্যুৎ দেওয়া হবে না।
আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ইসরায়েলকে বিদ্যুৎ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জর্ডান। ফিলিস্তিনি জনগণকে সহযোগিতার জন্য সম্ভাব্য সব করা হচ্ছে। গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করা এবং মধ্যপ্রাচ্যকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া দখলদার বাহিনীর কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ার করতে কূটনৈতিক সম্পর্ক কাজে লাগাচ্ছে আম্মান।
ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করে সাফাদি বলেন, তাদের কর্মকাণ্ডকে আত্মরক্ষা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। ইসরায়েল যা করছে তা অন্য কোনো দেশ করলে, এরমধ্যেই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতো। দখলদারবাহিনী পুরো আরব অঞ্চলকে নরকের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ইসরায়েল যা করছে, তা কয়েক দশকের শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে—বিশ্বকে এটা অবশ্যই মানতে হবে।
দখলদার বাহিনী গাজায় যা করছে, তার পরিণতি ভোগ করতে হবে। ইসরায়েল সহিংস পরিবেশ সৃষ্টি করছে। আন্তর্জাতিক মহল যুদ্ধের পরে কী হবে তা নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে, অবশ্যই এখন যা হচ্ছে তা থামাতে হবে। গাজা উপত্যকায় যা ঘটছে, সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলকে অবশ্যই সুস্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে।
সম্প্রতি ইসরায়েলকে সরাসরি হুমকি দেন জর্ডানের প্রধানমন্ত্রী বিশার আল-খাসওয়ানেহ। গত মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, প্রয়োজনে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি লঙ্ঘন করে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে দ্বিধা করবে না জর্ডান। তার সেনাবাহিনী ইসরায়েল সীমান্ত শক্তিবৃদ্ধি করেছে।
বিশার বলেন, ইসরায়েল যদি জোরপূর্বক ফিলিস্তিনিদের জর্ডান নদীর এপারে ঠেলে দেওয়া চেষ্টা করে কিংবা গণহারে তাদের উচ্ছেদের চেষ্টা করে করে তবে জর্ডান শান্তিচুক্তি ভেঙে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ জড়িয়ে পড়বে। পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের চেষ্টা করলে জর্ডান তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে তা প্রতিহত করবে।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল যদি ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার চেষ্টা করে তবে তা হবে জর্ডানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। যেকোনো ধরনের বাস্তুচ্যুতি বা এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অর্থ হলো—জর্ডান এটিকে সরাসরি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা বলে বিবেচনা করবে এবং এটিকে শান্তিচুক্তির বরখেলাপ বলে মনে করবে।
খাসওয়ানেহ আরও বলেন, এ ধরনের প্রচেষ্টা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার বিষয়টিকে খাটো করে এবং জর্ডানের জাতীয় নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যদি ইসরায়েল আমাদের চুক্তির বাধ্যবাধকতাকে অনুসরণ না করে, সম্মান না করে এবং লঙ্ঘন করে তবে এই শান্তি চুক্তি কেবলই একটি কাগজের টুকরায় পরিণত হবে, এর ওপর ধুলোর স্তর জমে যাবে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে ইসরায়েল ও জর্ডান একটি শান্তিচুক্তিকে আবদ্ধ হয়। চুক্তি অনুযায়ী ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের বিনিময়ে ইসরায়েলের কাছ থেকে ২০ কোটি ঘনমিটার লবণমুক্ত পানি পেয়ে থাকে জর্ডান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৩
এমজে