ঢাকা: তাজ মোহাম্মদ রাব্বির বয়স মাত্র তিন বছর। গুণী চিত্রশিল্পী হাশেম খানের কাছে গিয়ে কলমটা একটু বাঁকা করে ধরে একটা কাগজে বর্ণ ‘দ’ ও সংখ্যা ‘২২’ লিখলো।
শিশুদের অক্ষর জ্ঞানের হাতেখড়ির এমন দৃশ্য দেখা গেলো মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর প্রাঙ্গণে। শুধু রাব্বি নয়, তার মতো অনেক শিশু শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে এখান থেকে অক্ষর জ্ঞানের হাতেখড়ি নেয় গুণীজনদের কাছ থেকে। কেউ ‘অ’, কেউ ‘ক’ আবার কেউবা ‘১’-‘৩’ সংখ্যা লিখে অক্ষর জ্ঞানের পথে যাত্রা করে।
ঘড়ির কাঁটায় দশটা বাজতেই যাদুঘরের প্রাঙ্গণ শিশুদের কোলাহল আর পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। বাবা-মায়ের সঙ্গে আসা শিশু শিক্ষার্থীদের মাঝেও পড়াশোনার তাগিদ দেখা যায় বেশ।
দুপুর পর্যন্ত চলা এ অনুষ্ঠানে অতীতে শিশুদের যেভাবে শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছে,সেই ঐতিহ্যকে ধরে রাখার প্রত্যয়েই এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে শিশু সংগঠন ‘হাতেখড়ি’।
অনুষ্ঠানে এসেছিলেন শিশুদের দাদা-নানার বয়সী গুণী শিল্পী ও শিক্ষাবিদরা। শিশুদের কোলাহলপূর্ণ এ অনুষ্ঠানে কাগজ-কলমে বর্ণমালার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দ্র মজুমদার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দ্র মজুমদার বলেন, চারপাশে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দৃশ্য। এমন পরিবেশে পড়াশোনার যাত্রা শুরু। এটা দেশত্ববোধ জাগাতে অনেক ভালো ভূমিকা রাখবে।
শিশুদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের হাল ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি শিশুদের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য অভিবাবকদের প্রতিও আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে চিত্রশিল্পী হাশেম খান বাংলানিউজকে বলেন, ভাষার মাসে আনন্দের মধ্য দিয়ে শিশুদের অক্ষর জ্ঞানের যাত্রা শুরু। আমরা বর্ণমালা শিখেছি দাদা-নানাদের কাছ থেকে। কিন্তু এখনকার শিশুরা সেই সুযোগ পাচ্ছে না। তাই তাদের জন্য এই আয়োজন। এতে প্রাচীন ঐতিহ্যর সঙ্গে শিশুদের পরিচয়ও হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে পরিবারসহ এসেছেন জাকিয়া আক্তার পলি। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যেভাবে পড়াশোনা শুরু করতে পেরেছি, বর্তমান সময়ের শিশুদের জন্য সেই রকম পরিবেশ একেবারেই কম। তাই এ অনুষ্ঠানের সংবাদ পেয়ে চলে এসেছি। বাচ্চারাও অনেক খুশি। আসলে পড়াশোনার যাত্রা আনন্দের মধ্য দিয়েই শুরু হওয়া উচিত।
রাব্বির মা মারজিয়া সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের অক্ষর জ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়েছিল দাদা-নানার হাত ধরে। কিন্তু আমাদের ব্যস্ততার কারণে শিশুরা দাদা-নানার কাছে যেতেই পারে না। তাই সেই ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য এরকম আয়োজন খুবই প্রশংসনীয়।
আয়োজকদের পক্ষে বাবুল বিশ্বাষ বাংলানিউজকে বলেন, আগে শিশুরা দাদা-দাদী, নানা-নানীর হাত ধরেই অক্ষর জ্ঞানের যাত্রা শুরু করতো। যান্ত্রিক যুগে সেটা এখন গল্পের ফ্রেমেই শোভা পাচ্ছে। হারিয়ে যেতে বসা ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য প্রতিবছর আয়োজন করা হয় এই অনুষ্ঠানের। প্রতিবছরই আমাদের এই আয়োজন থাকে। বাঙালি ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রত্যয়েই এই অনুষ্ঠান।
শুক্রবার সকাল ১০টায় হাতেখড়ি শিশু সংগঠনের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে শুরু হয় এ অনুষ্ঠান। দুপুর ১টা পর্যন্ত চলা এ অনুষ্ঠানে শিশুদের সঙ্গে বড়রাও মেতে ওঠেছিলেন আক্ষরিক জ্ঞানের খেলায়। সবশেষে শিশুদের অংশগ্রহণে পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক আয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৪