জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অনুভবে ‘দারিদ্র্যে’র যে মহান রূপ—তা কণ্টকমুকুট শোভিত! তিনি অন্যত্র লিখলেন :
‘রোজা এফতার করেছে কৃষক অশ্রু সলিলে হায়,
তীর খাওয়া বুক, ঋণে-বাঁধা-শির, লুটাতে খোদার রাহে।
জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসে না নিদ...।
হাদিসের ভাষায় রমজান সহানুভূতির (‘শাহরুল মুওয়াসাত) মাস। সামর্থ্যবানের কর্তব্য মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ অভাবীদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো।
কেননা এ তো গরিবের অধিকার। মহান আল্লাহ বলেন ‘তোমাদের সম্পদে রয়েছে মুখাপেক্ষী ও বঞ্চিতদের অধিকার। ’ (সুূরা : জারিয়াত, আয়াত : ১৯)
রমজানের অন্যতম অনুষঙ্গ জাকাত, শোষণ-দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের ‘সামাজিক বীমা’। ০২.৫ শতাংশ জাকাতদানে ০৫ শতাংশ হারে দারিদ্র্য হ্রাস সম্ভব।
সাধারণত, রমজানেই জাকাত আদায় ও দানের উৎসাহ তৈরি হয়। মহান আল্লাহর নির্দেশ—‘তোমরা সত্কর্ম ও ধর্মভীরুতায় একে অন্যকে সহযোগিতা (প্রতিযোগিতা) করবে...। আর আল্লাহকে ভয় করে চলো। ’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ২)
প্রাচুর্যের মোহে মানুষ যতই অস্থির হোক, মানুষের মালিকানা সাময়িক।
সম্পদের প্রকৃত মালিক মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘পরিতাপ প্রত্যেক পশ্চাতে নিন্দুকের জন্য, যে সম্পদ জমা করে, গণনা করে এবং ধারণা করে—এটাই তাকে অমর করবে। ’ (সুরা : হুমাজাহ, আয়াত : ০১-০৩)
হাদিসে আছে, রমজানে জিবরাইল (আ.) যখন নিয়মিত আসতে শুরু করতেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দানশীলতা বহুগুণ বেড়ে যেত। (বুখারি)
রোজাদারের প্রতি সহনুভূতির তাৎপর্য প্রসঙ্গে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের পার্থিব কষ্টসমূহের একটি দূর করে দেয়, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার একটি কষ্ট দূর করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবীর অভাবের কষ্ট লাঘব করে, আল্লাহ তার দুনিয়া ও আখিরাতের অভাবের কষ্ট লাঘব করবেন। ...আল্লাহ ততক্ষণ বান্দার সহায়তায় থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সহায়তায় থাকে। (মুসলিম)
প্রিয় নবী (সা.) আরো বলেন, যে ব্যক্তি একজন রোজাদারকে ইফতার করাবে সে তার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে এবং ওই রোজাদারের সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্রও কমানো হবে না, আর যে ব্যক্তি রোজাদারকে পেট ভরে খাওয়াবে আল্লাহ তাকে আমার হাউসে কাওসার থেকে এমনভাবে পান করাবেন, যাতে সে জান্নাতে প্রবেশের আগ পর্যন্ত আর কষ্ট পাবে না। (সহিহ ইবনু খুজাইমা)
রমজানে গরিবের পাশে দাঁড়ানোর এক অনন্য উদাহরণ বুখারি শরিফের এই হাদিস—‘একবার রমজান মাসে এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি নিজেকে ধ্বংস করে ফেলেছি, আমি রোজা অবস্থায় সহবাস করেছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বলেন, তুমি একজন দাস মুক্ত করে দাও। তিনি বলেন, এমন সক্ষমতা আমার নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তবে এর বদলে দুই মাস (৬০ দিন) রোজা রাখো। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এমন শারীরিক সক্ষমতা আমার নেই। তিনি বলেন, তবে তুমি ৬০ জন মিসকিনকে খাওয়াবে। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! এ রকম আর্থিক সক্ষমতাও তো আমার নেই। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে অপেক্ষা করতে বলেন। কিছুক্ষণ পর কোনো একজন সাহাবি রাসুল (স.)-কে এক ঝুড়ি খেজুর হাদিয়া দিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) ওই লোকটিকে ডেকে বলেন, এগুলো নিয়ে গিয়ে গরিবদের মধ্যে সদকা করে দাও। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল, এই এলাকায় আমার চেয়ে গরিব আর কে আছে? এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি হাসলেন, যাতে তাঁর দাঁত প্রকাশিত হলো। তিনি বলেন, আচ্ছা তবে খেজুরগুলো তুমিই তোমার পরিবার নিয়ে খাও। ’
লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ
কাপাসিয়া, গাজীপুর
বাংলাদেশ সময়: ১২১১ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২৪
এফআর