ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘ধর্ষণের শিকার নারীর পরীক্ষায় ‘টু ফিঙ্গার’ অনৈতিক’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৬
‘ধর্ষণের শিকার নারীর পরীক্ষায় ‘টু ফিঙ্গার’ অনৈতিক’

ঢাকা: ধর্ষণের শিকার নারীর মেডিকেল পরীক্ষায় ‘টু ফিঙ্গার’ (‘দুই আঙ্গুলের’ মাধ্যমে ধর্ষণের পরীক্ষা) পদ্ধতি সেকেলে  ও অনৈতিক বলে হাইকোর্টে মৌখিকভাবে মতামত উপস্থাপন করেছেন পাঁচ ফরেনসিক মেডিকেল বিশেষজ্ঞ।
 
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) এ মতামত দেওয়ার পর বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ চিকিৎসকদের কাছ  থেকে লিখিত মতামত চেয়েছেন।

পরে বিশেষজ্ঞরা লিখিত মতামত দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে তিনমাস সময় চেয়েছেন। আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৫ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন।
 
বিশেষজ্ঞরা আদালতে বলেন, ‘এ পদ্ধতি সেকেলে। যৌন নির্যাতনের পরীক্ষার আধুনিক অনেক পদ্ধতি আবিস্কৃত হয়েছে। ‘টু ফিঙ্গার’ পদ্ধতি অনৈতিক’।
 
তবে আদালত বলেছেন, ‘টু ফিঙ্গার’ পদ্ধতি বাদ দিলে প্রকৃত দোষী ব্যক্তি বেরিয়ে যায় কি-না সেটা ভেবে দেখতে হবে। আপনারা (ডাক্তার)বিশেষজ্ঞ। সুতরাং আপনাদের ভেবে-চিন্তে মতামত দিতে হবে’।
 
আদালত আরও বলেন, আইনগতভাবে পদ্ধতিটি আপাতত দৃষ্টিতে বৈধ বলে মনে হবে। তবে এই পদ্ধতিটিওতো এক ধরণের ধর্ষণ কি-না সেটা চিন্তা করতে হবে। এ পদ্ধতিতে ভিকটিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা পুরুষ চিকিৎসক নাকি নারী চিকিৎসক করছেন, সেটাও দেখার বিষয়। তবে যতোদূর জানা যায়, সারাদেশে অধিকাংশ পরীক্ষাই করেন পুরুষরা। এটা আরো উদ্বেগের। এজন্যই বিশেষজ্ঞ হিসেবে আপনাদের (চিকিৎসক) সুনির্দিষ্ট মতামত প্রয়োজন’।
 
হাইকোর্টে মঙ্গলবার মৌখিকভাবে মতামত দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সাবেক প্রধান ডা. হাবিবুজ্জামান চৌধুরী ও ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইল ল্যাবরেটরির প্রধান ডা. সাফিউর আখতারুজ্জামান, মিরপুরের ডেল্টা মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল ডা. জাহিদুল করিম আহমেদ, বারডেম হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিনের প্রফেসর ডা. গুলশান আরা এবং  ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন অব ল’ মেডিসিন অ্যান্ড সায়েন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট মুজাহিরুল হক।
 
সনাতন পদ্ধতিতে (‘দুই আঙ্গুলের’ মাধ্যমে ধর্ষণের পরীক্ষা) ধর্ষণের পরীক্ষা করার কারণে অনেক ভিকটিম পরীক্ষা করতে আসেন না। আর এ কারণে অনেকে ধর্ষিত হয়েও বিচার পান না। ভারতে এ পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে। নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করার জন্য এ আবেদন করা হয়েছে। যাতে সঠিক পরীক্ষার পর ভিকটিমরা সুবিচার পান।

এসব বিষয় নিয়ে ২০১৩ সালের ০৮ অক্টোবর মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ব্র্যাক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, নারীপক্ষ এবং ডা. রুচিরা তাবাচ্ছুম ও ডা. মোবারক হোসেন খান রিট আবেদনটি দায়ের করেন। এরপর ১০ অক্টোবর ধর্ষণের পরীক্ষায় নীতিমালা তৈরির নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।

পুলিশ, চিকিৎসক, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের জন্য সমন্বিত ওই নীতিমালা তৈরি করে তা তিন মাসের আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। স্বাস্থ্য সচিবকে এ নীতিমালা করার জন্য একটি কমিটি গঠনেরও আদেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি রুলও জারি করেন আদালত।
 
এ আদেশের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে সভাপতি করে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন স্বাস্থ্য সচিব। ওই কমিটির হাইকোর্টে একটি নীতিমালা দাখিল করেন। ধর্ষিত নারীর সঙ্গে হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট, পুলিশ, ডাক্তারসহ সবাইকে কেমন আচরণ করতে হবে ওই নীতিমালায় তা পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়।
 
এ অবস্থায় আদৌ এ ‘টু ফিঙ্গার’ পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা আছে কি-না সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত নেওয়ার জন্য রিট আবেদনকারীরা আদালতের কাছে আবেদন জানান।  
 
সে আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ০৭ আগস্ট ৫ চিকিৎসককে ১৬ আগস্ট আদালতে উপস্থিত থাকতে বলেন হাইকোর্ট। সে মোতাবেক চিকিৎসকরা  মঙ্গলবার হাইকোর্টে এসে  মতামত দেন।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৬
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।