নড়াইল: নাম তার গৌর বিশ্বাস, স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয়নি কখনো। জীবনের একটা বিশেষ মুহূর্তে ক্ষণিকের ভুলে জড়িয়েছিলেন মাদকের জগতে।
গৌর বিশ্বাসের মতই সাক্ষ্য প্রমাণে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আদালত কর্তৃক বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পেয়েছে জিল্লুর রহমান, আবুল কালাম আজাদ, মুন্না বিশ্বাস, আল আমিন মোল্যা, আজাদ কাজী, মনু মোল্যা, শাওন শিকদার, হেদায়েত মোল্যা ও আতিকুর রহমান।
এরা সবাই নিজ নিজ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। মাদকের করাল গ্রাসে জীবনের দীর্ঘ সময় কেটেছে কোর্টের বারান্দায়, খরচ হয়েছে অর্থ। যখন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে, তখন তারা সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
তবে কারাগারে যেতে হয়নি গৌর বিশ্বাসকে। কারাগারে যেতে হয়নি জিল্লুর রহমান বা আজাদদেরও। দ্যা প্রবেশন অব অফেন্ডার অর্ডিন্যান্সের পাঁচ ধারায় আদালত তাদের দণ্ড স্থগিত রেখে জেলা প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে দেন কয়েকটি শর্তে। তারা তাদের নিজ নিজ বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে অন্যরকম সাজা ভোগ করেছেন। শর্ত ছিল, তারা মাদক বা বেআইনি কোনো কিছুতে জড়াবেন না, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবেন।
গৌর বিশ্বাস জীবনে কখনো লেখাপড়া করার সুযোগ পাননি। আদালত তাকে প্রবেশনের শর্ত হিসেবে লেখাপড়া শিখতে বলেন। এছাড়া মুন্না বিশ্বাস ও কিছু প্রবেশনারদের ঐতিহাসিক ৭ মার্চ নিয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণ রচিত কবিতা “স্বাধীনতা এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো” মুখস্ত করতে দেন। যে গৌর এক সময় মাদক নিত, সে এখন ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। গৌর ও জিল্লুরদের মাদকের হাত এখন শ্রমিকের হাত। সেই হাত দিয়েই কঠোর পরিশ্রম করে আজ তারা বেঁচে আছেন।
সাজাপ্রাপ্ত এ প্রবেশনাররা প্রবেশনের সব শর্ত পালন করায় প্রবেশন কর্মকর্তা তাদের মুক্তির ব্যাপারে সুপারিশ করেন। নড়াইলের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আমাতুল মোর্শেদা বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে প্রবেশন কর্মকর্তার রিপোর্ট ও সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তাদের চূড়ান্ত মুক্তির আদেশ দেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী আবুল কালাম আজাদ এ বিষয়টি নিশ্চিত বাংলানিউজকে বলেন, এ আদালত থেকে এর আগে ৬৬ আসামিকে প্রবেশনে পাঠানো হয়েছে, যাদের মধ্যে প্রবেশনের শর্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করায় ৪০ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
মুক্তির আদেশের পর তাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট উত্তম কুমার ঘোষ, অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর সঞ্জীব কুমার বসু ও জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা বাপ্পী কুমার সাহা। আদালত থেকে ফুল হাতে বের হওয়ার সময় প্রবেশনারদের অনেকেরই চোখে ছিল আনন্দ অশ্রু।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২১
এসআই