ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সুপ্রিম কোর্ট থেকে বঙ্গভবন, কত দূর!!

ইলিয়াস সরকার, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩৮ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৭
সুপ্রিম কোর্ট থেকে বঙ্গভবন, কত দূর!! সুপ্রিমকোর্ট থেকে বঙ্গভবন (গুগল ম্যাপ)

ঢাকা: সুপ্রিম কোর্ট ভবন থেকে বঙ্গভবনের দূরত্ব কত? এই প্রশ্নটাই করলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ প্রশ্নটি করেছেন?

গুগল ম্যাপে দূরত্ব মোটে তিন কিলোমিটার যেতে সময় লাগে ১২ মিনিট। তবে সে তথ্য জানা এই প্রশ্নের উদ্দেশ্য ছিলো না।

দেশের বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই মন্তব্যে ছিলো- গত আড়াই বছরেও নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট না হওয়ায় ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।

সোমবার (০৮ মে) বিধিমালাটি গেজেট আকারে প্রকাশে রাষ্ট্রপক্ষে সময় আবেদন করা হলে এমন মন্তব্য শুনতে হয় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে।  

গেজেট প্রকাশের জন্য দুই সপ্তাহের সময় আবেদন করেছিলেন তিনি।

আদালতে আপিল বিভাগ অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘গেজেট কই? এটা কি? এটাতো সময় আবেদন!’

‘আপনি বলুন তো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শহর কোনটা? সবাইতো মনে করে টোকিও বা নিউইয়র্ক। কিন্তু নিউইয়র্ক বা টোকিও’র এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে কত সময় লাগে? আমারতো মনে হয় এখন ঢাকাই সবচেয়ে বড় শহর! সুপ্রিম কোর্ট থেকে বঙ্গভবন বা গণভবনের দুরত্ব কত? মনে হয় কয়েক লাখ কিলোমিটার। আড়াই বছরে গেজেটটা এ পথ পাড়ি দিতে পারেনি। আমার মনে হয় আড়াই হাজার বছরেও হবে না! কেন হয়নি?’

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও বঙ্গভবন

এরপর আদালত এক সপ্তাহ সময়ের কথা বললে অ্যাটর্নি জেনারেল ওই সময়ে গেজেট প্রকাশে সংশয় প্রকাশ করেন। এতে আপিল বিভাগ বলেন, ‘আপনার কাছে এক সপ্তাহ যা, দুই সপ্তাহ তা, এমনকি দুই বছরও। ’
 
এর আগে ২০১৬ সালের ০৮ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশ না করায় আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে ১২ ডিসেম্বর হাজির করতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে মৌখিক নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

এর মধ্যে ১২ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশের প্রয়োজন নেই বলে সিদ্ধান্ত দেন রাষ্ট্রপতি।

পরে অবশ্য দুই সচিব আদালতে হাজির হওয়ার পর গেজেট প্রকাশে সময় দেন আদালত।

১৯৯৯ সালের ০২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথককরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেওয়া হয়। ওই রায়ের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিলো।

আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর গত বছরের ০৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।

গত বছরের ২৮ আগস্ট শুনানিকালে আপিল বিভাগ খসড়ার বিষয়ে বলেন, শৃঙ্খলা বিধিমালা সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিলো ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ। যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী।

এর পরই সুপ্রিম কোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান। একইসঙ্গে ০৬ নভেম্বরের মধ্যে তা প্রণয়ন করে প্রতিবেদন আকারে আদালতকে অবহিত করতে আইন মন্ত্রণালয়কে বলা হয়।

গত বছরের ০৬ নভেম্বর সে অনুসারে মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানাতে পারেননি।

পরে আপিল বিভাগ বিধিমালা চূড়ান্তের বিষয়ে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা লিখিতভাবে জানাতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়ে ০৭ নভেম্বর আদেশের দিন ধার্য করেন।

ওই দিন অ্যাটর্নি জেনারেল আট সপ্তাহের সময়ের আবেদন জমা দেন। যাতে বিধিমালাটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর কথা উল্লেখ করেন তিনি। সর্বোচ্চ আদালত ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেন।

গত বছরের ২৪ নভেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল গেজেট প্রকাশে আরও এক সপ্তাহ সময় চাইলে আপিল বিভাগ তা মঞ্জুর করেন। পরে ০১ ডিসেম্বর আইনমন্ত্রী ফিলিপাইনে রয়েছেন বলে ফের এক সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়। সময় মঞ্জুরের পরও ০৮ ডিসেম্বরের পর থেকে আরও কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে নেন রাষ্ট্রপক্ষ।

ঢাকা: বাংলাদেশ সময় ১০৩৩ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৭
ইএস/এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।