ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

অবৈধভাবে পণ্যের মূল্য বাড়ালে আল্লাহ শাস্তি দেবেন

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১৯
অবৈধভাবে পণ্যের মূল্য বাড়ালে আল্লাহ শাস্তি দেবেন

উপমহাদেশে মানুষের খাবার আয়োজনে পেঁয়াজ নিত্যনৈমত্তিক প্রয়োজনীয় উপাদান। এখানকার প্রতিটি অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি রান্নার পদ পেঁয়াজ বিনে চলেই না। কিন্তু হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে তরতর করে। এতে সাময়িক অসুবিধায় পড়েছে অসংখ্য গৃহকর্তী।

পেঁয়াজের এই উচ্চ দামের প্রধান কারণ অবশ্য ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা। এতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগ বুঝে বেশি মূল্য লাভের আশায় শত শত টন পেঁয়াজ অবৈধভাবে মজুদ করে রেখেছেন।

বিভিন্ন স্থান থেকে মজুদকৃত পেঁয়াজ উদ্ধারও করা হয়েছে।

এই ‘ব্যবসায়ী’রা অধিক মুনাফা আদায়ের জন্য আরও বিভিন্ন রকম প্রস্তুতি শুরু করেছেন। তারা সবসময়ের মতো কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ক্রেতাদের ঝামেলায় ফেলতে চাচ্ছেন। সবাই যখন একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে, তখন তারা অপকৌশলে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে আনন্দ-অনুভব করেন। ফলে পেঁয়াজের মূল্য বাজারে হঠাৎ করে উত্তাপ ছড়াতে শুরু করে।

সুযোগসন্ধানী মজুদদার ও মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস মজুদ করে রেখে, তারা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। এতে করে তারা ক্রেতাদের কষ্ট দিয়ে অবৈধ ও অযাচিত আনন্দ অনুভব করে। অথচ অধিক মুনাফার প্রত্যাশায় পণ্য মজুদ করা ইসলামে সম্পূর্ণ অবৈধ।

অসাধু ব্যবসায়ীরা হয়তো মনে করতে পারে, এভাবে তারা অল্প দিনে লাভবান ও বিত্তশালী হয়ে যাবেন। বস্তুত এ ধরনের অবৈধ ও অভিশপ্ত সম্পদ আয় করে সুখ পাওয়া যায় না। ভোক্তাদের জিম্মি করে অর্থ-কড়ি উপার্জন ঘৃণ্য ও সভ্যতাবিবর্জিত। উপরন্তু এগুলো পরকালে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে। হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেউ যদি খাদ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, আল্লাহ তাকে দুরারোগ্য ব্যাধি ও দারিদ্র্য দ্বারা শাস্তি দেন। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২২৩৮)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি (সংকট তৈরি করে) খাদ্যশস্য গুদামজাত করে সে অপরাধী। ’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস: ১৬০৫)

এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিনের খাবার মজুদ রাখে, সে আল্লাহ-প্রদত্ত নিরাপত্তা থেকে বেরিয়ে যায়। ’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস: ২০৩৯৬)

আল্লামা ইবনে হাজর হাইতামি (রহ.) গুদামজাত করে মূল্য বৃদ্ধি করাকে কবিরা গুনাহ বলে উল্লেখ করেছেন। (নিহায়াতুল মুহতাজ: ৩/৪৫৬)

গুদামজাত করে কিংবা অন্য কোনোভাবে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মূল্যবৃদ্ধি করলে, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়। অনেকে আবার বেশ দুর্ভোগেও পড়ে।

তবে গুদামজাত পণ্য যদি মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তু না হয় কিংবা এসব পণ্য চাহিদার অতিরিক্ত হয় বা গুদামজাতকারী বর্ধিত মুনাফা অর্জনের অভিলাষী না হয়, তাহলে পণ্য মজুদ রাখা অবৈধ নয়।

ব্যবসার লক্ষ্যই হলো মুনাফা লাভ। ইসলামে তা নিষিদ্ধ নয়। ইসলাম ব্যবসায়ীকে মুনাফা থেকে বঞ্চিত করে না। সাধারণভাবে ব্যবসা করা ও মুনাফা অর্জন বৈধ। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত: ২৭৫)

তবে ইসলামে জালিয়াতি, ধোঁকাবাজি, ভেজাল মেশানো ও দালালি ইত্যাদি নিষিদ্ধ। জিম্মি করে বা তার অজ্ঞতার সুযোগে অধিক মুনাফা অর্জন সম্পূর্ণ হারাম।

কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বর্ধিত মুনাফা অর্জনের প্রচেষ্টা একটি সামাজিক অপরাধ। সামাজিকভাবেই এ ধরনের অপরাধগুলোর প্রতিরোধ করা চাই। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘মনিটরিং সেল’ গঠন করা যেতে পারে। প্রয়োজনে আইন প্রণয়ন করতে পারে। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.) তার শাসনামলে যেমনটি করেছিলেন।

পেঁয়াজের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ও ব্যবসায়ীদের সতর্ক করতে বুধবার (২ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর পলাশী বাজার পরিদর্শন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। এছাড়াও চট্টগ্রামে উপজেলা প্রশাসন ও খুলনায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিভিন্ন বাজার ও গোডাউনে অভিযান চালিয়েছেন। তাদের এসব প্রচেষ্টা সাধুবাদযোগ্য।

ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫২  ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।