ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘হার্ড কোর টেরোরিস্ট’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৭
‘হার্ড কোর টেরোরিস্ট’

ঢাকা: ‘দি পিটিশনার মুফতি আব্দুল হান্নান ইজ এ হার্ড কোর টেরোরিস্ট’। সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী হত্যা চেষ্টা মামলায় তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রিভিউ খারিজের রায়ে এমন মন্তব্য করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।

জঙ্গিনেতা মুফতি হান্নান কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা চেষ্টা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও রমনা বটমূলসহ অনেক ঘটনায় অভিযুক্ত। কিন্তু শেষরক্ষা হচ্ছে না তার।

সিলেটে ২০০৪ সালে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী হত্যা চেষ্টা মামলায় ফাঁসির দড়ির একেবারেই কাছাকাছি তিনি।

এ মামলায় বিচারিক আদালত তাকেসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। যে রায় বহাল থাকে সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগেও। এরপর নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) এই নেতা ফাঁসির দণ্ড থেকে নিজেকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে রিভিউ আবেদন জানান। কিন্তু রোববার (১৯ মার্চ) সে আবেদন খারিজ হয়ে যায়। মঙ্গলবার (২১ মার্চ) ০৫ পৃষ্ঠার সে রায় প্রকাশিত হয়।  

চূড়ান্ত রায়ের রিভিউ খারিজ হওয়ায় মুফতি হান্নানের সঙ্গে অন্য দুই জঙ্গি শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন রিপনও ফাঁসির দড়ির মুখোমুখি।

রায়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, ‘এই মর্মে দালিলিক প্রমাণ রয়েছে যে, আবেদনকারী মুফতি আব্দুল হান্নান একজন হার্ডকোর সন্ত্রাসী। যিনি এই সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মূল হোতা এবং বোমা সরবরাহকারী ও অন্য অভিযুক্তরা ঘটনায় সরাসরি অংশ নিয়েছেন’।

সর্বোচ্চ আদালতের মতে, ‘এটা বাংলাদেশের অন্যতম হন্তারক ঘটনা, যেখানে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। ঘটনাটি এতোই নৃশংস ছিল যে, কারও মনেই এটা আসতে পারে না যে, হাইকমিশনারকে হত্যা করা তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু মারাত্মক আহত হয়ে ঘটনাক্রমে তিনি বেঁচে যান। তার সঙ্গে থাকা অন্যরা বিস্ফোরকের আঘাতে আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন’।

মৃত্যুদণ্ড বহালের বিষয়ে আপিল বিভাগ বলেন, ‘দণ্ড বহাল রেখে এই আদালতের মত হচ্ছে, দণ্ডবিধির ৩০০ ধারার ক্লজ ‘ফোর্থলি’ এখানে যুক্ত করছে, যাতে এটা বলা যায় যে, অভিযুক্ত এমন ঘটনা সংগঠিত করেছেন, যা এতোটাই মারাত্মক যে, যাতে মৃত্যুর সব আশঙ্কা ছিল। এই আদালতের রায়ের আইনগত দিকে আইনজীবী (হান্নানের আইনজীবী) কোনো ভুল দেখাতে পারেননি। তাই আমরা এ আবেদনগুলোর কোনো সারবত্তা পাইনি। এ কারণে এ পুনর্বিবেচনার আবেদনগুলো খারিজ করা হলো’।

আইন অনুসারে রায়ের অনুলিপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার হয়ে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় ও সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে যাচ্ছে। মুফতি হান্নান ও বিপুলকে কাশিমপুর আর রিপনকে সিলেট কারাগারে রাখা হয়েছে।
 
অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘রায় অবগত হওয়ার পর জেল কর্তৃপক্ষ জিজ্ঞাসা করবেন, রাষ্ট্রপতির কাছে তারা (মুফতি হান্নানসহ মৃতুদণ্ডাদেশপ্রাপ্তরা) প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি-না, তারা যদি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চান, সে আবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। আর যদি না চান বা আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়, তাহলে জেল কর্তৃপক্ষ তাদের পরবর্তী প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাবে’।

২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটের হযরত শাহজালালের (র.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়।

হামলায় আনোয়ার চৌধুরী, সিলেট জেলা প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত এবং পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত হন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।