ভয়ে সবার চোখ গোল আলুর মতো হয়ে গেলো। ওঝার কাণ্ড-কীর্তি, চোটপাট ও হুমকি-ধমকিতে একজন ভয়ে চিঁ চিঁ করে কান্না শুরু করে দিল।
ওঝা মন্ত্রঝাড়ের ব্যাপক আয়োজন শুরু করে দিল। তার আয়োজনের ধরনটা সাংঘাতিক ভয়ঙ্কর ও রহস্যময়!
মন্ত্রের তোড়জোর দেখে লোকজনের মনে স্বস্তি ফিরে এলো। কিন্তু স্বস্তির জোর বেশিক্ষণ থাকলো না। ওঝার অকথ্য মন্ত্রবাণে আর নর্তন-কুর্দনে সবাই তটস্থ। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। কাপড়ে ঢাকা কী যেন একটা পড়ে আছে সামনে। মনুর মা উঠে দাঁড়াচ্ছে না, নড়াচড়াও করছে না, মনুর বাপেরও কোনো খবর নেই।
ওঝা মাঝেমধ্যে ক্ষিপ্ত হয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন, ‘খামোশ ইবলিশ শয়তান, খামোশ। আমার হাত থেকে বাঁচতে এক সেকেন্ড সময় পাবি না তুই। পালাবার পথ পাবি না। এইতো চলে আসছে বলে। ’ তারপর সে শূন্যের দিকে হাত বাড়িয়ে কী জানি ধরে মুচড়ে ভেঙে কিছু পকেটে ঢোকালো আর কিছুটা দিল মুখে। মজা করে খাওয়ার শব্দ করে চিবিয়ে খেয়েও ফেললো। তার হম্বি-তম্বি আর তেলেছমাতি দেখে সবাই বাকরুদ্ধ।
তিন.
বৃত্তবন্দি গ্রামের নারী-পুরুষ-শিশুরা ভয়ে নড়াচড়া করতে পারছে না। অনেকের বমি বমি লাগছে। কারও মাথা ঘুরছে। কেউ বা দুর্বল হয়ে পড়েছে। হঠাৎ মধ্যবয়সী এক নারী মাথায় হাত দিয়ে চোখ বুঝে ফট করে মাটিতে পড়ে গেলো। ওঝা মন্ত্র পড়তে পড়তে এক দৌড়ে এসে নারীর মুখে এক লোটকা থুতু দিয়ে বললো, ‘সটান, সটান পটাপট, কথা ক ঝটপট, নো ঝিমুন্তি, নো চিমুন্তি, খাড়া, উঠে খাড়া। ’
ওই নারী চোখ মেলে মুখের সামনে আউলা-ঝাউলা ওঝাকে দেখে পাগলের মতো গাল পাড়তে লাগলো। শিশুরা চিঁচিঁ করে কান্না শুরু করে দিল। ওঝা ধমক দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললো, ‘কাজের সময় ভয় পেলে চলবে না, এ বড়ো পাজি জাতের ভূত। ’
সবাই পড়ে গেলো ওঝার গ্যাঁড়াকলে। ওঝা চোখ বড় করে একটু পর পর স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, ‘পারমিশন ছাড়া এক পা নড়লে রক্ত বমি হবে। ’ একথা বলতেই এক যুবক ওয়াক ওয়াক করে পাক খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো এবং তার মুখ থেকে সত্যি সত্যি রক্তের লোল বেরিয়ে এলো। জলজ্যান্ত প্রমাণ দেখে সবাই হতভম্ব।
চলবে…
বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৯
এএ