কিন্তু টিভির জনপ্রিয় টকশো ব্যক্তিত্ব আসিফ নজরুল স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, যে আইডি থেকে বিতর্কিত পোস্ট দেওয়া হয়েছে সেটা তার নয়। বেশ কয়েকবার নিজের একাউন্টে পোস্ট দিয়ে তার নামে খোলা ভুয়া একাউন্ট সম্পর্কে সবাইকে একাধিকবার সতর্কও করেছেন তিনি।
তাই বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠছে, ভুয়া একাউন্টের অপকর্ম ড. আসিফ নজরুলের ঘাড়ে চাপিয়ে তার নামে তথ্য-প্রযুক্তি আইনে মামলা কেনো?
সংবাদপত্রে প্রকাশিত মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসানের বক্তব্য থেকে জানা যায়, গত ২১ নভেম্বর থানায় ড. আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় অভিযোগ দায়ের করেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের ভাগ্নে সৈয়দ আসাদ উজ্জামান মিনার। থানা তখন অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুমতির জন্য পাঠায়। ২৬ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পেয়ে সোমবার (২৭ নভেম্বর) অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।
পুরো প্রক্রিয়ায় বিতর্কিত একাউন্টটির বৈধতা পরীক্ষা করে না দেখায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, আলোচিত একাউন্টের যথার্থতা পরীক্ষা করে দেখা হলো না কেনো?
আইটি এক্সপার্টরা বলছেন, এমন বিষয় নিয়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ কিন্তু ছিলো, আছে। একজন নবীশ আইটি কর্মীও মুহূর্তে খুঁজে বের করতে পারে, কোন আইপি থেকে একাউন্টটি চালানো হচ্ছিলো। এ ব্যাপারেও সহযোগিতা চাওয়ার সুযোগ আছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে।
এক্সপার্টদের মতে, আইডিটি ফেক নাকি প্রকৃত তা জানতে পুলিশ বিভাগের খুব বেশী বেগ পাওয়ার কথা নয়। বিশষ করে যখন তথ্য-প্রযুক্তির আধুনিক যুগে প্রবেশ করা বাংলাদেশ পুলিশের নিজস্ব আইটি এক্সপার্ট টিম রয়েছে।
সচেতন মহলে তাই প্রশ্ন উঠেছে, থানা থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘুরে মামলা দায়েরের অনুমতি আসার পর কোনো স্তরেই সত্যাসত্য যাচাইয়ের কোনো চেষ্টা বা ইচ্ছার বহি:প্রকাশ না ঘটাটা বিস্ময়কর নয় কি? ঘাটতি তাহলে কি সাধ্যে, না সাধে?
মামলার পর ফেসবুকেও এ নিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। বলা হচ্ছে, ড. আসিফ নজরুল তো গোপন কর্মকাণ্ড করে বেড়ান বলে কখনো কেউ অভিযোগ তোলেনি। তিনি কথা বলেন টেলিভিশনে, টক শোতে। আর লেখেন পত্রিকায়। আলোচনা, সমালোচনা যাই করুন, প্রকাশ্যেই করেন। সরকার তো তাকে জোর করে ঘরে বসিয়ে দেয়নি। তাহলে ক্ষমতা কাঠামোর সুরক্ষায় কারো ব্যক্তি স্বার্থে কেনো এমন মামলা হবে? কেনো এভাবে অপব্যবহার হবে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের?
আরো বলা হচ্ছে, ড. আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে এমন নজিরবিহীন মামলার ঘটনা কি সভ্য সমাজকে হেয় করলো না? এ মামলা কি দেখিয়ে দিলো না যে, কাউকে ফাঁসাতে চাইলে একটা ভুয়া এফবি একাউন্ট খুলে মামলা ঠুকে দিলেই কাজ হয়ে যাবে?
তবে, শুধু তথ্য-প্রযুক্তি আইনে নয়, ওই এক ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে মানহানিরও একটি মামলা হয়েছে ড. আফিস নজরুলের বিরুদ্ধে।
কিন্তু কি লেখা আছে সেই ফেসবুক পোস্টে? মামলা দুটি দায়েরইবা করলেন তারা?
ড. আসিফ নজরুলের আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান জানান, ২৩ নভেম্বর দুপুরে ৫০০ ও ৫০১ নম্বর ধারায় মানহানির মামলাটি করেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের চাচাতো ভাই ও জেলা পরিষদ সদস্য মো. ফারুক খান।
চট্টগ্রাম বন্দরে লস্কর নিয়োগ নিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগে ড. আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে এ মানহানি মামলা করেন তিনি।
বিতর্কিত ওই ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়োগ পরীক্ষায় ৯২ জন উত্তীর্ণ হয়েছে, যার মধ্যে ৯০ জন নৌপরিবহন মন্ত্রীর এলাকা মাদারীপুরের বাসিন্দা। অথচ উনি চাইলে ৯২ জনই উনার এলাকার লোক হতে পারতো। ২ জন ভিন্ন এলাকার লোক নিয়োগ দিয়ে উনি সততার যে দৃষ্টান্ত দেখালেন তা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ’
এতে নৌমন্ত্রীর সম্মানহানি হওয়ার পাশাপাশি মন্ত্রীর পরিবার, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সামাজিক ব্যক্তিত্বসহ দলমত নির্বিশেষে সবার মনে ক্ষোভ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। এতে মন্ত্রীর ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক মান ক্ষুণ্ন হয়েছে।
কিন্তু ড. আসিফ নজরুল তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, নৌ-মন্ত্রী শাজাহান খানের বিরুদ্ধে বা তার সম্পর্কে কোনো রকম স্ট্যাটাস তিনি দেননি।
তবে তার নামে খোলা কিছু ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এমন স্ট্যাটাস দেওয়া হয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেন তিনি।
ড. আসিফ নজরুল আরো জানিয়েছেন, তার নিজের যে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে সেখানে তিনি বেশ কয়েকবার নাম ও ছবি ব্যবহার করে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করেছেন। এসব ভুয়া একাউন্টে প্রকাশিত কোনো কিছুর সঙ্গে তার কোনোরকম সম্পর্ক নেই বলেও জানিয়েছেন।
আক্ষেপ করে ড. আসিফ নজরুল বলেন, ভেবে অবাক হচ্ছি যে, আমার ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্টটা উনাদের চোখে পড়লো, আর আমার আসল ফেসবুক ও আমার ফ্যানপেজে যেখানে সদস্য সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ, সেখানে বহুবার ভুয়া অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে লেখা হয়েছে, সেটা তাদের চোখে পড়লো না কেন?
তিনি বলেন, আমি হতবাক! এতো মিথ্যে তথ্যের ভিত্তিতে একজন মন্ত্রীর পক্ষে মানহানির মামলা করা যেতে পারে? দেশে যারা ক্ষমতাবান আছেন তারা অন্যদের বিরুদ্ধে কি ভয়ঙ্করভাবে আইন ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করার চিন্তা করতে পারেন এই ঘটনা এর একটি বড় প্রমাণ।
গোয়েন্দা সংস্থা কাজে লাগিয়ে মন্ত্রীকে অভিযোগ প্রমাণের আহবান জানিয়েছেন প্রফেসর আসিফ নজরুল।
আশার কথা এই যে, বিজ্ঞ আদালত দুটি মামলাতেই ড. আসিফ নজরুলকে জামিন দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ড ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৭
জেডএম/