ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

বিজিএমইএ ভবন ভাঙার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপির অপেক্ষা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৬
বিজিএমইএ ভবন ভাঙার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপির অপেক্ষা

ঢাকা: বাংলাদেশ তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র বহুতল ভবন ভাঙার নির্দেশনা বহাল রয়েছে সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়ে। এখন কেবল পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের অপেক্ষা।

চলতি বছরের ২ জুন বিজিএমইএ’র আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।

আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের পর আরও একটি ‍সুযোগ পাচ্ছে বিজিএমইএ। সেটি হলো পূর্ণাঙ্গ রায় বের হলে রিভিউ আবেদন করার সুযোগ।

সুপ্রিম কোর্টের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে, রায় প্রদানকারী বেঞ্চের একজন বিচারপতি এ রায় লিখছেন। রায় লেখা শেষে বাকি বিচারপতিদের মতামত ও সই শেষে রায়টি প্রকাশ করা হবে।

এটি প্রকাশের পর রিভিউ করতে ৩০ দিন সময় পাবে বিজিএমই।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা মনে করছেন, রিভিউ করে তেমন একটা প্রতিকার পাওয়া যাবে না। কারণ যেসব বিচারপতি রায় দেন তারাই আবার রিভিউ আবেদন শুনেন। তাই পূর্বের রায় পরিবর্তন হওয়ার নজির খুবই কম। যদিও ইতোমধ্যে বিজিএমইএ রিভিউ করার কথা জানিয়েছে।

আইন লঙ্ঘন করে গড়ে তোলার বিষয়টি উল্লেখ করে স্বপ্রণোদিত হয়ে জারি করা এক রুলের রায়ে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবনটিকে অবৈধ ঘোষণা করে ভেঙে ফেলার নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।

একই বছরের ৫ এপ্রিল বিজিএমইএ’র আবেদনে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের রায় ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। পরবর্তী সময়ে স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরো বাড়ান সর্বোচ্চ আদালত।

এর দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্ট পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করলে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে বিজিএমইএ।

যে আপিল চলতি বছরের ২ জুন খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

হাইকোর্টের রায়ে যা ছিলো-
৯০ দিনের মধ্যে ভবনটি ভাঙার পরে ওই জমি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে জনকল্যাণে ব্যবহারে নির্দেশ দেওয়া হয় রায়ে।

হাতিরঝিল একটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প। বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাট বা অংশ বিক্রি করেছে তাদের টাকা ফেরত দিতেও বলেন হাইকোর্ট।

আদালত রায়ে বলেন, ‘বিজিএমইএ’র সদস্যরা দেশের অর্থনীতিতে যেমন অবদান রাখছেন, দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার জন্য পোশাক শ্রমিকরাও তেমনি অবদান রাখছেন। যাদের শ্রমের জন্যই পোশাক কারখানা চলছে। হাজার হাজার প্রবাসী বাঙালিরাও দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে রাখছেন। দরিদ্র কৃষকদের অবদানও কোনো অবস্থাতেই খাটো করার সুযোগ নেই। তাদের শ্রমের বিনিময়ে ফসল উৎপাদিত হচ্ছে বলে বিরাট অংকের বৈদেশিক মুদ্রা বেঁচে যাচ্ছে। তাদের উৎপন্ন দ্রব্য না থাকলে বিজিএমইএ’র সদস্যসহ গোটা দেশের জনগণকে উপোষ থাকতে হতো’।

হাইকোর্ট বলেন, ‘সুতরাং আর্থিক পেশিশক্তির অধিকারী বলে একটি শক্তিশালী মহলকে আইনের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে এমন যুক্তি অগ্রহণযোগ্য। দেশের অন্য ১০ জনের মতো এই আর্থিক পেশিশক্তির অধিকারী লোকেরাও দেশের সাধারণ আইনের আওতাধীন। সংবিধান অনুযায়ী ধনী-দরিদ্রের মধ্যে আইনের প্রয়োগের ব্যাপারে কোনো বৈষম্য চলতে পারে না’।

‘ভবনটি সৌন্দর্য ও মহিমান্বিত হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো। এই ধংসাত্মক ভবন অচিরেই বিনষ্ট করা না হলে এটি শুধু হাতিরঝিল প্রকল্পই নয়, সমস্ত ঢাকা শহরকে সংক্রমিত করবে’ আদালত রায়ে বলেন।

সোনারগাঁও হোটেলের পাশে রেলওয়ের জন্য ১৯৬০ সালে সরকারের অধিগ্রহণ করা প্রায় ৬ দশমিক ২১ একর জমিটি ১৯৯৮ সালে কেবলমাত্র একটি স্মারকের মাধ্যমে বিজিএমইএকে দেয় রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো। ১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৬
ইএস/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।