অবশেষে অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র পরিচালক রোমান পোলানস্কিকে মুক্তি দিয়েছে সুইস সরকার। কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছেন, শিশু যৌন নিপীড়নের বিচারের জন্য চলচ্চিত্র পরিচালক রোমান পোলানস্কিকে মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে না।
সুইস বিচারবিষয়ক মন্ত্রী এভেলাইন ভাইডমার-শ্লাম্প ১২ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে ৭৬ বছর বয়সী চলচ্চিত্রকার রোমান পোলানস্কির বিষয়ে সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, পোলানস্কি এরই মধ্যে যথেষ্ট কারাভোগ করেছেন। বিষয়টি বিবেচনা করে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
১৯৭৭ সালে একটি শিশুকে যৌন নিপীড়ন করার মামলায় যুক্তরাষ্ট্রে পোলানস্কির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার কয়েক মাস ধরেই সুইজারল্যান্ড সরকারের কাছে দাবি করছে ওই মামলায় বিচারের জন্য পোলানস্কিকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হোক। কিন্তু সুইস সরকার এ ব্যাপারে নিশ্চুপ ছিল।
১৯৭৭ সালে হলিউড হিলসে ১৩ বছরের বালিকা সামান্থা গিমারকে যৌন নির্যাতনের বিষয়ে পোলানস্কির বিরুদ্ধে অভিযোগটি দায়ের করেন তার এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু অভিনেতা জ্যাক নিকলসন। ওই সময় তিনি অপরাধ স্বীকার করেন। কিন্তু এর পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭৮ সালে অভিযোগটির তদন্ত শেষে তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি ব্রিটেনে পালিয়ে যান। সেই থেকে দীর্ঘ ৩২ বছর তিনি আমেরিকায় পা ফেলেননি।
ওই বছরই জন্মভূমি ফ্রান্সে চলে আসেন। সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু আজীবন সম্মাননা নিতে জুরিখে উপস্থিত হলে মার্কিন সরকারের অনুরোধে গ্রেফতারি পরোয়ানার ভিত্তিতে ২০০৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরে সুইস সরকার তাকে গ্রেফতার করে। পরে তাকে জামিন দেওয়া হয়। এরপর থেকেই তিনি সুইজারল্যান্ডে একটি কাঠের কুটিরে গৃহবন্দি ছিলেন।
পোলানস্কিকে গ্রেফতারের পর সুইস মিডিয়া সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে। তার পক্ষে কথা বলতে থাকেন পৃথিবী বিখ্যাত চলচ্চিত্র কর্মীরা। এছাড়া গ্রেফতার হওয়ার পর তার পক্ষে কথা বলেন ফ্রান্সের সংস্কৃতিমন্ত্রী ফ্রেদারিক মিতেরাঁ। ফলে তাকে কারাগার থেকে স্থানান্তর করে সুইজারল্যান্ডের পাহাড়ি এলাকায় ঐতিহ্যবাহী কাঠের কুটিরে গৃহবন্দি রাখা হয়। সবশেষে সরকারের বিবেচনায় তিনি মুক্তি পেলেন।
পোলানস্কি একাধারে চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা ও চিত্রনাট্যকার। তার বিখ্যাত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘রোসেমারিজ বেবি’, ‘টিস’, ‘চায়না টাউন’ ও ‘ দ্য পিয়ানিস্ট’। এই চলচ্চিত্রগুলোতে তিনি অস্কার জেতেন। দ্য পিয়ানিস্ট চলচ্চিত্র ২০০২ সালে তাকে এনে দেয় সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা ও সেরা চিত্রনাট্যের অস্কার।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৩০৫, জুলাই ১৩, ২০১০