ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

সিএনএন’র বিশ্লেষণ

ইউক্রেন যুদ্ধে কেন পিছু হটল ন্যাটো?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৪ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০২২
ইউক্রেন যুদ্ধে কেন পিছু হটল ন্যাটো?

ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনার জন্য শুক্রবার ব্রাসেলসে ন্যাটো জোটের ৩০টি সদস্য দেশ বৈঠক করেছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ইউক্রেনে ‘নো-ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করবে না ন্যাটো।

 

যদিও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশ সেনাদের ইউক্রেনে আক্রমণের নির্দেশ দেওয়ার পর সেখানে বিশৃঙ্খলা এড়াতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনের অভ্যন্তরে পরিস্থিতি শিগগির উন্নতির সম্ভাবনা নেই বলেই মনে হচ্ছে। যদিও ইউক্রেনীয় যোদ্ধারা মূল এলাকাগুলো দখলে রেখেছে। এ কারণে রাজধানী কিয়েভের দিকে রওনা হওয়া ৪০ মাইলের রুশ কনভয় কয়েকদিন ধরে আটকে আছে।  

তবে ইউক্রেনের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দখলের দাবি করেছে রুশ সেনারা। শনিবার (৫ মার্চ) সকাল পর্যন্ত জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রুশ সেনাদের দখল রয়েছে।  

ইউক্রেনে অনেক বেসামরিক মানুষকে হত্যা করা হলেও রুশ আক্রমণের বিরুদ্ধে ‘নো-ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করাসহ সংঘর্ষে জড়াতে ইচ্ছুক নয় ন্যাটো জোট।  

ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ শুক্রবার বলেছেন যে, ইউক্রেনের ওপর একটি নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করা জোটের জন্য বিকল্প নয়।

ন্যাটোর মহাসচিব বলেন, ‘আমরা সম্মত হয়েছি যে, ইউক্রেনের আকাশসীমার ওপর দিয়ে ন্যাটোর বিমান চালানো উচিত নয়। ইউক্রেনের ভূখণ্ডেও ন্যাটো সেনারা যাবে না’।

ন্যাটো জোট কী?
নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট) হচ্ছে ইউরোপীয় ও উত্তর আমেরিকার মোট ৩০টি দেশের সামরিক জোট। ন্যাটোর মতে, এর উদ্দেশ্য ‘রাজনৈতিক ও সামরিক উপায়ে এর সদস্যদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা’।  

১৯৪৯ সালে শীতল যুদ্ধ শুরুর প্রতিক্রিয়া হিসেবে জোটটি তৈরি হয়েছিল। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল, সোভিয়েত ইউনিয়নের হুমকি থেকে পশ্চিমাদের রক্ষা করা। স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তির পর থেকে অনেক প্রাক্তন সোভিয়েত দেশ ন্যাটোতে যোগদান করেছে, যা পুতিনের বিরক্তির কারণ।

ন্যাটোর সদস্য হওয়ার অর্থ কী?
ন্যাটোর অংশ হওয়ার অর্থ হলো, জোটভুক্ত দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিষয়ে আলোচনায় সক্রিয় ভূমিকা রাখা। সাইবার যুদ্ধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশলগত পদক্ষেপ থেকে শুরু করে অন্য সদস্যদের সুরক্ষার জন্য ন্যাটোর সীমানার মধ্যে সেনা স্থানান্তর করা পর্যন্ত হতে পারে।

সদস্যদের প্রতি বছর জাতীয় জিডিপির ২ শতাংশ প্রতিরক্ষার জন্য ব্যয় করার কথা, যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খুব কম সদস্যই তা করছে।

জোটের সবচেয়ে পরিচিত দিক হলো চুক্তির ৫ নম্বর অনুচ্ছেদ। সেখানে বলা হয়, ‘এক মিত্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ সমস্ত মিত্রদের বিরুদ্ধে আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হয়’।

নো-ফ্লাই জোন কী?
নো-ফ্লাই জোন হলো এমন যে, একটি এলাকায় নির্দিষ্ট কিছু বিমান যেকোনো কারণেই হোক উড়তে পারবে না। ইউক্রেনের মতো একটি সংঘাতের প্রেক্ষাপটে এর অর্থ হচ্ছে, ইউক্রেনের ওপর হামলা চালানো রুশ বিমানগুলোকে সেখানে উড়তে না দেওয়া।  

এর আগে সদস্য রাষ্ট্র না হলেও বসনিয়া ও লিবিয়াসহ অনেক দেশের আকাশে নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করেছিল ন্যাটো।

নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করলে কী হবে?
নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করলে সেখানে ন্যাটোকে সামরিক শক্তি দেখাতে হবে। কেননা, তাদের এই জোনে কেউ ঢুকে পড়লে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেক্ষেত্রে ইউক্রেনে নো-ফ্লাই জোন চালু করলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে এখনই যুদ্ধে জড়াতে হবে ন্যাটো জোটকে। কিন্তুটি জোটের দেশগুলো সেটা চায় না।

কেন নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা করেনি ন্যাটো?
ইউক্রেন বা রাশিয়া কেউই ন্যাটোর সদস্য নয়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্টতই ন্যাটোকে তার কর্তৃত্বের জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখেন। সম্প্রতি রাশিয়ার দিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণের সমালোচনা করেছেন পুতিন। এই সম্প্রসারণ ঠেকাতেই ইউক্রেন আক্রমণ বলে অজুহাত দিয়েছেন তিনি।

তাই প্রতিদ্বন্দ্বী পারমাণবিক শক্তির বিরুদ্ধে ইউক্রেনের সংঘাতে সরাসরি জড়িত হতে চরম অনিচ্ছুক ন্যাটো। যদিও জোটটি ইউক্রেনের প্রতিরোধকে সমর্থন করে এবং পুতিনের পদক্ষেপকে সার্বভৌম রাষ্ট্রের ওপর আঘাত হিসেবে দেখে।  

জোটটি এমন কিছু করতে প্রস্তুত নয়, যা রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। ন্যাটো মনে করে, তাদের সামরিক পদক্ষেপের ঝুঁকি রয়েছে। এতে করে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারের হুমকি রয়েছে।  

কেন ন্যাটোকে হুমকি মনে করে রাশিয়া?
পুতিন দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর রাশিয়া একটি খারাপ চুক্তি দেখেছে, যাকে তিনি ‘বিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভূ-রাজনৈতিক বিপর্যয়’ বলে অভিহিত করেছেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট অভিযোগ করেছেন, এক সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে থাকা পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোকে সদস্য দেশ করে সীমানা প্রসারিত করেছে ন্যাটো জোট। এর অর্থ হলো, রাশিয়া এখন বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক জোটের সঙ্গে স্থল সীমানা ভাগ করছে। এভাবে মস্কোর ভূ-রাজনৈতিক শক্তি কমে আসছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০২২
জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।