বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, বুধবার (৬ মে) ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন সেনাবাহিনীর স্পেশাল অপারেশন্স ফোর্সের সাবেক সদস্য ডেনম্যান জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান সিলভারকর্প ইউএসএর সঙ্গে মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার একটি চুক্তি হয় ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা হুয়ান গুইদোর। সিলভারকর্পের শীর্ষ কর্মকর্তা জর্ডান গেড্রু এ অভিযান পরিচালনার জন্য কলম্বিয়ায় ৫০ থেকে ৬০ জন ভেনেজুয়েলানকে প্রশিক্ষণ দিতে জানুয়ারি মাসে ডেনম্যান এবং বেরিকে নিয়োগ দেন।
ডেনম্যান আরও জানান, তার দায়িত্ব ছিল কারাকাস বিমানবন্দর দখল করা এবং দলের অন্যরা মাদুরোকে অপহরণ করে বিমানবন্দরে নেওয়ার পর তাকে প্লেনে করে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। তবে কীভাবে মাদুরোকে অপহরণ করার পরিকল্পনা করেছিল তার দল, সেটি বিস্তারিত বলেননি ডেনম্যান।
ভিডিওতে ধূসর রঙের টি-শার্ট পরা ৩৪ বছর বয়সী ডেনম্যান শান্তভাবে ক্যামেরার পেছনে থাকা এক ব্যক্তির ইংরেজিতে করা সব প্রশ্নের ধারাবাহিক উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘ভেনেজুয়েলানদের নিজেদের দেশের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিতে সাহায্য করছিলাম আমি। ’
ভিডিওটি কোথায় রেকর্ড করা হয়েছে এবং ডেনম্যান ও বেরিকেই বা কোথায় আটক করে রাখা হয়েছে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
মাদুরো এ অভিযানকে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ‘যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থ ষড়যন্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গেড্রু ভেনেজুয়েলায় ‘সশস্ত্র অভিযান’ চালানোর পরিকল্পনা এবং ডেনম্যান ও ব্যারিকে ‘নিজের লোক’ বলে স্বীকার করেছেন। তবে ডেনম্যানের স্বীকারোক্তির পর তার প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
ভেনেজুয়েলার কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা কারাকাস বিমানবন্দরের ৬০ কিলোমিটার পশ্চিমের উপকূলীয় শহর চুয়াও থেকে এ ‘মাদুরোবিরোধী ষড়যন্ত্রকারী’ দলের এ সদস্যদের আটক করে। আটকদের নৌকা, বিপুলপরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ও যোগাযোগ উপকরণের ছবিও প্রকাশ করেছে তারা।
কারাকাসের কাছে গুয়াইরা রাজ্যে রোববার (৩ মে) এক অভিযানে ষড়যন্ত্রকারীদের দলের অপর আটজন নিহত হয়েছে বলেও জানায় মাদুরো প্রশাসন।
এদিকে বুধবার গুইদোর উপদেষ্টা হুয়ান রেনডন দাবি করেছেন, মাদুরো সরকারের সদস্যদের বিচারের মুখোমুখি করতে তাদের আটকের জন্য সিলভারকর্পের সঙ্গে তাদের একটি প্রাথমিক চুক্তি হলেও সেটি কখনোই কার্যকর হয়নি।
অন্যদিকে মাদুরো দাবি করেছেন, তাকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্রমূলক এ অভিযানে ‘সরাসরি প্রধান’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গেড্রুকে ভেনেজুয়েলায় সমর্পণের দাবি জানানো হবে বলেও জানান মাদুরো।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেছেন, মাদুরোর এ অভিযোগ ‘বিশ্বাসযোগ্য নয়’। ট্রাম্প প্রশাসন ভেনেজুয়েলায় ‘শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়’ ক্ষমতার পরিবর্তন চায়।
তবে মার্চ মাসে মাদুরোসহ ভেনেজুয়েলার ডজনখানেক কর্মকর্তার ওপর ‘মাদক-সন্ত্রাসবাদের’ অভিযোগ আনে মার্কিন বিচারবিভাগ। এমনকি মাদুরোকে গ্রেফতার করতে তথ্য দিয়ে সাহায্য করার জন্য ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, ‘ভেনেজুয়েলায় আটক ওই দুই মার্কিন নাগরিককে ফিরিয়ে আনতে ট্রাম্প প্রশাসন সব হাতিয়ারই ব্যবহার করবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০২০
এফএম