ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

জুমার ফজিলতপূর্ণ আমল 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২৩
জুমার ফজিলতপূর্ণ আমল  প্রতীকী ছবি

বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর কাছে একটি কাঙ্ক্ষিত দিন হলো জুমাবার। আরবি হিসাবে তারিখ শুরু হয় পূর্ববর্তী সন্ধ্যার পর থেকে।

সেই হিসেবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতটি জুমাবারের অন্তর্ভুক্ত। আর শুক্রবার সন্ধ্যায় জুমার দিনটি শেষ হয়। জুমার দিন শুরু হলেই কিছু ফজিলতপূর্ণ আমলের দিকে নজর দেওয়া উচিত। কেননা জুমার পুরো দিনটিই আমলের ও দোয়া কবুলের উপযুক্ত।

হজরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘হে আলী! শুক্রবার রাতের শেষ তৃতীয়াংশে সাহস করে উঠে পড়ো, কারণ এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় এবং এতে দোয়া কবুল হয়’। (মুসতাদরাক আলাস সহিহাইন: ১১৯০)

জুমার রাত তথা বৃহস্পতিবার দিনে ও দিবাগত রাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে। এখানে সেগুলো তুলে ধরা হলো-

বৃহস্পতিবার দিনে রোজা রাখা শুক্রবার রাতের আমল

জুমাবার রাতের আমল বৃহস্পতিবার দিনে রোজা রাখার অনেক ফজিলত রয়েছে। এজন্য বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন নবীজি (স.)। তাছাড়া বৃহস্পতিবার রাতে পুরো সপ্তাহের আমল আল্লাহর সামনে উপস্থাপন করা হয়। এ বিষয়ে নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, ‘বৃহস্পতি ও সোমবার আল্লাহ তাআলার সামনে বান্দার আমল উপস্থাপন করা হয়, তাই আমি চাই- আমার আমল পেশ করার সময় আমি যেন রোজা অবস্থায় থাকি’। (সুনানে নাসায়ি: ২৩৫৮)


আত্মীয়-স্বজন ও ভাই-বন্ধুর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা

রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘সোম ও বৃহস্পতিবারে আল্লাহ সব মুসলিমকে ক্ষমা করে দেন। তবে ওই দুই ব্যক্তি ছাড়া, যারা একে অপরকে বর্জন করেছে। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘পরস্পর মিলে যাওয়া পর্যন্ত এদেরকে আপন অবস্থায় ছেড়ে দাও’। (ইবনে মাজাহ: ১৭৪০)

এ হাদিসের আলোকেই আলেমরা বলে থাকেন, বৃহস্পতিবারে বিবাদ মিটিয়ে নেওয়া উচিত। কেননা যেসব মুসলমান ঝগড়া করে ও অন্যের প্রতি রাগান্বিত হয় তাদের এই রাতেও ক্ষমা করা হবে না। একইভাবে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নকারীকেও এই রাতে ক্ষমা করা হবে না। এ কারণে নবীজি সা.) কোনো মুসলমানকে অন্য মুসলমানের সঙ্গে তিন দিনের বেশি রাগ করে থাকতে নিষেধ করেছেন। (বুখারি: ৬০৫৬; মুসলিম: ২৫৫৯)


দরুদ পাঠ

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনে ও রাতে আমার ওপর দরুদ পাঠ করো, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন’। (বায়হাকি: ৬২০)

আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে আরো বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ও রাতে আমার ওপর দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার ১০০টি প্রয়োজন পূরণ করবেন। এর মধ্যে ৭০টি আখিরাতে এবং ৩০টি পৃথিবীতে’। (বায়হাকি: ২৭৬)


জুমার দিন ছাড়াও দরুদ পাঠের অনেক ফজিলত রয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যে দরুদ পাঠ করে তার উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয় এবং এটি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে ভালোবাসার একটি নিদর্শন বহন করে।

সূরা কাহাফ পাঠ

জুমাবার শুরু হলেই সূরা কাহাফ পাঠ শুরু করা যায়। ১১০ আয়াতের পুরো সূরাটি এক বৈঠকে পাঠ করা অনেকের জন্য কঠিন হতে পারে, তাই রাতে কিছু পাঠ করা এবং জুমার দিনে কিছু পাঠ করে পুরো সূরাটি জুমার দিনে শেষ করতে পারা অনেক বড় অর্জন। কেননা  জুমার দিন সূরা কাহাফ পড়ার অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে।


ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহাফ পাঠ করবে, তার পায়ের নিচ থেকে আসমান পর্যন্ত নূর প্রজ্জ্বলিত হবে এবং কেয়ামতের দিনটি তার জন্য উজ্জ্বল হবে। আর দুই জুমার মধ্যবর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে’। (তাফসিরে ইবনে কাসির, খণ্ড ৬, পৃ-৩৯৮)

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ফেতনা হলো দাজ্জালের ফেতনা। এই ফেতনা থেকে বেঁচে থাকা অতটা সহজ নয়। এমন কঠিন ফেতনা থেকেও নিরাপদ থাকার উপায় হচ্ছে সূরা কাহাফ পাঠ।

আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যেভাবে নাজিল করা হয়েছে, সেভাবে যে ব্যক্তি সূরা কাহাফ পড়বে, তার জন্য সেটি নিজের স্থান থেকে মক্কা পর্যন্ত আলো হবে এবং শেষ ১০ আয়াত পড়লে দাজ্জালের গণ্ডির বাইরে থাকবে আর দাজ্জাল তার ওপর কোনোরূপ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না’। (সুনানে নাসায়ি: ১০৭২২)

আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকবে। (সহিহ মুসলিম: ৮০৯; আবু দাউদ: ৪৩২৩)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মর্যাদাপূর্ণ জুমাবারের রাত ও দিনটি কাজে লাগানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২৩
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।