আদিল হোসাইন নোবেল, যে নামটাই যথেষ্ট তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের নিজস্ব ফ্যাশন ভূবনে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে আছেন, আমাদের প্রিয় মডেল নোবেল।
সেই নব্বই-এর শুরু থেকে দেশের মডেলিং সেক্টরে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন নোবেল। এখন পর্যন্ত তিনিই দেশের সবচেয়ে দামি এবং নামী মডেল। এতো দীর্ঘ সময় এই সাফল্যের পেছনের রহস্যের কথা জানতে চাইলে নোবেল বললেন, নিয়মের মধ্যে চলাই তার অভ্যাস। তিনি সবসময় নিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপন করেন। নিয়মিত জিম করা, ছুটির দিনে ছেলের সঙ্গে ফুটবল খেলা আর খাবারের বিষয়ে সচেতন থেকেই তিনি আজও এতো ফিট রয়েছেন।
নিজের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে নোবেলের চিন্তা খুব পরিস্কার। তিনি মনে করেন, যে কেউ চাইলেই আসলে নিজেকে মেনটেন করতে পারেন। আর সবার সেটাই করা উচিৎ। বিশেষ করে মিডিয়ায় যারা নিয়মিত কাজ করেন অনেকের মধ্যেই নিজের ফিটনেস ধরে রাখার তাগিদ থাকে না এবং কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যও থাকে না ক্যারিয়ার নিয়ে। এর ফলে, ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়, কিছুদিন ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থেকেও পরে আর ধরে রাখতে পারছেন না।
মিডিয়াতে এতো চাহিদা থাকার পরও তার উপস্থিতি বেশ কম এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নোবেল বলেন, আমি সব সময় চাই ভালো কাজগুলো করতে, কোনটা ভালো কাজ, সেটা আগে বুঝতে। সবদিক থেকে আমার মন মতো না হলে সেই কাজ করি না। অনেক সময় দেখা যায় একটা বিজ্ঞাপন করার আগে আমি দুই মাস ধরে সেই কাজের প্রস্তুতি নেই। অনেক বেশি কাজ করলে নিশ্চয় এতো ধৈর্য নিয়ে কাজ করা সম্ভব হতো না। আর আমি শুধুমাত্র ছুটির সঙ্গে মিলিয়ে শুটিং করি। এজন্য যে নির্মাতারা আমার সঙ্গে কাজ করেন তারা এ বিষয়গুলো মাথায় রাখেন।
বিজ্ঞাপনের বাইরেও মাঝেমধ্যে কিছু নাটকেও অভিনয় করে থাকেন। বিপাশা হায়াতের বিপরীতে প্রথম প্যাকেজ নাটক ‘প্রাচীর পেরিয়ে’ তে অভিনয় করেন নোবেল। কিন্তু নাটকের প্রচুর অফার পাওয়া সত্বেও সময় এবং আগ্রহ না থাকায় তিনি বিশেষ দিন উপলক্ষে কিছু নাটক ছাড়া অভিনয় করেন না।
দিনে দিনে বয়সও কিন্তু বেড়ে যাচ্ছে, বয়সের কারণে জনপ্রিয়তা অথবা কাজে কোনো বিরুপ প্রভাব পড়বে না বলেই বিশ্বাস নোবেলের। হলিউডের জনপ্রিয় তারকা এবং আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিকে তাকালেও দেখা যায় ৫০ ছুঁই ছুঁই করছে, তারপরও গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে তারাই জনপ্রিয়তার শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। আসলে আমাদের মানসিকতার কিছু পরিবর্তনের দিকেই গুরুত্ব দেন নোবেল।
দারুণ সফল এই ফ্যাশন আইকন কর্মজীবনেও একইভাবে সফল, তিনি বর্তমানে মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানিতে উচ্চপদে কাজ করছেন। পড়াশোনায়ও তার দৌঁড় বহুদূর...তিনি অস্ট্রেলিয়ার ভিক্তোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব মেলর্বোনে পড়াশোনা করেছেন। বিভিন্ন সময় তিনি পেশার প্রয়োজনে নানা দেশে উচ্চতর ট্রেনিং এবং কোর্স করেছেন।
অফিসের দায়িত্ব আর শোবিজের সফল নোবেল কিন্তু সবচেয়ে বেশি সফল তার পরিবারে। তিনি স্ত্রী সম্পার কাছে একজন দায়িত্ববান জীবনসঙ্গী। দুই সন্তান নামীরা আর যুনাইনের কাছে সবচেয়ে প্রিয় বাবা। সন্তান হিসেবেও নোবেল এগিয়ে রয়েছেন বাবা মাসহ একসঙ্গে আছেন, বাড়িতে ফিরে আগে খোঁজ করেন বাবা-মা খেয়েছেন কি না। অথবা কাজের ঝামেলায় আবার বাবার ওষুধ আনতে যেন ভুল না হয় সেদিকেও থাকে সজাগ দৃষ্টি। নোবেলের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তার পরিবার, কাজ করার অনুপ্রেরণাও তারা। তাইতো ছুটির দিনগুলোতে বাড়িতে থেকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে সময় কাটাতেই বেশি পছন্দ করেন তিনি। ছোট্ট যুনাইন আর তার বন্ধুদের সঙ্গেও ফুটবল নিয়ে মাঠে চলে যান।
একটু লম্বা ছুটি পেলেই স্ত্রী আর বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে দেশের বাইরে ঘুরতে যান নোবেল। ফ্যাশন সচেতন নোবেল সব সময়ই ভালো ব্র্যান্ডের প্রতি দুবর্ল। তাই যখনই দেশের বাইরে যান, পছন্দের পোশাক, ঘড়ি, পারফিউম নিয়ে আসেন। তবে পাঞ্জাবি আর ফরমাল শার্ট, ব্লেজার কিনতে হলে তিনি দেশেই ইনফিনিটি, রিচম্যান বা লুবনান থেকে নেন।
ছেলে মেয়ে মিডিয়ায় কাজ করতে চায় কিনা জানতে চাইলে নোবেল জানান,‘নামীরা মিডিয়ায় কাজ করতে আগ্রহী নয়, তবে যুনাইন হয়তো কাজ করতে পারে, ওর বেশ আগ্রহ আছে দেখছি। আসলে আমি আর সম্পা চাই ওরা ভালো মানুষ হয়ে গড়ে উঠুক ভালোভাবে পড়াশোনা করুক, তারপর নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা ওদের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চাই না। শুধু সঠিক গাইড লাইনটুকু দিতে পারলেই হয়’।
আজকের জনপ্রিয়, প্রিয় তারকা, ফ্যাশন আইকন নোবেল প্রথম ফ্যাশন হাউস টাওয়ার ফ্যাশনের, ফ্যাশন শো তে র্যাম্পের মাধ্যমে এই ভুবনে যাত্রা শুরু করেছিলেন। হাউসটির মডেল হিসেবেই তিনি প্রথম ফটোসেশন করেছেন বলেও বাংলানিউজকে বলেন নোবেল।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ নোবেলকে প্রতিষ্ঠানের মডেল হিসেবে নির্বাচন করার কারণ কী ছিল জানতে যোগাযোগ করি টাওয়ার ফ্যাশনের সত্তাধিকারী শওকত আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এটা দেখে খুব ভালো লাগে নোবেল মডেলিংয়ে আজও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। আমি সব সময় তার কাজ দেখি এবং সেই প্রথমবারের মতোই মুগ্ধ হই।
আমাদের প্রিয় নোবেল আরও এগিয়ে যাবেন..এটাই সবার প্রত্যাশা।