ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সাক্ষাৎকার

ডিজিটাল গাংনী গড়বেন আশরাফ

জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৬
ডিজিটাল গাংনী গড়বেন আশরাফ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মেহেরপুর: পাঁচ বছরের মধ্যে গাংনীকে আধুনিক ও ডিজিটাল শহর হিসেবে গড়ে তোলাই হবে আমার মূল লক্ষ্য। পৌরবাসীকে আমি পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ, আধুনিক, ননস্টপ সুবিধাসহ মাদকদ্রব্য ও সন্ত্রাসমুক্ত পৌর শহর উপহার দিতে চাই।



এ প্রত্যয় মেহেরপুরের গাংনী পৌরসভার নব-নির্বাচিত মেয়র জেলা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আশরাফুল ইসলামের (আশরাফ ভেন্ডার)।  

ধনী-গরিব সবার জন্য একটি সুন্দর পৌর শহর গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, এখানে নাগরিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে। সবকিছুর ওপরে মানুষের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে এবং দলবল নির্বিশেষে সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিয়ে একটি আদর্শ ও মডেল পৌর শহর হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

সম্প্রতি বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে গাংনী পৌরসভা নিয়ে তার আরো অনেক পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন আশরাফুল ইসলাম।

গাংনী পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের উত্তরপাড়া এলাকার বিশিষ্ট ভেন্ডার ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদের বড় ছেলে আশরাফুল একজন সফল ব্যবসায়ী, সমাজ সেবক ও তরুণ রাজনৈতিক কর্মী। আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক আশরাফুল ইসলাম রাজনীতিতে আসার পর জনগণের অভাব অভিযোগের কথা ভেবে অসহায় গরিব, দুস্থ ও সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ান। এজন্য নিজ অর্থে গড়ে তোলেন খাদিজা-আশরাফ ফাউন্ডেশন নামে একটি জনকল্যাণমূলক ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান।

পৌর এলাকার সাড়ে তিন হাজার নারী-পুরুষকে দরিদ্র সহায়তা কার্ডের মাধ্যমে চাল ও নগদ টাকা পাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। শাড়ি, লুঙ্গি ও শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেছেন।  
 
“পৌরবাসীর সুখে-দুঃখে পাশে আছি ”- তার এমন স্লোগানে পৌরবাসী মুগ্ধ হয়েছে। পৌরবাসীর সুখে-দুঃখে আগেও যেমন তাদের পাশে থেকেছেন, আগামীতেও তেমনভাবে তাদের পাশে থেকে সেবা ও উন্নয়ন কাজ করতে চান তিনি।

বাংলানিউজ পাঠকদের সুবিধার্থে মেয়র আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে কথোপকথনের কিছু উল্লেখযোগ্য অংশ প্রশ্নোত্তর আকারে তুলে ধরা হলো্ 

বাংলানিউজ: আপনার রাজনীতিতে আসা কবে?
মেয়র আশরাফুল ইসলাম:  কলেজে পড়ার সময়ে ১৯৯৩ সালে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা কামরুজ্জামান বুড়োর হাত ধরে একজন কর্মী হিসেবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করি। ২০০৭ সালে আওয়ামী যুবলীগের গাংনী পৌর শাখার ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হই। সবশেষ ২০১৫ সালে আওয়ামী যুবলীগের জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছি।

বাংলানিউজ: ২০০১ সালে গাংনী পৌরসভা স্থাপিত হলেও অদ্যাবধি পৌরবাসীর নাগরিক সুবিধা বাড়েনি। এক্ষেত্রে আপনি কি কি পদক্ষেপ নেবেন?

আশরাফুল ইসলাম: গাংনী পৌর শহরকে নতুন আঙ্গিকে সাজাতে চাই। যানজট, জলাবদ্ধতা, ময়লা আবর্জনা, স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা, দুর্নীতি, মাদকদ্রব্য ও সন্ত্রাসমুক্ত শহর হিসেবে পৌরসভা গড়ে তুলবো। পাঁচ বছরে একটি কমপ্লিট পৌরসভা গড়ে তুলতে চাই। যা হবে বাংলাদেশের একটি মডেল পৌরসভা।   পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে যৌন হয়রানি ও মাদক বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা, বিভিন্ন ওয়ার্ডে ড্রেনেজ ও অভ্যন্তরীণ সড়কের উন্নয়ন করা হবে।  
গাংনী পৌর শহর ছোট হলেও এ শহরে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। প্রধান সড়কটিতে যাতে যানজট না থাকে সেদিকে বিশেষ নজর দেবো।
জলাবদ্ধতা নিরসনে কর্মপরিকল্পনার কথা তুলে ধরে আশরাফুল ইসলাম বলেন, নালা-নর্দমাগুলোর গভীরতা ও প্রশস্ততা বাড়ানো, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারে তদারকি বাড়িয়ে নতুন অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া, পৌরবাসীকে দুর্দশা থেকে মুক্তি দিতে বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন করার পরিকল্পনা নেওয়া হবে।

তাছাড়া ওয়ার্ড ভিত্তিক জোন ভাগ করে আধুনিক ঢাকনাসহ ডাস্টবিন স্থাপন, নির্দিষ্ট স্থানে আবর্জনা ফেলা ও তা নিশ্চিত করা এবং আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে।

বাংলানিউজ: পৌরবাসীর উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়গুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়ন কাজ করবেন?

মেয়র আশরাফুল ইসলাম: জনগণ অনেক আশা নিয়ে আমাকে মেয়র নির্বাচিত করেছেন। আমার প্রথম কাজ হবে টেকসই প্রযুক্তিগত মাস্টারপ্ল্যান তৈরি ও সে অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা। ওয়ার্ড ভিত্তিক উন্নয়নের মাস্টারপ্ল্যান, মূল শহরকে আধুনিক মানের শহর হিসেবে দুই স্তরের উন্নয়ন, পৌরসভায় সব ধরনের সেবা কার্যক্রম ডিজিটালাইজ করে, শিশুদের মেধা বিকাশ ও বিনোদনের জন্য শিশুপার্ক নির্মাণ, নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করে পৌরবাসীকে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে চাই।

একটি আধুনিক মানের অডিটোরিয়াম নির্মাণ, একটি উন্নতমানের শিশু হাসপাতাল করাসহ এ শহরকে মাদকমুক্ত সবুজ শহর হিসেবে গড়ে তুলবো। পৌর এলাকার কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রির জন্য কৃষি মার্কেট ও সেগুলো রাখতে একটি আধুনিক মানের হিমাগার স্থাপনের কাজ করবো। পৌর কর ও বিল পরিশোধের জন্য স্মার্ট কার্ড এবং নাগরিক সেবা প্রাপ্তিতে ওয়ানস্টপ সুবিধা দিতে চাই। পাশাপাশি পুরো পৌর শহরকে ওয়াইফাই জোনের আওতায় আনবো। পৌর শহরের স্কুল মাদ্রাসা ও কলেজগুলো ওয়াইফাই জোনের আওতায় আনবো। নাগরিকদের সেবা নিশ্চিত করতে প্রত্যেক ওয়ার্ডে অভিযোগ বক্স খোলা হবে। নৈতিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগও নেওয়া হবে।

এছাড়া নারী শিক্ষার উন্নয়ন ও সমাজে পিছিয়ে পড়া প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে কাজ করা হবে। সড়ক বনায়ন, শিক্ষা, সাহিত্য উন্নয়ন, বিনোদন, ক্রীড়া উন্নয়নসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হবে।

১৭.১২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের গাংনী পৌরসভা গঠিত হয় ২০০১ সালে। গাংনী পৌরসভায় সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী জনসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। গত ১৮ নভেম্বর প্রকাশিত সংশোধিত ভোটার তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটারের সংখ্যা ১৭ হাজার ৫৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার  আট হাজার ৫৫২ জন ও নারী ভোটার ৯ হাজার ৫০০ জন। পৌরসভার প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি নেতা আমিরুল ইসলাম। ২০০৫ সালের দিকে সন্ত্রাসীদের বোমার আঘাতে তিনি নিহত হন। পরে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে সদ্য বিদায়ী মেয়র আহমেদ আলী নির্বাচিত হন। পরের বছরও তিনিই নির্বাচিত হন।

সর্বশেষ নির্বাচনে মেয়র আহমেদ আলীকে এক হাজার ৯৮৯ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে আশরাফুল ইসলাম চতুর্থতম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। মেয়র আশরাফুল ইসলাম পেয়েছেন সাত হাজার ৩৭৭ ভোট।   পরাজিত মেয়র আহমেদ আলী পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৩৮৮ ভোট।

 বাংলাদেশ সময়: ১১৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৬
এএটি/আরএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।