ওর নাম বংটু। পাহাড়ি ছেলে।
বংটুর খেলার সঙ্গী বনের পশু-পাখি। এদের সঙ্গেই গল্প করে সারাটা দিন কাটে তার। সন্ধ্যা গড়িয়ে এলে বংটু বাড়ি ফেরে। তাদের বাড়িটা পাহাড়ের চূড়ায়। একটা দোচালা কাঠের ঘর। বাড়ির উঠোন থেকে পুবের সূর্যগলা আকাশ আর দূরের জল টলমলে দীঘিটা দেখা যায়। রাতে বংটু যখন মার বুকের মধ্যে ঘুমায়। মা তখন বংটুকে ওই দীঘির গল্প শোনায়।
মা বলে- ওখানে নাকি কোনো দীঘি ছিল না। ওখানে ছিল এই অঞ্চলের রাজবাড়ি। রাজার বাড়ি- রাজার রাজ্য, সৈন্য-সামন্ত-লস্কর সব নিয়ে রাজা ছিল মহাসুখে। তারপর হঠাৎ একদিন রাজ্যে শুরু হলো মানুষ হারিয়ে যাওয়ার খেলা। একজন মানুষ হারালে নতুন আরও একজন মানুষ এসে সেখানে বাস করা শুরু করত। এভাবে রাজার রাজ্য তার সৎ ভাই দখল করে নিলো। আর রাজার পুরো পরিবারকে মেরে ফেললো।
তারপর ঘটে যায় এক আজব ঘটনা। যে রাতে ওই রাজার বাড়িতে তার সৎ ভাই বসবাস করতে আসে। সে রাতেই একটা বিকট শব্দে রাজবাড়িটা মাটির নিচে ঢুকে যায়। আর কল কল করে জলে ভরে যায় পুরো গর্তটা। লোকে বলে পাপের শাস্তি হয়েছে। ধীরে ধীরে সেই গর্তই আজ জলটলমল দীঘি।
বংটুর সাথে ক’দিন থেকে একটা হাতির বাচ্চার ভাব হয়েছে। বাচ্চাটার মার সাথে বংটু ঘুরে বেড়াত। পিঠে চড়ত। বাচ্চাটা হওয়ার পর থেকে বংটু ওকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বংটু হাতির বাচ্চাটার নাম দিয়েছে বটু। বটু নামটা বংটুর খুব প্রিয়। নামটা ওর ভাই হলে রাখবে বলে ঠিক করেছিল। মাকেও বলেছিল। মা শুনে হেসে বলেছিল- বংটুর সাথে মিল করেছিস? বংটু- মাথা নেড়ে সায় দিয়েছিল। তারপর বংটুর ভাইও হয় না আর নামটাও পড়ে আছে।
তাছাড়া বংটু এই হাতির বাচ্চাটাকে খুব পছন্দ করে-ভালোবাসে। তাইতো বংটু নিজের ভাইয়ের নামটাই দিলো ওকে। বটু বলে ডাকলে, যেখানে থাকুক বটু হাজির। বটুর শুঁড়টা ওর মায়ের মতো অতটা লম্বা নয়। তবুও বটু ওটা দিয়েই বংটুকে মাঝে মাঝে আদর করে পিঠ বুলিয়ে দেয়। আর বংটু হেসে ওঠে। বংটুও কম না। রোজ সকালে বটুর জন্য একটা করে কচি কলা গাছের থোড় নিয়ে যায়। বটু থোড় দেখে খুশিতে নাচতে শুরু করে ঢিং ঢাং ঢিং ঢাং ঢিং।
সকালে কলার থোড় এনে বংটু বলে- নে তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। নদীর পাড়ে মাছ ধরতে যাব। তুইও যাবি আমার সাথে। বটু তাতে সায় দিয়ে ছোট্ট শুঁড় নাড়িয়ে হুহাঃ... হুহাঃ... করে ওঠে। বংটুর থোড় খাওয়া শেষে দু’জনে মাছ ধরতে যায় নদীর পাড়ে। বংটু ছিপ নিয়ে বসে যায় ছোট্ট একটা পাথরের ওপর। আর বটু তার চারপাশে ঘুরতে থাকে। শুঁড়ের নানান খেলা দেখায়।
এক পায়ে দাঁড়িয়ে কোমর দোলায়। বংটু, বটুর এমন আহ্লাদ করে করে নাচতে দেখে সেও বেশ আনন্দ পায়। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ আনন্দ করার পরে বটু হাঁটতে থাকে নদীর পাড় ধরে। বংটু তা দেখে বলে ওঠে, হ্যাঁ রে বটু? বংটুর ডাকে- বটু ফিরে তাকায়। বংটু বলে, দূরে যাসনে...
ওদিকে শিকারিদের দেখা যায়। বিনোদ কাকু গত বছর দেখেছিল ওদের। ওরা শহুরে। মাঝে মাঝে ওদের দেখা যায়। এই বনের পশু-পাখি ধরে নিয়ে যায় ওরা। ওদের নাকি চিড়িয়াখানা আছে বুঝলি। সেখানে এই বনের অনেক প্রাণীদের ধরে নিয়ে বন্দি করে রেখে মজা করে।
বটু, বংটুর কথা শুনে চলে যায়। এদিকে বংটু তো বটুর কথা ভুলেও যায়। ছিপ দিয়ে মাছ ধরতে বসলে বংটুর আবার কিছু মনেই থাকে না। তাজা মাছ মা যখন ভেজে দেয় উফ্ কি যে স্বাদ। আজ অনেকগুলো মাছ ধরেছে সে। হঠাৎ বংটুর খেয়াল হয় বিকেল প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। বটুও এদিকে আসছে না। তবে কোথায় গেল সে।
বংটু উঠে দাঁড়ায়। বটুকে খুঁজতে যায়। ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে এসেছে বনে। বনের পথ ঘাট বংটুর চেনা। সে পথেই বংটু- বটুকে খুঁজতে লাগলো। অনেক খোঁজাখুঁজি করলো। খুঁজে পেল না কোথাও। এমন কি যেখানে বংটু আর বটু রোজ পলান টুক টুক খেলতো সেখানেও। তবে কি হল বটুর?
বংটু ভাবনায় পড়ে গেলো। একা একা হাঁটতে লাগলো বাড়ির পথে। সেখানেই দেখা পেলো বটুর মার। বটুর মা বংটুকে দেখে শুঁড় নাড়িয়ে কেঁদে ফেললো। বংটুর তখন বুঝতে বাকি নেই। বংটুও কেঁদে ফেললো। মনে হলো- ইশ্ কি ভুল আজ সে করেছে। নিশ্চয়ই তার জন্যেই বটুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে কি বটুকে কোনো নিষ্ঠুর শিকারির দল ধরে নিয়ে গেছে। ভয় করে ছোট্ট বংটুর। আর কী দেখা পাবে না সে খেলার সঙ্গী ছোট্ট হাতি-বটুর!
ইচ্ছেঘুড়িতে লেখা পাঠান এই মেইলে: ichchheghuri24@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৩
এএ/বিএসকে