কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় নিজের ছোট শ্যালিকা রেখা খাতুনকে (১৮) অপহরণ করে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন তার দুলাভাই আওলাদ হোসেন (৪৫)।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যার দায় স্বীকার করেন আওলাদ।
কুষ্টিয়া জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম জানান, রেখা খাতুন হত্যা ঘটনায় তার বাবা আব্দুর রহিম ব্যাপারী কুষ্টিয়া মডেল থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ ঘটনায় দুলাভাই আওলাদ হোসেনকে সন্দেহ হওয়ায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ মোস্তাফিজুর রহমানের খাস কামরায় ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যার দায় স্বীকার করেন তিনি।
আওলাদ তার স্বীকারোক্তিতে জানান, গত বুধবার (৬ ডিসেম্বর) আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে বিয়ে উপলক্ষে কিছু কেনাকাটা করে দেওয়ার কথা বলে রেখাকে কুমারখালী মহিলা কলেজ থেকে নিজের ব্যবহৃত মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে আসেন। পরে কুষ্টিয়া হাইস্কুল চত্বরে রেখাকেসহ মাইক্রবাস গ্যারেজে ঢুকিয়ে দেয়। দুপুর ২টায় গাড়ি মেরামত বাবদ একটি বিল ভাউচার তৈরি করে ব্যাংকে ফিরে যায় টাকা আনার জন্য। অফিসে বিল ভাউচার জমা দিয়ে আবার গ্যারেজে ফিরে আসেন তিনি। এসময় গাড়ির মধ্যেই রেখাকে কুপ্রস্তাব দিলে রাজি না হওয়ায় তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।
পরে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে রেখার মরদেহ কম্বলে পেঁচিয়ে মাইক্রোসহ গ্যারেজ থেকে বেড় হয়ে যায়। কুষ্টিয়া চৌড়হাস মোড় হয়ে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ি সড়ক দিয়ে মণ্ডল ফিলিং স্টেশনের নিকটস্থ কালভার্ট সংলগ্ন ময়লার ভাগাড়ে রেখার মরদেহ ফেলে দেওয়া হয়। পরে রেখার ব্যবহৃত ভ্যানিটি ব্যাগটি কুষ্টিয়া-ঝিনাইদাহ সড়কে মজমপুর এলাকায় ফেলে দেন তিনি।
আওলাদ হোসেনের চাকরিস্থল রূপালী ব্যাংক কুষ্টিয়া জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. সেলিম উদ্দিন জানান, বুধবার বেলা ১২টার সময় আওলাদ হোসেন গাড়ি সার্ভিসিংয়ের কথা বলে অফিস থেকে বেড়িয়ে যায়। এরপর মাঝে দুপুর ২টার দিকে এসে গাড়ি সার্ভিসিংয়ের বিল ভাউচার জমা দেন। এরপর সন্ধ্যায় মাগরিবের আজানের আগ পর্যন্ত আওলাদ হোসেন কোথায় ছিলেন সে বিষয়ে আমার কাছে সঠিক কোনো তথ্য নেই। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় সে অন্যান্য দিনের মতো অফিস থেকে বেড়িয়ে যায়।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই আওলাদ রেখাকে যৌন হয়রানি করে আসছিল। বিষয়টির সুরাহার জন্য পারিবারিকভাবে একাধিকবার কথাও হয়েছে। কিন্তু তাতে খ্যান্ত দেয়নি আওলাদ। এমনকি আওলাদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে রেখা ফোন কলের মাধ্যমে হাফিজুর নামে একটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং এই সম্পর্কের বিষয়টি পারিবারিক সিদ্ধান্তে বিবাহের মাধ্যমে শেষ হয়। কিন্তু রেখার বিয়ে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি আওলাদ। এতে তিনি আরও ক্ষুব্ধ হয়ে রেখাকে প্রাণ নাশের হুমকি দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুষ্টিয়া মডেল থানার উপপরিদর্শক আলমগীর হোসেন জানান, কলেজছাত্রী রেখা খাতুন হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মাইক্রোসহ আনুষঙ্গিক আলামত জব্দ করা হয়েছে। তবে রেখা খাতুনকে শ্বাসরোধ করে হত্যার ছাড়াও আরও কোনো নির্যাতন চালানো হয়েছিল কি-না ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে জানা যাবে। এছাড়া এই হত্যাকাণ্ডে আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বুধবার (৬ ডিসেম্বর) কুষ্টিয়ার হাউজিং এলাকায় ময়লার ভাগাড় থেকে কলেজ ছাত্রী রেখা খাতুনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এঘটনায় হত্যার অভিযোগে কুষ্টিয়া মডেল থানায় নিহতের বাবা কুমারখালী উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের দড়িবাখই গ্রামের আব্দুর রহিম ব্যাপারী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় জড়িত সন্দেহে নিহতের বড় দুলাভাই আওলাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২৩
এসএম