তৃতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এরই মধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেশটির পারমাণবিক অস্ত্রের দায়িত্বে থাকা কৌশলগত বাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
এ মুহূর্তে রাশিয়ার কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনী, উত্তরাঞ্চলীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহর এবং দূরপাল্লার বিমান পরিচালনাকারী বাহিনী যুদ্ধ তৎপরতার মধ্যে রয়েছে। তাছাড়া পশ্চিমা শক্তির প্রতি পুতিনের হুঁশিয়ারি এখনো অব্যহত আছে।
রুশ সংবাদমাধ্যম কমসোমোলস্কায়া প্রাভাডা'কে মেজর জেনারেল বরিস সলোভিয়োভ জানান, পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে যাওয়ার দ্বিতীয় ধাপ হলো তৎপরতা বাড়িয়ে দেওয়া। পরবর্তী ধাপে নেওয়া হবে সশস্ত্র প্রস্তুতি। যেমন, ক্ষেপণাস্ত্রগুলোতে যুক্ত করা হবে পারমাণবিক ওয়ারহেড। এর মানে যে কোনো মুহূর্তে ‘রেড বাটন’ চাপ দেওয়া হতে পারে!
রূপক অর্থে ব্যবহৃত হলেও আসলে রাশিয়ায় কোনো পারমাণবিক বাটন নেই। বরং তিন মহাক্ষমতাধর ব্যক্তির হাতে আছে অ্যাটমিক স্যুটকেস এবং কোড। গত সপ্তাহে নিজেদের 'বিশেষ স্যুটকেস' বুঝে নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন, চীফ অব স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল সের্গেই শোইগু। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় তিনজনের নামই রয়েছে ।
রাশিয়ার সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী প্রেসিডেন্ট পুতিন। এমনটা মনে করা হলেও তিনি একা কোনো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিতে পারেন না। একই সময়ে সুটকেসধারী বাকি দুই নেতার কাছ থেকেও কোড আসতে হয়। ফলে পুতিন এই দুজনের ওপর নির্ভরশীল। মেজর সলোভিয়োভ জানান, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার প্রক্রিয়ায় ভুল হওয়া ঠেকাতে এটা রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে।
চলুন জেনে নিই রাশিয়ার এই তিন নেতা সম্পর্কে, যাদের হাতে রয়েছে বিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষমতা!
ভ্লাদিমির পুতিন: দুনিয়া তাকে ‘পাগল’ বা ‘ক্ষ্যাপাটে’ যাই বলুক না কেন, পুতিন তাতে থোড়াই কেয়ার করেন। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পুতিন তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর সর্বশেষ হাতিয়ার হিসেবে পারমাণবিক অস্ত্র বেছে নিবেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে পরিস্থিতি যদি তার প্রতিকূলে যেতে থাকে, তাহলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা আছে। অবশ্য ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করায় বরাবরই পশ্চিমাদের দোষারোপ করে আসছেন পুতিন।
সের্গেই শোইগু: ১৯৯১ সাল থেকে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সের্গেই শোইগু। ২০১২ সালে এই বিশ্বস্ত সহযোগীকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন পুতিন। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্রেমলিনে কাজ করে যাচ্ছেন শোইগু। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা রয়েছে তার। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন তিনি। ধারণা করা হয়, এই গ্রীষ্মে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে ক্রেমলিন-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাহায্য করার জন্য বিশেষ বাহিনী পাঠিয়েছেন তিনি। পুতিনের পর প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে এখনই শোইগুকে এগিয়ে রেখেছেন অনেকে।
ভ্যালেরি গেরাসিমভ: ভ্যালেরি গেরাসিমভ প্রথমে ছিলেন সোভিয়েত সেনাবাহিনীতে। পরে একটি ট্যাংক ব্যাটালিয়নের চীফ অব স্টাফ এবং অবশেষে ২০১২ সালে রাশিয়ান আর্মড ফোর্সেসের চীফ অব স্টাফ নিযুক্ত করা হয় তাকে। সেক্রেটারি অব ডিফেন্সের অনুপস্থিতিতে সেনাবাহিনী পরিচালনা করার দায়িত্ব গেরাসিমভের। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পরপরই গেরাসিমভের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বর্তমানে তিনি রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের একজন সদস্য। এবারের গ্রীষ্মে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক মস্কো সম্মেলনে গেরাসিমভ ঘোষণা দেন, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ওপর হুমকি এলে রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে।
রাশিয়ার সংবিধান এবং সামরিক নীতিমালাও পুতিনকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছে। কিন্তু পারমাণবিক হামলার মতো একটি গুরুতর সিদ্ধান্ত এলেও সশস্ত্র বাহিনীকে সেই আদেশ পালন করতে হবে। তবে তারা সেটি করবে কিনা এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
প্রসঙ্গত, সিপ্রি পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্যানুযায়ী, সমগ্র ইউরোপে প্রায় ১৩ হাজার পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। এদের মধ্যে বারো হাজারই আছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের হাতে।
রাশিয়ার কাছে আছে ৬ হাজার ২৫৫টি পারমাণবিক ওয়ারহেড। স্নায়ুযুদ্ধের কথা বিবেচনা করলে সংখ্যাটা খুব বেশি নয়। তবে বর্তমান যুগে পারমাণবিক অস্ত্রগুলো অনেক বেশি শক্তিশালী এবং বৃহত্তর পরিসীমায় আঘাত হানতে সক্ষম।
তবে ভয়ভীতি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে পারমাণবিক হামলার কথা বলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তিনি বলেন, সবাই জানে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে সেটা পারমাণবিক হামলার মধ্য দিয়েই হবে। কাজেই পারমাণবিক যুদ্ধের চিন্তা শুধু পশ্চিমা নেতাদের মাথায়, রাশিয়ার নয়!
সূত্র: বুলগেরিয়ান মিলিটারি ডটকম
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩১ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২২
এনএসআর