বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুরুন্নাহার ইয়াসমিন মামলাটি বদলির জন্য চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) মো. সাইফুজ্জামান হিরোর কাছে পাঠিয়েছেন। তিনি মহানগর আদালতে মামলাটি বদলি করবেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট গুলশান থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) রকিবুল ইসলাম।
এর আগে গত ২৩ জুলাই ২১ জনকে চিহ্নিত করে জীবিত আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
এ নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, অভিযুক্ত ২১ জনের মধ্যে ১৩ জন বিভিন্ন সময়ে নিহত হয়েছে আর জীবিত আছে আট জন। এর মধ্যে ছয়জন কারাগারে ও দুইজন পলাতক।
বিভিন্ন অভিযানে নিহত আট আসামি হলেন- তামিম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ান জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।
আর হলি আর্টিজানে সেনাবাহিনীর অপারেশন থান্ডারবোল্টে ঘটনাস্থলেই নিহত পাঁচজন হলেন- রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।
জীবিত অভিযুক্ত আটজনের মধ্যে কারাগারে কারাগারে রয়েছেন- রাজীব গান্ধী, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাতকাটা সোহেল মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাশেদ ইসলাম ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ ।
এছাড়া পলাতক দুই আসামি হচ্ছেন শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন।
এদিকে হামলার পরদিন সকালে হলি আর্টিজান বেকারি থেকে গ্রেফতার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমের নাম অভিযোগপত্রে আসেনি।
হলি আর্টিজানে জিম্মি সংকট তৈরির পর হাসনাতকে ওই রেস্তোরাঁর ছাদে জঙ্গিদের সঙ্গে আলাপরত অবস্থায় দেখা যায়, এমন একটি ছবিও ওই সময় প্রকাশিত হয় সংবাদমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও।
২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে (স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ) হামলা চালানো হয়। এতে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে জঙ্গিরা।
জঙ্গিদের আক্রমণের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। সে হামলায় ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন আহমেদ নিহত হন।
পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। অভিযানে পাঁচ জঙ্গির সবাই নিহত হয়।
হলি আর্টিজান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম আহমেদ চৌধুরীকে।
২০১৬ সালের ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় জঙ্গিবিরোধী এক অভিযানে দুই সহযোগীসহ নিহত হন তামিম। রায়হান কবির তারেক ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে আট সহযোগীসহ নিহত হন।
সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ ২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর মিরপুরের রূপনগরে সিটিটিসি’র জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হন। হামলাকারীদের আশ্রয়দাতা তানভীর কাদেরী ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরে এক অভিযানে নিহত হন।
হামলার পরিকল্পনায় অন্যতম সহযোগী সরোয়ার জাহান মানিক ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর আশুলিয়ায় র্যাবের অভিযান চলাকালে পালাতে গিয়ে পাঁচ তলা থেকে নিচে পড়ে নিহত হন।
নুরুল ইসলাম মারজান ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় সিটিটিসি ইউনিটের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক সহযোগীসহ নিহত হন।
বাশারুজ্জামান ওরফে চকোলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সিটিটিসি’র অভিযানে নিহত হন।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৮
এমআই/এইচএ/