ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ইউনাইটেড হাসপাতাল: ক্ষতিপূরণের রিট হাইকোর্টে উপস্থাপন করতে হবে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২০
ইউনাইটেড হাসপাতাল: ক্ষতিপূরণের রিট হাইকোর্টে উপস্থাপন করতে হবে ...

ঢাকা: অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আবেদন নিষ্পত্তি করেছেন আপিল বিভাগ।

আদালত বলেছেন, হাইকোর্টের যে কোনো রিট বেঞ্চে আবেদনগুলো উপস্থাপন করা যাবে।

সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ আইন অনুসারে আদেশ দিতে পারবেন।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এর ফলে ওই ক্ষতিপূরণ আদেশের আর কার্যকারিতা থাকছে না।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ভার্চ্যুয়াল আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করে আদেশ দেন।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন, ব্যারিস্টার অনীক আর হক, ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম, ব্যারিস্টার মুনতাসির আহমেদ ও রিটকারী নিয়াজ মুহাম্মদ মাহবুব। ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, তানজীব উল আলম ও মোস্তাফিজুর রহমান খান।

গত ১৫ জুলাই বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ ১৫ দিনের মধ্যে ৩০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের ওই আদেশ দিয়েছিলেন।

এর বিরুদ্ধে ইউনাইটেডের আবেদনের পর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন। সে অনুসারে আপিল বিভাগে শুনানি হয়।

পরে আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন জানান, টাকা দেওয়ার আদেশটি হয়েছিল ভার্চ্যুয়াল একক বেঞ্চে। আপিল বিভাগ বিবাদীদের (ইউনাইটেড হাসপাতাল) আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়ে আমাদের (রিট আবেদনকারীদের) বলেছেন, নিয়মিত বেঞ্চে রিট উপস্থাপন করতে। নিয়মিত বেঞ্চ যেকোনো আদেশ দিতে পারবেন। ফলে হাইকোর্টের আগের আদেশটির কার্যাকারিতা থাকছে না।

রিটকারী নিয়াজ মুহাম্মদ মাহবুব জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে তারা রিট হাইকোর্টে উপস্থাপন করবেন।

গত ৩০ মে রিট আবেদনটি দায়ের করেন ব্যারিস্টার নিয়াজ মুহাম্মদ মাহবুব। ১ জুন আরও একটি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রেদোয়ান আহমেদ রাজীব ও ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ। পরে গত ২ জুন বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে ১৪ জুনের মধ্যে আলাদা প্রতিবেদন চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। সে অনুসারে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনে ইউনাইটেড হাসপাতালের গাফিলতির কথা রয়েছে। রাজউক বলছে, করোনার জন্য আলাদা করে আইসেলেশন ইউনিট করতে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস বলছে, অগ্নিকাণ্ডের সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ নিলে রোগীদের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হতো।

এরপর আদালত ২৯ জুন সমঝোতা করতে আদেশ দিয়েছিলেন। তবে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগের মামলার তদন্তও দ্রুত সম্পন্ন করতে বলেছিলেন।

গত ২৮ মে ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ অব কমিউনিকেশনস অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ডা. সাগুফা আনোয়ারের পাঠানো বার্তায় নিহত পাঁচজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। নিহতদের মধ্যে চারজন পুরুষ ও একজন নারী। তারা হলেন— রিয়াজুল আলম (৪৫), খোদেজা বেগম (৭০), ভেরুন অ্যান্থনি পল (৭৪), মো. মনির হোসেন (৭৫) ও মো. মাহবুব (৫০)।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ২৮ মে বুধবার আনুমানিক রাত সাড়ে ৯টার দিকে মূল ভবনের বাইরে হাসপাতাল সংলগ্ন করোনা আইসোলেশন ইউনিটে সম্ভবত বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আগুন আইসোলেশন ইউনিটের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় আবহাওয়া খারাপ ছিল ও বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। বাতাসের তীব্রতায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেখানে ভর্তি পাঁচজন রোগীকে বাইরে বের করা সম্ভব হয়নি। তারা ভেতরেই মারা যান। আইসোলেশন ইউনিটের পাঁচজনই করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি ছিলেন।

এ ঘটনায় ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অপমৃত্যুর মামলা করলেও আগুনে নিহত ভেরুন অ্যান্থনি পলের পরিবার ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে’ মামলা করেন।

মামলায় ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), পরিচালক, করোনা ইউনিটে সে সময় কর্মরত ডাক্তার-নার্স, সেফটি ও সিকিউরিটি কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০২০
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।