ঘুরতে যেতে সবারই ভালো লাগে। আর কেউ কেউ তো ছুটি পেলেই বাক্স-পেটরা গুছিয়ে রওনা দেন বন-জঙ্গল, সাগর-পাহাড় চষে বেড়াতে।
তবে বিশ্বে এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে মনে হয় অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীরাও যেতে চাইবেন না! কিংবা খুব বেশি দুঃসাহসী হলে আবার শুনেই যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করতে পারেন- এমন মানুষও আছেন! তবে সাধারণ মানুষের কাছে এসব জায়গা আতংকের ব্যাপারই বটে।
চলুন ঘুরে আসা যাক পৃথিবীর এমন কিছু স্থান থেকে:
১. প্রেতাত্মার গ্রাম প্লাকলি:
এই গ্রামটি ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ভূতুড়ে গ্রাম হিসেবে বিবেচিত। প্লাকলি গ্রামে রাতে প্রায়ই নাকী ভূতের হাসির আওয়াজ শোনা যায়। আশপাশের জঙ্গল থেকে মাঝরাতে ভেসে আসে মৃত ব্যক্তিদের কান্নার শব্দ। স্থানীয়দের বিশ্বাস মানুষের পাশাপাশি কমপক্ষে এক ডজন প্রেতাত্মার বসবাস এই গ্রামে। আর সেজন্য অনেকেই বাড়িঘর বিক্রি করে এ গ্রাম ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন অন্য কোথাও!
২. রহস্যময় দ্যা ওয়াল:
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট ক্রইক্স উপকূলের জনপ্রিয় একটি জায়গার নাম ‘দ্যা ওয়াল’। সেন্ট ক্রইক্স স্কুবা ডাইভিংয়ের জন্য আদর্শ স্থান। তবে ‘দ্যা ওয়াল’ নামক স্থানের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে হঠাৎ সাগরের পরিবেশ পাল্টে যায়। পানি নীল থেকে কালচে রঙে পরিবর্তিত হয়। এই জায়গা থেকে হঠাৎ করেই প্রবালগুলো তীক্ষ্ণ ও সুঁচালো হয়ে যায়। আর সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো সাগরজুড়ে দাপিয়ে বেড়ানো নীল তিমি পর্যন্ত এই স্থানে গিয়ে অক্ষতভাবে ফিরে আসতে পারেনি, ফিরে এসেছে ক্ষত-বিক্ষত শরীর নিয়ে।
৩. বিশ্বের শেষ প্রান্ত হেলটাউন:
যুক্তরাষ্টের হেলটাউন পরিচিত বিশ্বের শেষ প্রান্ত হিসেবে। স্ট্যানফোর্ড রোড যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকেই শুরু হয়েছে এই স্থান। বলা হয় অনেক লম্বা সময় এই ‘ডেড এন্ড’- এ আটকে থাকলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো অপ্রতুল মানুষ আর প্রাণীদের হাতে প্রাণটা বিসর্জন দিতে হতে পারে!
৪. ভূতুড়ে দ্বীপ হাশিমা:
জাপানের হাশিমা দ্বীপটি বর্তমানে ‘গোস্ট আইল্যান্ড’ বা ভূতের দ্বীপ বলে পরিচিত। নাগাসাকি থেকে ৯ মাইল দূরে অবস্থিত এই দ্বীপটির ইতিহাস খুব বেশি ভূতুড়ে নয়। ১৮৮৭ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত কয়লা খনির সুযোগ- সুবিধার জন্য এই দ্বীপটি ব্যবহৃত হতো। ১৯৬০ সাল থেকে জাপানে পেট্রোলিয়াম কয়লার স্থান দখল করে নিতে শুরু করে। এরপর হাশিমা দ্বীপটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। তারপর থেকেই এটিকে ভূতের দ্বীপ নামে ডাকা হয়। এখন অবশ্য এর খানিকটা অংশ পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
৫. নরকের দরজা স্টাল কবরস্থান:
এটি যুক্তরাষ্ট্রের একটি কবরস্থান। দুটি ঘটনা এই স্থানটিকে ভূতুড়ে করে তুলেছে। দুটি ঘটনাই ঘটে বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে। প্রথম ঘটনাটি হলো, একজন বাবা তার কিশোর ছেলের মৃতদেহের সন্ধান পেতে একটি ক্ষেত পুড়িয়ে দেন। দ্বিতীয় ঘটনা আরো ভয়াবহ। একজন ব্যক্তি নিখোঁজ হন। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও তাকে পাওয়া গেল না। কিছুদিন পর এখানকার একটি গাছে তার ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায়। স্টাল কবরস্থানে গিয়ে অতি সাহসী মানুষদেরও বুক কাঁপে। এই স্থানটিকে নরকের ৭টি দরজার একটি বলে গণ্য করা হয়।
৬. প্যারিস ভূগর্ভস্থ সমাধিক্ষেত্র:
ফ্রান্সের এই ভূ-গর্ভস্থ সমাধিক্ষেত্রে প্রায় ৬ মিলিয়ন মানুষের দেহাবশেষ রয়েছে। ভূ-গর্ভস্থ অসংখ্য গুহা এবং টানেল প্যারিসের প্রায় ১৭০ মাইলজুড়ে বিস্তৃত। এই সমাধিক্ষেত্রগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফরাসি প্রতিরোধবাহিনীর দ্বারা ব্যবহৃত হয়। এখন অবশ্য এগুলো পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে।
৭. প্রেতপুরী সান ঝি রিসোর্ট:
তাইওয়ানের সান ঝি বর্তমানে প্রেতপুরী বলে পরিচিত হলেও রিসোর্টটি মূলত ধনী ব্যক্তিদের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছিল। পরপর অনেকগুলো রহস্যময় মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণে দ্রুত এটির নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেসব দুর্ঘটনায় মোট কতজন মানুষ মারা যান তার সঠিক হিসেব পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে সরকারি তথ্যও রয়েছে সামান্য। রহস্যময় দুর্ঘটনাগুলোর পর বেশিরভাগ মানুষই সান ঝি রিসোর্টে যেতে আতংকিত বোধ করে। এখন এটি ভূতুড়ে স্থানে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৩
এমএনএনকে/এএ/জিসিপি