ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

৩০ বছর পর গরু চুরির দায় থেকে রেহাই পেলেন তোফাজ্জল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৪
৩০ বছর পর গরু চুরির দায় থেকে রেহাই পেলেন তোফাজ্জল

ঢাকা: ১৯৯৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে নীলফামারীতে গরু চুরির অভিযোগে মামলা হয় জয়পুরহাটের কদোয়া চকপাড়ার তোফাজ্জাল হোসেনসহ দুই জনের নামে। মামলার তদন্ত ও বিচার শেষে শুধু তোফাজ্জলের সাজা হয়।

 

সেই সাজা থেকে রেহাই পেতে আপিল ও রিভিশন করেন তোফাজ্জল। ৩০ বছর শেষে অবশেষে হাইকোর্ট তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। পাশাপাশি তদন্ত ও বিচারে চরম অবহেলা ও অনিয়মের কথা উল্লেখ করেছেন উচ্চ আদালত। এ কারণে রায়টি অবগত করতে অধস্তন আদালতের সব বিচারককে ই-মেইল করতে এবং সব থানার এজাহার গ্রহণকারী ও তদন্তকারী কর্মকর্তাদের পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  

২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রায়টি দিয়েছেন বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ। সম্প্রতি এ রায়টি প্রকাশ করা হয়েছে।  

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো. আশেক মোমিন, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট লাকী বেগম ও ফেরদৌসী আক্তার।

তবে আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।   

নথি থেকে জানা যায়, নীলফামারী সদরের ধোবাডাঙ্গা গ্রামের বৈকুণ্ঠ রায়ের ছেলে মানিক চন্দ্র রায়ের থানায় অভিযোগ করেন, ১৯৯৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে তাদের পরিবারের প্রায় ১১ হাজার ৭০০ টাকা দামের পাঁচটি গরু চুরি হয়ে গেছে। পরে খবর পান পাঁচটি গরুসহ থানায় দুজন চোর ধরা পড়েছে। থানায় যাওয়ার পর তিনি গরু শনাক্ত করেন। এ ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন নীলফামারীর প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রায় দেন। রায়ে এক আসামিকে খালাস দিয়ে জয়পুরহাটের কদোয়া চকপাড়ার তোফাজ্জাল হোসেনকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০০ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দেন। জামিনে থাকা তোফাজ্জাল রায়ের সময় পলাতক ছিলেন।    

পরে দায়রা জজ আদালতে আপিল করা হয়। নয় বছর সাত মাস সাতদিন দেরিতে এ আপিল করা হয়। ২০০৬ সালের ৩১ জানুয়ারি আপিলটি গ্রহণ করেননি নীলফামারীর দায়রা জজ আদালত।  

পরে এর বিরুদ্ধে ২০০৬ সালে হাইকোর্টে রিভিশন করেন তোফাজ্জল। শুনানি শেষে ২০২৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রায় দেন হাইকোর্ট।  

রায়ে হাইকোর্ট বলেন, ১৯৯৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশে মামলাটির প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়কে কোনো বক্তব্য নেই। পরে ২৮ ফেব্রুয়ারির আদেশে দেখা যায়, আসামিদের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫৪ ধারায় আটক করে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর প্রার্থনা করেন। কিন্তু ২৫ ফেব্রুয়ারি যে আসামিকে গরুসহ থানায় হাজির করে গ্রেপ্তার করা হলো সে আসামি ২৭ ফেব্রুয়ারি ডোমার থানায় কীভাবে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার হয়। এতে এটি স্পষ্ট যে, প্রকৃতপক্ষে এজাহারটি একটি মিথ্যা এজাহার। আসামিকে ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়।  

রায়ে হাইকোর্ট তোফাজ্জলকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দেওয়া দণ্ডের রায় ও জজ আদালতের আপিলের রায় বাতিল করেন এবং আসামিকে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দেন।

উচ্চ আদালত রায়ে বলেন, মামলাটির এজাহার দাখিল, গ্রহণ এবং তদন্তে ব্যাপক অবহেলা, অনিয়ম ও অন্যায় হয়েছে বলে প্রতীয়মান। অপরদিকে বিচারিক ও আপিল আদালতও গতানুগতিকভাবে রায় দেন। সাক্ষ্য ও নথি পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণে উভয় আদালতের চরম অবহেলা ও অনিয়ম করেছেন, যা বিচারক সুলভ নয়।

অবগতি ও পর্যালোচনার জন্য এ রায় অধস্তন আদালতের সব বিচারককে ই-মেইল করার জন্য এবং সব থানার এজাহার গ্রহণকারী ও তদন্তকারী কর্মকর্তাদের পাঠানোর জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।    

বাংলাদেশ সময়: ১২১৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৪
ইএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।