ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

পাচার করা নারীদের দিয়ে অনৈতিক কাজ, আজম খানের স্বীকারোক্তি 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২০
পাচার করা নারীদের দিয়ে অনৈতিক কাজ, আজম খানের স্বীকারোক্তি 

ঢাকা: চাকরির নামে দেশের হাজারেরও বেশি তরুণী-কিশোরীকে দুবাইয়ে পাচার করে তাদের অনৈতিক কাজে জড়াতে বাধ্য করেন আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্রের মূলহোতা আজম খান। এ বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন তিনি। 

সোমবার (১৩ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনুর রহমান ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। তার সহযোগী মো. আলামিন হোসেন ওরফে ডায়মন্ডও একইদিনে স্বীকারোক্তি দেন।

 

দুই সহযোগীসহ আজম খানকে গ্রেফতারের পর সোমবার তাদের আদালতে হাজির করে সিআইডি। এসময় আজম খান ও তার সহযোগী ডায়মন্ডের স্বীকারোক্তমূলক জবানবন্দি রেকর্ড ও আরেক সহযোগী আনোয়ার হোসেন ময়নাকে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। সেই আবেদন মঞ্জুর করে বিচারক দু’জনের জবানবন্দি রেকর্ডসহ তিনজনকেই কারাগারে পাঠান।  

তাদের গ্রেফতারের পর রোববার (১২ জুলাই) সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম প্রধান ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, দুবাইতে মানবপাচার চক্রের গডফাদার আজমের বিলাসবহুল হোটেলের সন্ধান পেয়েছি। তিনি ফরচুন পার্ল হোটেল অ্যান্ড ড্যান্স ক্লাব, হোটেল রয়েল ফরচুন, হোটেল ফরচুন গ্রান্ড ও হোটেল সিটি টাওয়ারের অন্যতম মালিক। এরমধ্যে তিনটি ফোর স্টার, একটি থ্রি স্টার মানের। তিনি বাংলাদেশে অর্ধশত দালালের মাধ্যমে কিশোরী অথবা ২০-২২ বছরের মেয়েদের উচ্চ বেতনে কাজ দেওয়ার কথা বলে প্রলুব্ধ করতেন।

‘দালালরা মেয়েদের প্রলুব্ধ করে নির্ধারিত দু’টি বিদেশি এয়ারলাইন্স এজন্সির মাধ্যমে দুবাই পাঠাতো। দুবাই যাওয়ার পরে তাদের প্রথমে ছোটখাটো কাজ দেওয়া হতো। এরপর জোরপূর্বক ড্যান্স ক্লাবে নাচতে বাধ্য করা হতো। আটকে রাখা হতো, খাবার দেওয়া হতো না, শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হতো। বৈদ্যুতিক শক পর্যন্ত দেওয়া হতো এবং দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হতো।

সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আর ভিকটিমদের অগ্রিম বেতন দেওয়ার কথা বলে প্রলুব্ধ করা হতো। দুবাই পর্যন্ত ভিকটিমদের যাওয়া, খাওয়া, থাকার সব খরচ দালালচক্র পরিশোধ করতো। অগ্রিম বেতন হিসেবে ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করতেন আজম। কিন্তু দুবাই ড্যান্সবারে কিংবা হোটেলে নেওয়ার পর তাদের আর বেতন দেওয়া হতো না।  

তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুবাই সরকার বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানিয়ে চক্রের গডফাদার আজমের পাসপোর্ট জব্দ করে দেশে ফেরত পাঠায়। দেশে ফেরার পর আজম আত্মগোপনে যান। বারবার নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেন। নতুন পাসপোর্ট করে সীমান্ত দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে পালানোরও চেষ্টা করেন। তবে তার আগেই দুই সহযোগীসহ সিআইডির চৌকস দল তাকে আটক করে।  

আজমের বিরুদ্ধে ছয়টি হত্যাসহ ১৫টি মামলার তথ্য পেয়েছে সিআইডি।  

মেয়েদের সঙ্গে কথা বলার ফোন রেকর্ডের অডিও ক্লিপ ইতোমধ্যে সিআইডি উদ্ধার করছে বলে জানিয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজম আরও স্বীকার করেছেন গত আট বছরে তিনি হাজারেরও বেশি তরুণীকে দুবাই পাচার করেছেন।  

এ বিষয়ে সিআইডি বাদী হয়ে গত ২ জুলাই রাজধানীর লালবাগ থানায় একটি মামলা করে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২০
কেআই/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।