ঢাকা: শিক্ষক, সমাজকর্মী, সরকারি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন এবং সেই কমিটির অনুমতি ছাড়া ঢাকা শহরসহ অন্যান্য জেলা এবং উপজেলা শহরে, মহাসড়কের পাশে ও সামাজিক বনায়নের গাছ কাটা যাবে না বলে রায় দিয়েছেন। তবে গ্রামাঞ্চলে ব্যক্তি মালিকানাধীন গাছ কাটতে অনুমতি লাগবে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।
এ বিষয়ে জারি করা রুল মঞ্জুর করে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ, তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট সঞ্জয় মণ্ডল ও অ্যাডভোকেট সেলিম রেজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. শফিকুর রহমান।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, মূলত ঢাকাসহ সব জেলা, উপজেলা শহর, মহাসড়কের পাশের গাছ, সামাজিক বনায়নের গাছ কাটতে অনুমতি নিতে হবে। তবে গ্রামাঞ্চলে ব্যক্তিগত গাছ কাটতে অনুমতি নেওয়া লাগবে না।
তাপমাত্রা অত্যধিক বৃদ্ধি ও জনজীবন অতিষ্ঠ হওয়ার মধ্যেও বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে মর্মে মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হলে জনস্বার্থে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে গত বছর এ রিট করা হয়।
গত বছরের ৭ মে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। সেই রুলের শুনানি শেষে মঙ্গলবার রায় দেন হাইকোর্ট।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, আদালর রুল মঞ্জুর করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। সাত দিনের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরকে গাছ কাটার অনুমতি নেওয়ার জন্য পরিবেশবাদী, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপকদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়াও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে সাত দিনের মধ্যে একটি সার্কুলার জারি করে জেলা প্রশাসক, জেলা পরিবেশ কর্মকর্তা, সরকারি কলেজের অধ্যাপক, সমাজকর্মী, পরিবেশবিদ ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা সিভিল সার্জনকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করতে বলেছেন। যারা জেলা পর্যায়ের গাছ কাটার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
আদালত আরো একটি আদেশে জনপ্রশাসন সচিবকে আগামী সাত দিনের মধ্যে সব জেলা প্রশাসকদের প্রতি একটি সার্কুলার জারি করে উপজেলা পর্যায়ে গাছ কাটার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কলেজের অধ্যক্ষ, সমাজকর্মী, পরিবেশবাদী, সমাজ কল্যাণ কর্মকর্তা, এসি ল্যান্ড এবং এলজিইডির নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ারদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেন। যারা উপজেলা পর্যায়ের গাছ কাটার অনুমতির বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
এছাড়াও রায়ে সামাজিক বনায়ন বিধিমালা ২০০৪ এর অধীনের রোপন করা গাছ কাটা যাবে না, বরং গাছের সমমূল্যে টাকা রোপণকারীকে দিতে হবে। এই মর্মে সামাজিক বনায়ন বিধিমালায় পরিবর্তন আনারও নির্দেশনা দেন।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আরও জানান, আদালত রায়ে বলেছেন দেশে দিন দিন তাপমাত্রা বাড়াতে অধিকসংখ্যক গাছ সংরক্ষণ করা প্রয়োজন, ব্যাপকভাবে গাছ কর্তন করা হলে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে, যা আমাদের বেঁচে থাকার অধিকারকে খর্ব করবে।
আদালত আরও বলেন, পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য যে পরিমাণ গাছ বাংলাদেশে থাকা দরকার সে পরিমাণ গাছ নেই এবং এই গাছগুলোকে রক্ষা করা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি২৮, ২০২৫
ইএস/এএটি