ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মাস্ক কারখানার শ্রমিক হতে উইগুরদের বাধ্য করছে চীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২০
মাস্ক কারখানার শ্রমিক হতে উইগুরদের বাধ্য করছে চীন একটি কারখানায় উইগুর নারীকে দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে

করোনা মহামারির কারণে পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই মাস্কের চাহিদা বেড়েছে। একইসঙ্গে চাহিদা বেড়েছে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর।

এই চাহিদার কথা মাথায় নিয়ে চীনা কোম্পানিগেুলো ব্যাপকভাবে মাস্ক ও সুরক্ষা সামগ্রী তৈরি করছে, যেগুলো নিমিষেই রপ্তানি হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।  

কিন্তু এই মানবিক সঙ্কটকালে চীনের এই ব্যবসার পেছনেও উঠেছে অভিযোগ। তারা মাস্ক কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে উইগুর মুসলিমদের বাধ্য করছে, যা আন্তর্জাতিক শ্রম আইনের লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।  

নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক তদন্তে উঠে এসেছে, সরকারের সহায়তায় সেখানে উইগুরদের মাস্ক তৈরির কারখানায় ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করানো হচ্ছে। বিভিন্ন বন্দি শিবির আর বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে তাদের শ্রমিক হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে।  

উত্তর-পশ্চিম চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইগুর মুসলিমদের বাস। তারা জনসংখ্যায় বিপুল হলেও চীনের তুলনায় সংখ্যালঘু। এই মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর চীনের অত্যাচার নিপীড়নের অভিযোগ বহুদিনের।  

বহু সংখ্যক উইগুর মুসলিমকে বন্দি শিবিরে আটকে রাখা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের মুসলিম সংস্কৃতি থেকে দূরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।  

ধর্ম পালনেও বিভিন্নভাবে উইগুর সম্প্রদায়কে বাধা দিয়ে থাকে চীনের সরকার।

নিউ ইয়র্ক টাইম বলছে, উইগুরদের মাস্ক কারখানায় কাজ করতে বাধ্য করার বিষয়টি সরকারেরই একটি প্রকল্প। রপ্তানিতে যেন কোনো ছেদ না পড়ে সে কারণেই সরকার এ কাজ করছে।  

চীনের স্বাস্থ্য পণ্য বিষয়ক কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, করোনা মহামারির আগে চীনের মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠান মাস্ক ও পিপিই উৎপাদনের কাজ করতো। আর করোনা সংসক্রমণের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১। এগুলোর মধ্যে কমপক্ষে ১৭টি প্রতিষ্ঠান সরকারের ওই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত।  

চীনের গণমাধ্যমগুলোতেও এ খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে তারা বলছে, দারিদ্র্য কমাতেই সরকার এ ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে।  

উইগুর মুসলিমদের যে জোর করে মাস্ক ও পিপিই তৈরির কারখানায় খাটানো হচ্ছে, এ বিষয়ে অসংখ্য ভিডিও সংগ্রহ করেছে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ও উইগুর মানবাধিকার প্রকল্প।  

'অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট' নামের একটি সংস্থা সম্প্রতি দাবি করেছে, চীনা ফ্যাক্টরিগুলোতে প্রায় ৮০ হাজার উইগুর মুসলিমকে দিয়ে জোর করে শ্রমিকের কাজ করানো হচ্ছে। ২০১৭ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে ওই শ্রমিকদের নিজের বাড়ি বা ডিটেনশন সেন্টার থেকে নিয়ে এসে চীনের সুদূর প্রান্তে কাজে লাগানো হয়েছে। কেউ কাজ করতে রাজি না হলে চরম নির্যাতন চালানো হচ্ছে তাদের ওপর।

এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই তুমুল চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনেকেই সাফ বলেছেন, চীন থেকে ফেসমাস্ক আমদানি করলে সেগুলো তৈরির স্বচ্ছতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। কোনো চীনা সংস্থার ওপর জোর করে মজদুরি করানোর অভিযোগ থাকলে সেগুলো থেকে যেন কোনো পণ্য কেনা না হয়।

চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইগুর মুসলিমদের ওপর এক দশক ধরে অবর্ণনীয় অত্যাচার চালাচ্ছে চীনা কমিউনিস্ট সরকার। চীনের সেনাবাহিনী ও পুলিশ উইগুর মুসলিমদের মানবাধিকার এবং ন্যূনতম স্বাচ্ছন্দ্যটুকুও কেড়ে নিয়েছে। নিজ ধর্ম পালনের অধিকারটুকুও তাদের নেই। সম্প্রতি আমেরিকা, ব্রিটেনসহ একাধিক দেশ উইগুর মুসলিমদের নিপীড়ন নিয়ে সরব হয়েছে। কিন্তু চীনা সরকার কোনো অভিযোগই স্বীকার করছে না।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২০
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।