ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

আমি আমার ধৈর্যের ফসল পেয়ে গেছি : শাকিব খান

বিপুল হাসান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১০

মাসুদ রানা। কাজী আনোয়ার হোসেনের থ্রিলার সিরিজের অদম্য সাহসী সেই যুবক।

এগিয়ে চলার পথে কোনো বাধাই তাকে দমাতে পারে না। আমাদের মূলধারার চলচ্চিত্রের শীর্ষনায়ক শাকিব খানের আসল নামও মাসুদ রানা। অনেক বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে তাকে আজকের অবস্থানে আসতে হয়েছে। চলার পথে বারবার তাকে নানা ফিল্মি-পলেটিক্সের শিকার হতে হয়েছে। তবু তিনি রয়ে গেছেন অদম্য। ঢালিউডের নির্মাতাদের জন্য সৌভাগ্যের বরপুত্র হয়ে ওঠা এই নায়কের মুখোমুখি এবার বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম।

শাকিব খানের ছবি মানেই সুপার হিট। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য?

এভাবে বিষয়টা দেখলে ঠিক হবে না। আমি ছাড়াও ইন্ডাস্ট্রিতে অন্যরা আছেন। রিয়াজ আছেন, ফেরদৌস আছেন। নতুন নতুন ছেলেরা আসছেন। তারাও কমবেশি ভালো করছেন। আসলে একটা কাসে অনেক ভালো ছাত্র থাকতেই পারে। কিন্তু তাদের মধ্যে সবাই তো একনম্বর হতে পারে না। নম্বর ওয়ান হয় শুধু একজন। তার মানে এই নয় যে, অন্যরা ভালো ছাত্র না। আমরা যদি আমাদের পাশের দেশ ভারতের ইন্ডাস্ট্রির দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাবো সেখানে এক যুগ পর একজন করে সুপারস্টার এসেছেন। যেমন দিলীপ কুমার। তার সময়ে অন্য নায়করাও ছিলেন, অন্যদের ছবিও দর্শক দেখেছেন। তবে প্রমিনেন্ট ছিলেন দিলীপ কুমারই। তার পর মুম্বাইয়ে সুপারস্টার হয়ে আসেন অমিতাভ বচ্চন। অন্যরাও ছিলেন, তবে বিগ হিরো ছিলেন একজন অমিতাভ বচ্চন। তার পরের জেনারেশনে সুপারস্টার হয়ে এলেন শাহরুখ খান। তার মানে এই নয় যে, আমির খান বা সালমান খানের ছবি দর্শক দেখছেন না। তাদের ছবিও সুপারহিট ব্যবসা করছে। আসল কথা হলো একনম্বর সবাই হতে পারেন না।   এক নম্বর হতে পারেন শুধু একজনই। আল্লাহপাক মেহেরবানি করে এখানে বর্তমানে আমাকে এক নম্বর পজিশনটা দান করেছেন। এই পজিশনের মর্যাদা ও দায়িত্ব অনেক বেশি। সেটা রক্ষা করেই আমি কাজ করে যেতে চাই।

ধীরে ধীরে আপনি হয়ে উঠেছেন দেশের শীর্র্ষ নায়ক, এই পর্যায়ে উঠে আসতে আপনাকে কী কী বাধা পেরিয়ে আসতে হয়েছে?

দেখেন যদি লক্ষ্য থাকে স্থির আর যদি আল্লাহপাকের সহায়তা থাকে তাহলে কোনো বাধাই কাউকে দমিয়ে রাখতে পারে না। চলচ্চিত্রে পা রাখার পর থেকে সবসময় আমি ভাবতাম, আমাকে ভালো কিছু করতে হবে। আমাকে বহুদূর যেতে হবে। লক্ষ্যের প্রতি সৎ থেকেই আমি কাজ করে গেছি। আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্র্রিতে নানারকম নোংরা ফিল্মি পলিটিক্স আছে, আমি বহুবার এরকম পলিটিক্সের শিকার হয়েছি। তবে হাসি মুখে সব মেনে নিয়ে মুখ বুজে কাজ করে গেছি। নিজের ইমপ্রুভমেন্টের প্রতিই আমি বেশি গুরুত্ব দিয়ে গেছি। প্রডাকশন হাউস ছোট না বড়, পরিচালক নতুন নাকি পুরনো, সেদিকে আমি তাকিয়েও দেখিনি। আমি দেখেছি ছবির গল্পটা ভালো কিনা, আমার জন্য সিলেক্ট করা চরিত্রটা ভালো কিনা! ছবিটি ভালো করার জন্য, আমার চরিত্রটি ভালো করার জন্য শ্রম দিতে আমি কার্পণ্য করিনি। কাজের প্রতি মনোযোগই আজকে আমাকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। শুরুর দিকে কোনো ভালো প্রডাকশন হাউসের ছায়া আমি পাইনি, আমি যেন ভালো হাউসে যেতে না পারি, সেদিকে নজর রেখেছেন কেউ কেউ। আমার আচার-আচরণ নিয়ে আজেবাজে কথা ছড়িয়েছেন সে সময় শীর্ষে থাকা নায়ক-নায়িকাদের অনেকেই। তবে কারো প্রতিই আমার অভিযোগ নেই। আমি আমার ধৈর্যের ফসল পেয়ে গেছি।

শোনা যায় আগামী তিন বছর আপনার কোনো শিডিউল খালি নেই। আপনি একটা ছবিতে কাজ করার জন্য সম্মানী নিচ্ছেন প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। এসব কথার সত্যতা কতোটুকু?

খুব একটা ভুল শোনেননি। আগামী তিন বছর সত্যিই আমার কোনো শিডিউল খালি নেই। শুনলে হয়তো অবাক হবেন, প্রতিদিন ডাবল শিফট আমাকে কাজ করতে হচ্ছে। সপ্তাহের ছুটির দিনও আমি কাজ করি। আগামী তিন বছর আমাকে এভাবেই কাজ করে যেতে হবে। ২০১৪ বা ২০১৫ সালের শিডিউল কোনো কোনো পরিচালক আমার কাছে চাইছেন। বাঁচি কি মরি, সেটা ভেবে আমি তাদের ফিরিয়ে দিতে চাই। তাদের মুখ অন্ধকার হয়ে যায়। আমার তখন খারাপ লাগে। অনিশ্চয়তার ভিতরে থেকেও আমাকে সম্মতি দিতে হয়। আর সম্মানী আমি যা নিচ্ছি, তাকে ন্যায্যই মনে করি। আমি কাজ করায় যদি একটা ছবি দুই কোটি টাকা লাভের মুখ দেখে, সেই অনুপাতে আমার সম্মানী তো আরো বেশি হওয়া উচিত বলে মনে করি।

সুন্দরী মেয়েদের প্রতি আপনার বিশেষ দুর্বলতার কথা শোনা যায়, সুন্দরীদের ছবিতে নেওয়ার জন্য আপনি অনেক নির্মাতার কাছে প্রায়ই সুপারিশ করে থাকেন...

কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। তিন্নি, মিম, শখের মতো গ্ল্যামার গার্লরা আমাদের চলচ্চিত্রে এলে শিল্পীসংকট কমে যাবে। আমাদের চলচ্চিত্র হয়ে উঠবে আরো ঝলমলে। চলচ্চিত্রের মঙ্গলের কথা ভেবেই আমি  ওদের মতো গ্ল্যামার আর্টিস্টকে আমার বিপরীতে কাস্ট করার জন্য নির্মাতা-প্রযোজকদের অনুরোধ জানিয়েছি কেবল। এখানে আমার কোন অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না।

আপনার পার্সোনাল লাইফ সম্পর্কে জানতে চাই।

সত্যি বলতে কি, বর্তমানে আমার পার্সোনাল লাইফ বলে কিছু নেই। একট বাসা আছে। বাসায় বাবা-মা আছেন। একমাত্র সন্তান হয়েও আমি তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় পাই খুব কম। বাসার সঙ্গে আমার সম্পর্কের দৌড় খাওয়ার টেবিল আর বিছানা পর্যন্ত। সকাল ৭টা/সাড়ে ৭টার মধ্যে বিছানা ছেড়ে ওঠে শুটিংয়ের জন্য গোছগাছ করে গাড়িতে উঠে বসি। বেশির ভাগ দিন বাসায় নাশতা করতে পারি না। গাড়িতে বসেই নাশতা শেষ করতে হয়। সারাদিন চলে ডে-শিফট শুটিং। দুপুর লাঞ্চ করার সময় পাই না। বিকেল ৫টার দিকে ডে-শিফট শেষ হলে লাঞ্চ করতে বসি। বিকেল ৬টা থেকে শুরু হয় নাইট শিফট। শেষ হতে হতে মধ্যরাত। তারপর কান্ত শরীরে বাসায় ফিরে সটান হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ি। কতোদিন বাবা-মার সঙ্গে দাওয়াত খেতে কোনো আত্মীয়ের বাসায় যাওয়া হয় না। বন্ধুদের সঙ্গে কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয় না। যন্ত্রের মতো হয়ে গেছি ভাই। শুক্রবার তো বটেই, ঈদের দিনেও আমাকে কাজ করতে হয়। দেশে তো ঈদের মধ্যে কাজ করা সম্ভব না। তাই প্রডিউসাররা বুদ্ধি করে ব্যাংকক বা সিঙ্গাপুরে নিয়ে গিয়ে শুটিং করায়। গত দু বছর ধরে ঈদ কী জিনিস, আমি জানি না।

বিয়ে করছেন কবে? প্রেম করে নাকি পারিবারিক পছন্দে বিয়ে করবেন?

বিয়ের কথা ভাবার ফুরসতই নেই, বিয়ে করবো কিভাবে? ২০১৫ সালের আগে যদি বিয়ে করি তাহলে বিয়ের দিনও আমাকে শুটিং করতে হবে। এমন পাত্রের কপালে পাত্রী জুটবে কীভাবে? আমার ভাগ্যে কী ধরনের বিয়ে আছে আল্লাহ-পাকই জানেন।

বাংলাদেশের চলতি সময়ের প্রায় সব নায়িকার সঙ্গে কাজ করেছেন, তাদের সম্পর্কে কিছু বলুন।

বিপদে ফেলে দিলেন। সবাই আমার কো-আর্টিস্ট। কার সম্পর্কে কী বলে পরে জটিল পরিস্থিতিতে গিয়ে পড়ি। আসলে নায়িকাদের একেকজন একেকরকম। একটা ফুলের বাগানে তো অনেক রকম ফুল থাকে। গোলাপ, বেলি, গন্ধরাজ, ডালিয়া, হাস্নুহেনা। একেকটা ফুলের থাকে একেকরকম বৈশিষ্ট্য। আমার বিপরীতে কাজ করা নায়িকারাও তেমনি, কারো সঙ্গে কারো তুলনা হয় না। প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ জায়গায় উজ্জ্বল। মৌসুমী অনেক বড় মাপের অভিনেত্রী। তার ফেসটা যেন সারাক্ষণ কথা বলে। অপু দেখতে কিউট। দিন দিন অভিনয়ে তার উত্তরণ হচ্ছে। আমার সঙ্গে তার জুটিটা দর্শক খুব ভালোভাবে গ্রহণ করছে। শাবনূরও অসাধারণ একট্রেস। তার সঙ্গে আমার অনেক সুপার-ডুপার হিট ছবি আছে। অনেকেই বলাবলি করেন, শাকিবের পাশে শাবনূর যখন দাঁড়ায় তখন এই জুটি ঘিরে আলাদা পাওয়ার তৈরি হয়। পূর্ণিমা ইজ লাইক এ ডল। তাকে দেখলে মনে হয়, শোকেসেই পূর্ণিমাকে বেশি মানাত। লাক্সসুন্দরী মিম আর নতুন প্রজন্মের মডেল শখের সঙ্গে একটা করে ছবি আমি করেছি। দুজনের মধ্যেই আছে দারুণ সম্ভাবনা। তবে তাদের কাজ করতে হবে মাথা ঠান্ডা রেখে। তিন্নি সম্পর্কে আমি অনেক আগেই বলেছি, এই মেয়েটা ফিল্মে এলে ভালো করবে। দেরিতে হলেও সে বড়পর্দায় এসেছে, আমি আশা করি সে ভালো করবে।

নতুন প্রজন্মের অভিনেতা ইমন, নিরব, সজল, আরেফীন শুভ ও আরো অনেকে চলচ্চিত্রে কাজ করছেন। তাদের সম্ভাবনা কতোটুকু?

ওদের প্রত্যেকের মাঝেই আছে সম্ভাবনা। তাদের অগ্রসর হতে হবে মাথা ঠান্ডা রেখে, চিন্তা-ভাবনা করে। অনেক ধৈর্য ধরতে হবে। মনে রাখতে হবে, ফিল্মস্টার আর টিভিস্টার এককথা নয়। ফিল্মস্টারের কমার্শিয়াল ভ্যালুর কথা মাথায় রাখতে হবে। কারণ লোকজন পয়সা দিয়ে টিকিট কেটে তাকে দেখতে আসে। তাই তাকে প্রকাশ্যে সেভাবেই চলতে হবে।

আপনি কী মনে করেন, ফিল্মস্টারদের টিভিমিডিয়ায় কাজ করা ঠিক না?
 
ফিল্মস্টাররা টিভিমিডিয়ায় কাজ করতেই পারেন। তবে কাজটা হতে হবে বিশেষ কিছু। বছরে বড়জোর একটা কি দুটা। কিন্তু ঘন ঘন টিভিনাটকে কাজ করলে ফিল্মস্টারদের ক্যারিয়ারে বিরূপ প্রভাব পড়তেই পারে। এখানেও কমার্শিয়াল ভ্যালুর বিষয়টি চলে আসে।

শাহরুখ বা টম ক্রুজের মতো ফিল্ম আইকনদের বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে কাজ করতে দেখা যায়? বাংলাদেশের নম্বর ওয়ান হিরো হয়েও আপনাকে মডেলিংয়ে এখন পর্যন্ত দেখ গেল না কেনো?

আমি তো মডেলিংয়ে কাজ করতেই চাই। কিন্তু আমার কাছে মডেল হওয়ার প্রস্তাব নিয়ে এখন পর্যন্ত কেউ আসেনি। মনে হয় ফিল্মে আমার কাজের সম্মানী অনেক বেশি বলে কোনো বিজ্ঞাপন নির্মাতা আমাকে মডেল করার কথা ভাবেন না।

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাই।

যতোদিন পারি অভিনয়টা চালিয়ে যাবো। ভবিষ্যতে চলচ্চিত্র প্রযোজনায় আসার ইচ্ছে আছে। এছাড়া আপাতত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করার সময় পাচ্ছি না, সত্যি বলছি।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৬০৫, জুলাই ২৫, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।