শুধু তাসলিমা খাতুন নন, এভাবে বছরের পর বছর বিচারের আশায় আছেন জেলার কয়েক লাখ মানুষ। ফলে সাধারণ মানুষ যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি বিচারের বাণী কাঁদছে নীরবে নিভৃতে।
সাতক্ষীরা আদালত সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জজশিপে ১৪ জন বিচারকের স্থলে কর্মরত আছেন নয়জন।
এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর, আশাশুনি, শ্যামনগর ও দেবহাটা সহকারী জজ এবং সহকারী জজের অতিরিক্ত আরও একটি পদ শূন্য রয়েছে।
এছাড়া ম্যাজিস্ট্রেসিতে নয়জন বিচারকের স্থলে কর্মরত রয়েছেন চারজন। এখানেও শূন্য রয়েছে পাঁচটি পদ।
এর মধ্যে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের দু’টি এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের তিনটি পদ শূন্য।
অপরদিকে, সাতক্ষীরা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটরের (পিপি) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা জজশিপ ও ম্যাজিস্ট্রেসিতে ৫০ হাজার ৩০৪টি মামলার জট লেগে আছে। বিচারক সংকটে এসব মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে না।
সূত্র মতে, সাতক্ষীরা জজশিপে বিচারাধীন মামলা রয়েছে আট হাজার ৬৪০টি। এর মধ্যে দায়রা মামলা তিন হাজার ১৮২টি, এসটিসি মামলা দুই হাজার ৮৮৪টি, বিশেষ মামলা ৩৫টি, ফৌজদারি আপিল মামলা এক হাজার ১১টি, ফৌজদারি রিভিশন মামলা এক হাজার ২৭৪টি, ফৌজদারি বিবিধ মামলা ১৬৮টি, এসিড অপরাধ মামলা ২৫টি, জননিরাপত্তা মামলা দু’টি, সন্ত্রাস মামলা দু’টি এবং শিশু মামলা রয়েছে ৫৭টি।
এছাড়া সিভিল মামলা রয়েছে ২৫ হাজার ৩৪টি। এর মধ্যে আপিল মামলা এক হাজার ২৫০টি, সত্ত্ব/অন্যপ্রকার মামলা (দেওয়ানি) সাত হাজার ৬৯৯টি, টাকার মামলা ১৬৫টি, এসসিসি মামলা আটটি, পারিবারিক মামলা ৭৮৫টি, নির্বাচনী মামলা ১৭টি, মিস কেস এক হাজার ১৪৬টি, জারি মামলা ৯২২টি, সিভিল রিভিশন মামলা ২৯৩টি, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ মামলা পাঁচ হাজার ৫৮টি এবং ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল মামলা রয়েছে সাত হাজার ৬৯১টি।
অপরদিকে, সাতক্ষীরা ম্যাজিস্ট্রেসিতে বিচারাধীন মামলা রয়েছে ১৩ হাজার ৭৮৫টি এবং সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা রয়েছে দুই হাজার ৮৪৫টি।
ফলে, একদিকে যেমন মামলা জট লেগে আছে, অপরদিকে বিচারক সংকটে বিচার না পেয়ে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে বিচার ব্যবস্থার ওপর। বাড়ছে অপরাধ।
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার সখিপুর গ্রামের আজিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমি আট বছর ধরে আদালতে হাঁটছি। এখন দেবহাটার সহকারী জজ পদই শূন্য। কবে নাগাদ মামলা নিষ্পত্তি হবে জানি না। মৃত্যুর আগে বিচার দেখে যেতে পারবো তো?
সাতক্ষীরা আদালতের অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, বিচারক সংকটের কারণে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এতে মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। বিচারক নিয়োগ ছাড়া এর কোনো সমাধান আছে বলে মনে করি না।
সাতক্ষীরা আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ওসমান গণি বাংলানিউজকে বলেন, মামলা নিষ্পত্তিতে বিচারক সংকট এখন বড় সমস্যা। সাতটি উপজেলার চারটিতেই কোনো বিচারক নেই। মানুষ বিচার না পেয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে।
তবে, সম্প্রতি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একজন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আশা করি, কর্তৃপক্ষ অন্যান্য শূন্য পদগুলোও দ্রুত পূরণ করে দেবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৮
এসআই