ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সেই সাজানো হত্যা মামলার তদন্তকারীর বিচার চান আসামিরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৯
সেই সাজানো হত্যা মামলার তদন্তকারীর বিচার চান আসামিরা কিশোর আবু সাঈদ, ফাইল ফটো

ঢাকা: খুন হয়েছে অভিযোগ এনে নিজের ছেলেকে লুকিয়ে রেখে মামলা দিয়ে প্রতারণা করার জেরে পাল্টা মামলায় কারাগারে মোহাম্মদ আজম নামে এক ব্যক্তি। একইসঙ্গে কারাগারে আছেন ‘খুন হওয়া’ সেই ছেলে আবু সাঈদ (১৫), তার মা মাহিনুর বেগম ও এক আত্মীয় আব্দুল জব্বার।

বৃহস্পতিবার (০৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকার ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শামসুন্নাহারের আদালতে তাদের সবাইকে হাজির করা হয়। এসময় মোহাম্মদ আজমের দেওয়া সাজানো অপহরণ এবং হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন ধরে কারাভোগ করে আসা আসামিরা ঘটনাটির তদন্তকারী কর্মকর্তার বিচার চান।

মামলাটির আসামিপক্ষের আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান আদালতকে বলেন, একটি ছেলে নিজে থেকে পালিয়ে যায়। এরপর মিথ্যা অপহরণ মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার করার পর তাদের নির্যাতন করে দুইজনকে দিয়ে মিথ্যা হত্যার স্বীকারোক্তি আদায় করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রুহুল আমিন। এই কর্মকর্তা নির্যাতন করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের মাস্টারমাইন্ড। আসামিদের পক্ষ থেকে তার বিচার চাই। একইসঙ্গে তার পেছনে যারা কলকাঠি নাড়িয়েছেন, তাদেরও বিচার চাই।

এরপর বিচারক শামসুন্নাহার মামলার ভিকটিম আবু সাঈদ ও তার বাবা মোহাম্মদ আজমকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে আজম আদালতে উপস্থিত ছেলেকে দেখিয়ে বলেন, এই সেই আবু সাঈদ। যে হারিয়ে গিয়েছিল।

অন্যদিকে, ভিকটিম আবু সাঈদ জানায়, পড়ালেখা ভালো লাগতো না। তাই বাড়ি থেকে সে পালিয়ে গিয়েছিল। তাকে কেউ অপহরণ করেনি।

এরপর বিচারক জানান, এই আবু সাঈদ যে এ মামলার নিহত আবু সাঈদ, তা আমাকে পুলিশ প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানতে হবে। তাই আগামী ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হাজারীবাগ থানাকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছি। পুলিশি প্রতিবেদন পাওয়ার পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আদেশ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। তদন্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিন বর্তমানে রাজধানীর ডেমরা থানায় কর্মরত।

শুনানিকালে মিথ্যা মামলায় দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে থাকা সাইফুল ইসলাম, সোনিয়া আক্তার ও তার ভাই আফজাল হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আবু সাঈদ হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তার বাবা আজম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ওই জিডির পর তিনি অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির মামলাও করেন। ওই মামলায় বিভিন্ন সময় আসগর আলী, মিলন, সাইফুল ইসলাম, সোনিয়া আক্তার, তার ভাই আফজাল হোসেন ও শাহীন নামে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়।

পরবর্তীতে সাইফুল ও আফজাল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। তারা বলেন, আবু সাঈদকে তারা অপহরণ করে হত্যার পর মরদেহ বরিশালগামী লঞ্চ থেকে নদীতে ফেলে দেন।

মামলাটি তদন্তের পর ২০১৫ সালের ১৫ জুন আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন রুহুল আমিন। চার্জশিটে আসগর আলী ও মিলনকে বাদ দিয়ে অপর চারজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়।

বর্তমানে ঢাকার পাঁচ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নাশি মামলা হিসেবে বিষয়টি বিচারাধীন। মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে যুক্তিতর্কের পর্যায়ে রয়েছে।

ওই মামলায় আপষের কথা বলে বাদী আজম প্রতিপক্ষের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকাও নেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি স্বীকার করেন তার ছেলে আবু সাঈদ বেঁচে আছে।

পরে গত ৩০ আগস্ট তিনি কৌশলে ছেলেকে নিয়ে আরও দুই লাখ টাকা নেওয়ার জন্য রাজধানীর পল্লবী থানাধীন একটি বাসায় আসেন। এরপরই থানা পুলিশ তাদের আটক করে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেন অপহরণ মামলায় আসামি থাকা সোনিয়া আক্তার।

এদিকে, মিথ্যা ওই অপহরণ ও হত্যা মামলায় সোনিয়া আক্তার, তার ভাই আফজাল হোসেন ও আত্মীয় সাইফুল ইসলাম ছয় মাস থেকে তিন বছর পর্যন্ত কারাভোগ করেন। এছাড়া আফজাল হোসেন ও সাইফুল ইসলামকে জোর করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বাধ্য করেন তদন্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিন।

এদিকে, গত ৩ সেপ্টেন্বর প্রতারণা মামলায় দুইদিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয় ‘খুন হওয়া’ সেই ছেলে আবু সাঈদ (১৫), তারা বাবা, মা এবং এক আত্মীয়কে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৯
এমএআর/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।