ঢাকা: জাপান থেকে আসা সেই দুই মেয়ের জাপানি মা নাকানো এরিকো এবং বাবা বাংলাদেশি আমেরিকান ইমরান শরীফের মধ্যে সমঝোতার জন্য বুধবার বৈঠকে বসছেন তাদের আইনজীবীরা।
শুনানিতে দুই পক্ষের আইনজীবীদের এমন সিদ্ধান্ত দিয়ে মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করেন।
আদালতে নাকানোর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। ইমরান শরীফের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ও মোস্তাফিজুর রহমান খান।
এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর এক শুনানিতে উভয়পক্ষ সমঝোতায় আসবে বলে আশা করেছিলেন আদালত।
তবে সকালে এরিকোর আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ইমরান শরীফের আইনজীবীদের সঙ্গে দুই বার বসেছিলাম। আমাদের প্রস্তাব জানিয়েছিলাম। কিন্তু ওনাদের পক্ষ থেকে আর কিছু জানানো হয়নি।
তিনি বলেন, এরিকো চায় সবকিছু ভুলে স্বামী-সন্তান নিয়ে জাপানে নতুন জীবন শুরু করতে।
মঙ্গলবার শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, সমঝোতার জন্য আলোচনা হয়েছে। আরও আলোচনা দরকার।
পরে বুধবার সমঝোতার জন্য আবার বৈঠকের সময় নির্ধারণ করেন আইনজীবীরা।
এর আগে শিশির মনির জানিয়েছিলেন, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি নাগরিক ডা. নাকানো এরিকো (৪৬) ও বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইনানুসারে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। ১২ বছরের সংসারে তিনটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে।
তারা হলো—জেসমিন মালিকা (১১), লাইলা লিনা (১০) এবং সানিয়া হেনা (৭)। এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। তিন মেয়ে টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসজেআই) শিক্ষার্থী ছিল।
২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি ইমরান তার স্ত্রী এরিকোর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের (ডিভোর্স) আবেদন করেন। এরপর ২১ জানুয়ারি ইমরান স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু তাতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ তার প্রস্তাব নাকচ করে।
পরে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাস স্টপেজ থেকে ইমরান তাদের বড় দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। চারদিন পর ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন। এর মধ্যে ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক সাক্ষাতের আদেশ দেন। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।
এদিকে ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট নেন। পরে ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত এরিকোর অনুকূলে জেসমিন ও লিনার জিম্মা হস্তান্তরের আদেশ দেন। পরে ছোট মেয়ে সানিয়া হেনাকে মায়ের কাছে রেখে ১৮ জুলাই এরিকো শ্রীলংকা হয়ে বাংলাদেশে আসেন।
পরবর্তীতে তিনি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তারই ধারাবাহিকতায় আদালত গুলশানে একটি ভাড়া বাসায় সবাইকে আলাদা কক্ষে বসবাসের অনুমতি দেন। সেই দুই সন্তানের সঙ্গে একদিন করে সময় দেবেন মা-বাবা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১
ইএস/এমজেএফ