মঙ্গলবার (২০ জুন) ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থনকারী আসামিরা হলেন- হুজি নেতা মাওলানা মহিবুল্লাহ ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাহিদ, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল ও জাহাঙ্গীর আলম।
এ নিয়ে ১১ আসামির আত্মপক্ষ সমর্থন সম্পন্ন হলো।
এর আগে গত ১২, ১৩ ও ১৪ আত্মপক্ষ সমর্থনকারী ৭ আসামি হলেন- সাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, মাওলানা শেখ আব্দুস সালাম, আব্দুল মাজেদ ভাট, আব্দুল মালেক, মাওলানা আব্দুর রউফ, মাওলানা আব্দুল হান্নান ওরফে সাব্বির ও মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ।
আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের আগে বিচারক প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য পৃথকভাবে পড়ে শোনান। এরপর তাদের কাছে পৃথকভাবে জানতে চান, তারা দোষী না নির্দোষ? জবাবে আসামিরা নিজেদেরকে নির্দোষ দাবি করেন।
গত ৩০ মে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার পর ১২ জুন থেকে আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌশলী সৈয়দ রেজাউর রহমান জানান, মামলাটিতে মোট ৪০৮ জন তালিকাভুক্ত সাক্ষী ছিলেন। তাদের মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দসহ ২২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। মামলার অভিযোগ প্রমাণে যে সকল সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা প্রয়োজন, শুধু তাদের সাক্ষ্যই গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও শ্রবণশক্তি হারান, আহত হন শতাধিক নেতাকর্মী।
এ ঘটনায় মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে পৃথক তিনটি এজাহার দায়ের করেন।
মামলাটিতে ২০০৮ সালের ১১ জুন ২২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রথম চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি। ওই বছরের ২৯ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। ২০০৯ সালের ০৯ জুন পর্যন্ত ৬১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
২০০৯ সালের ০৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১১ সালের ০৩ জুলাই অধিকতর তদন্ত শেষে তারেক রহমাসসহ আরও ৩০ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করে সিআইডি।
২০১২ সালের ১৮ মার্চ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সম্পূরক চার্জশিটের ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ফের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দু’টি পৃথক চার্জশিটের ভিত্তিতে দুই মামলার বিচার একসঙ্গে চলছে। এর মধ্যে হত্যা মামলায় মোট আসামি ৫২ জন ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায় আসামি ৪১ জন।
হত্যা মামলার ৫২ আসামির মধ্যে তিনজনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে অন্য মামলায়। তাদের মধ্যে ২০১৫ সালের ২১ নভেম্বর রাতে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হয় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে। সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলার দায়ে হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল ওরফে বিপুলের ফাঁসি গত ১২ এপ্রিল রাতে কার্যকর হয়।
বাকি ৪৯ জনের মধ্যে জামিনে থাকা ৮ আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী, সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি’র সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডি’র সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান ও এএসপি আব্দুর রশীদ।
অন্যদিকে কারাগারে থাকা ২২ আসামি হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, শাহাদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ, মো. উজ্জল ওরফে রতন, মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মো. আবদুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে পীর সাহেব, মাওলানা সাব্বির আহমেদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ ও হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া।
পলাতক ১৯ আসামি হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জেল হোসেন কায়কোবাদ, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, ডিএমপি’র সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক ডিআইজি ও ডিএমপি’র সাবেক ডিসি (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, আব্দুস সালাম পিন্টুর দুই ভাই গ্রেনেড সরবরাহকারী মাওলানা তাজউদ্দিন ও রাতুল আহম্মদ বাবু ওরফে রাতুল বাবু, ভারতের কারাগারে আটক দুই জমজ জঙ্গি সহোদর আনিসুল মোরসালিন ও মুহিবুল মুক্তাকিন এবং জঙ্গিনেতা শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবু বকর, ইকবাল, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর ও মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দায় স্বীকার করে এ মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন নয়জন আসামি। তারা হলেন- হুজি নেতা মুফতি হান্নান, মো. আব্দুল মাজেদ ভাট, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম, আরিফ হাসান সুমন ও রফিকুল ইসলাম সবুজ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৬ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৭
এমআই/এএসআর