ঢাকা: ২০১৩ সালে হেফাজতকাণ্ডে শাহবাগ থানায় নাশকতার অভিযোগে করা এক মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরীর জামিন আবেদনের ওপর শুনানি দুই মাসের জন্য স্ট্যান্ডওভার (শুনানি মুলতবি) করেছেন হাইকোর্ট।
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাজিরের পর রোববার (৩০ জুলাই) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ শাহীন মীরধা। আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাসুদুল হক।
২০১৩ সালে করা এ মামলায় আসলাম চৌধুরীকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। পরে তিনি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। আদালত এ মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে এর আগে তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন। রোববার তদন্ত কর্মকর্তা হাজির হন।
শুনানির শুরুতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর বলেন, এ মামলায় অনেক আসামি আছেন, তাদের তথ্য সংগ্রহের জন্য সময় প্রয়োজন। এ মামলার আসামি আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার উৎখাতের অভিযোগ রয়েছে।
তখন হাইকোর্ট বলেন, সে আমেরিকা গেছে নাকি ইসরায়েল গেছে, এসব আমরা দেখব না।
এক পর্যায়ে আদালত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুনুর রশীদের কাছে মামলার বিষয়ে জানতে চেয়ে বলেন, তদন্ত শেষ করতে এত সময় নিচ্ছেন কেন? এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে পারবেন না? তখন তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এ মামলায় ১৮০ জন আসামি। তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হচ্ছে। অনেক সময় প্রয়োজন।
এ পর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, সিনিয়রের সঙ্গে (অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল) যোগ করে আমি কিছু সাবমিশন রাখতে চাই।
তিনি বলেন, একই ধরনের মামলায় আসলাম চৌধুরীকে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছিলেন। কিন্তু আপিল বিভাগ সেই জামিন স্থগিত করে দিয়েছেন।
সারওয়ার হোসেন বাপ্পী আরও বলেন, এরা (বিএনপি) তো আবার আগুন সন্ত্রাস শুরু করেছে।
তখন হাইকোর্ট ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আগুন সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ কোর্টে আনবেন না। এসব কোর্টের বাইরের বিষয়। এভাবে কোর্টের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। কোর্ট তো ১৮ কোটি মানুষের।
পরে আদালত এ মামলায় পুলিশের প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুই মাস সময় দেন।
২০১৬ সালের ১৫ মে সন্ধ্যায় রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে আসলাম চৌধুরী ও তার ব্যক্তিগত সহকারী মো. আসাদুজ্জামান মিয়াকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (উত্তর)। পরে তাদেরকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরদিন ১৬ মে ৫৪ ধারায় (মোসাদ কানেকশনে সরকার উৎখাতে ষড়যন্ত্রের সন্দেহ) গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের দু’জনকে দশদিন করে রিমান্ডে আনার আবেদন জানানো হয়। আদালত সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর ২৬ মে আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে গুলশান থানায় দায়ের করা হয় রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলাটি। দণ্ডবিধির ১২০ (বি), ১২১ (৩) ও ১২৪ (এ) ধারায় ডিবি’র ইন্সপেক্টর গোলাম রাব্বানী বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
সরকার উৎখাতে ষড়যন্ত্রের সন্দেহে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় বলা হয়, আসলাম চৌধুরী ওই বছরের ৫ মার্চ থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত ভারতে অবস্থানকালে আইনানুগভাবে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সরকারকে উৎখাতের জন্য বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক বহির্ভূত রাষ্ট্র ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যার কিছু ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আসামিরা সরকারকে অবৈধভাবে উৎখাতের জন্য দেশে সন্ত্রাস, নাশকতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করেন, যা দেশের অখণ্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।
ভারতে গিয়ে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এক কর্মকর্তার সঙ্গে ‘সরকার উৎখাতের’ জন্য আলোচনা করার অভিযোগ রয়েছে আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে। দিল্লি ও আগ্রার তাজমহল এলাকায় ইসরায়েলের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির প্রধান লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে আসলাম চৌধুরীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা-সাক্ষাতের বেশ কিছু ছবি প্রকাশিত হয়। পরে ওই মামলায় তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছিলেন।
২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এলে জিয়া পরিষদের মাধ্যমে বিএনপির রাজনীতিতে আসেন আসলাম চৌধুরী। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে সীতাকুণ্ড আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন। ২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল তিনি উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হন। এর আগে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। পরে তিনি দলটির যুগ্ম মহাসচিব হন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২৩
ইএস/এমজেএফ