ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সাত খুনের পেপারবুক সুপ্রিম কোর্টে, শুনানি শিগগিরই

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৭ ঘণ্টা, মে ৭, ২০১৭
সাত খুনের পেপারবুক সুপ্রিম কোর্টে, শুনানি শিগগিরই সুপ্রিম কোর্ট

ঢাকা: নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলার পেপারবুক এসে পৌঁছেছে। এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২৬ আসামির ডেথ রেফারেন্স এবং ১৬ জনের নিয়মিত ও জেল আপিলের শুনানি শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে হাইকোর্টে।

রোববার (০৭ মে) বিজি প্রেস থেকে পেপারবুক সুপ্রিম কোর্টে এসে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন হাইকোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মো. সাব্বির ফয়েজ। তিনি জানান, ৬ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুকের ছয়টি কপি ছাপা হয়ে এসেছে।

এখন সেগুলোর যাচাই-বাছাই চলছে।  

মো. সাব্বির ফয়েজ বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে এ পেপারবুক উপস্থাপন করা হবে। প্রধান বিচারপতি অনুমোদন দিয়ে হাইকোর্টের যে বেঞ্চে পাঠাবেন, সেখানেই এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি হবে।

গত ১৬ জানুয়ারি চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলার রায়ে নূর হোসেন ও র্যাবের বরখাস্তকৃত তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালত। এ মামলার ৩৫ জন আসামির মধ্যে বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

সাজাপ্রাপ্ত ৩৫ আসামির মধ্যে ৯ জন এখনও পলাতক। গ্রেফতারকৃত ২৫ জন ও আত্মসমর্পণ করা ১ জনসহ ২৬ জনের  মধ্যে ২০ জনকে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে এবং ৬ জনকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১ ও পার্ট-২ এ রাখা হয়েছে।  

সাত খুনের ঘটনায় দু’টি মামলার বিচারিক কার্যক্রম একসঙ্গে শেষ করেন আদালত। একটি মামলার বাদী নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল এবং অপরটির বাদী নিহত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি।
 
সাত খুন মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে হাইকোর্টে নিয়মিত আপিল ও জেল আপিল করেছেন প্রধান আসামি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন এবং র‌্যাব-১১’র চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মুহাম্মদ, মেজর (অব.) আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার (অব.) মাসুদ রানা।

আপিল করেছেন র্যাবের চাকরিচ্যুত হাবিলদার মো. এমদাদুল হক, ল্যান্সনায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহী আবু তৈয়্যব আলী,  কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দু বালা ও সিপাহী আসাদুজ্জামান নূর।

নূর হোসেনের ৬ সহযোগী মূর্তজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দিপু, আবুল বাশার, রহম আলী ও জামাল উদ্দিন সরদারও হাইকোর্টে আপিল করেছেন।

পরে গ্রেফতার হন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৠাবের চাকরিচ্যুত সার্জেন্ট এনামুল কবির। তবে সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি আপিল করেননি। আপিল করেননি গ্রেফতারকৃত ল্যান্সনায়েক হীরা মিয়া ও আরওজি-১ এ বি মো. আরিফ হোসেনও।

মৃত্যুদণ্ড ৭ পলাতক আসামিও আপিল করেননি। তাদের মধ্যে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নে কর্মরত ছিলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এমন ৪ জন জন এখনও পলাতক। তারা হচ্ছেন- সৈনিক আবদুল আলীম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী, সৈনিক আলামিন শরীফ ও সৈনিক তাজুল ইসলাম।

আর মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত পলাতক নূর হোসেনের তিন সহযোগী হচ্ছেন- ভারতে গ্রেফতারকৃত সেলিম, সানাউল্লাহ সানা ও শাহজাহান।

বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড পাওয়া ৯ জনও র‌্যাবের বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা ও সদস্য। তাদের মধ্যে কনস্টেবল (পরে এএসআই পদে পদোন্নতি পেয়ে নৌ-থানায় কর্মরত) হাবিবুর রহমানকে ১৭ বছর, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, এএসআই কামাল হোসেন, কনস্টেবল বাবুল হাসান, কর্পোরাল মোখলেসুর রহমান, ল্যান্স কর্পোরাল রুহুল আমিন ও সিপাহী নুরুজ্জামানকে ১০ বছর এবং এএসআই বজলুর রহমান ও হাবিলদার নাসির উদ্দিনকে ৭ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।  

তাদের মধ্যে পলাতক ২ জন হচ্ছেন- র‌্যাবের চাকরিচ্যুত কর্পোরাল মোখলেসুর রহমান ও এএসআই কামাল হোসেন।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭ জনকে অপহরণের তিনদিন পর তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় নিহত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম।

সাত খুনের ঘটনায় প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও তার ৪ সহকর্মী হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় একটি এবং সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়ির চালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে একই থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন।

দীর্ঘ প্রায় এক বছর তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ০৮ এপ্রিল তদন্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ মণ্ডল সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

গত বছরের ০৮ ফেব্রুয়ারি ৭ খুনের দু’টি মামলায় নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ২৩ আসামির উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত।

র‌্যাবের ৮ সদস্যসহ পলাতক ১২ আসামির অনুপস্থিতিতেই বিচারকার্য সম্পন্ন হয়। তবে পলাতক ১২ আসামির পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে ৫ জন আইনজীবীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। রায়ের পরে তাদের মধ্যে গ্রেফতার হস ৩ জন।

দু’টি মামলারই অভিন্ন সাক্ষী ১২৭ জন করে। তাদের মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তাসহ ১০৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত।

মামলার সর্বশেষ ধাপ উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষে গত বছরের ৩০ নভেম্বর এ বছরের ১৬ জানুয়ারি রায়ের দিন ধার্য করেন আদালত।

১৬ জানুয়ারি রায়ের পরে ২২ জানুয়ারি ১৬৩ পাতার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। ওইদিনই পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি, জুডিশিয়াল রেকর্ড, সিডিসহ বিভিন্ন নথিপত্র (ডেথ রেফারেন্স) হাইকোর্টে পৌঁছে দেন বিচারিক আদালতের কর্মকর্তারা।

২৯ জানুয়ারি সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার কাছে উপস্থাপন করা হলে দ্রুত শুনানির জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দেন তিনি।

গত ০৮ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামির নিয়মিত ও জেল আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট।

এরপর হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা মামলার সব নথি বিজি প্রেসে পাঠানো হয়। এরপরই বিজি প্রেস পেপারবুক প্রস্তুত করে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।