বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের ঐতিহ্যকে দেশ-বিদেশের বাঙালির কাছে তুলে ধরা এবং বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ৫৫ বছর পদার্পণ উপলক্ষে চ্যানেল আইর আয়োজনে ১৯ ডিসেম্বর রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েছে তৃতীয় চলচ্চিত্র মেলা। এবারের চলচ্চিত্রমেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল প্রসাধনী প্রতিষ্ঠান কিউট।
উদ্বোধনী পর্ব
জাতীয় সংসদের স্পিকার এডভোকেট আবদুল হামিদ সকাল সাড়ে ১১টায় চলচ্চিত্র মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্যসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন এবং চলচ্চিত্র অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
উদ্বোধন ঘোষণার পর পরিবেশিত হয় শেখ সাদী খানের মনোমুগ্ধকর কম্পোজিশনের সঙ্গে লিখন-নাদিয়ার নৃত্য। এরপর স্বাগত বক্তব্য নিয়ে মঞ্চে আসেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর এবং পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ। চলচ্চিত্র মেলায় সম্পৃক্ত হতে পারায় পৃষ্ঠপোষক প্রসাধনী প্রতিষ্ঠান কিউটের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহতাবউদ্দিন আহমেদ আনন্দ প্রকাশ করেন। এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমতাজ আলা শাকুর কথা বলেন আমাদের চলচ্চিত্রের অতিত-বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে। নায়করাজ রাজ্জাক বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সোনালি সময়ের স্মৃতিচারণ করেন। তিনি সমালোচনা করেন ভারতীয় শিল্পীদের নিয়ে বিজয়ের মাসে আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠান আয়োজন করাকে।
সম্মাননা প্রদান
চলচ্চিত্র মেলার মঞ্চে প্রথম অংশ উপস্থাপনায় ছিলেন জনপ্রিয় নায়ক রিয়াজ। উদ্বোধনী আলোচনা শেষে রিয়াজ মঞ্চে আমন্ত্রণ জানান চিত্রনায়ক সোহেল রানা, উজ্জ্বল, আলমগীর ও ফারুককে। মেলায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সোনালি যুগের এই চার নায়ককে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। তাদের শুভেচ্ছা জানাতে এ সময় মঞ্চে আসেন বরেণ্য চিত্রনায়ক নায়করাজ রাজ্জাক, জাবেদ ও কাফি খান। চার নায়কের হাতে সম্মাননা তুলে দেন জাতীয় সংসদের স্পিকার আবদুল হামিদ।
এবারের চলচ্চিত্র মেলায় ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ছবির আলেয়াসহ ঢাকার ছয় শতাধিক চলচ্চিত্রে জীবনঘনিষ্ঠ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বরেণ্য অভিনেত্রী আনোয়ারাকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। এ সময় ভিডিও ফুটেজে তুলে ধরা হয় তার জীবনের নানা দিক। স্পিকারের হাত থেকে পুরস্কার ও সম্মাননা গ্রহণ করে তিনি বলেন, চ্যানেল আইয়ের দেওয়া এই সম্মান আমি মৃত্যু পর্যন্ত স্মরণ রাখব। তিনি আরও বলেন, আমি জানতাম না আমার অভিনীত ছবি ‘আগন্তক’-এর নির্মাতা ছিলেন ফরিদুর রেজা সাগরের বাবা প্রয়াত ফজলুল হক। ৪০ বছর পরে জানতে পারলাম। মনে পড়ছে সেই সময়কার স্মৃতিকথা। সম্মাননার পাশাপাশি শিল্পীকে এককালীন দেওয়া হয় এক লাখ টাকা।
মেলার সমাপনী পর্বের প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। এ সময় চলচ্চিত্রের গানে অসামান্য অবদানের জন্য ফেরদৌসী রহমান ও সৈয়দ আবদুল হাদীকে দেওয়া হয় বিশেষ সম্মাননা। তবে সৈয়দ আবদুল হাদী অনুষ্ঠানে ছিলেন না, তার পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন কন্যা তনিমা হাদী।
মেলার স্টল ও অন্যান্য
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের লবিতে ঢুকতেই দেখা যায় বেশ কয়েকটি স্টল। ঘুরে ঘুরে স্টল দেখছেন চলচ্চিত্র নায়িকা মৌসুমী, তামান্না এবং আরো কয়েকজন। তারা দেখছেন স্টল আর তাদের দেখছেন সাধারণ দর্শক। খাবার স্টলের পর আছে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের যত ছবি তার তালিকা ও বর্ণনা নিয়ে একটি স্টল। মিডিয়া কর্নার নামে একটি স্টলে আছে চলচ্চিত্র সম্পর্কিত বই। আছে চলচ্চিত্র আর্কাইভের একটি স্টল, যেখানে আছে বই, ম্যাগাজিন ও চলচ্চিত্র ইতিহাস সম্পর্কিত নানা তথ্য। চলচ্চিত্রের প্রথম দিকের ক্যামেরা নিয়ে চিত্রগ্রাহকরা আয়োজন করেছেন ক্যামেরা প্রদর্শনী। শিল্পীরা স্টল দেখার ফাঁকে ফাঁকে এখানে দাঁড়িয়েই দিচ্ছেন স্মৃতিচারণমূলক আড্ডা । ভক্তরা আছেন তাদের পাশে পাশে । মাঝে মাঝে তারা ছবি তুলছেন প্রিয় শিল্পীর বা সংগ্রহ করছেন প্রিয় শিল্পীর অটোগ্রাফ। স্টল এলাকায় ঘুরলে সত্যিই মনে হয় এটা একটি চলচ্চিত্র মেলা। চলচ্চিত্র মেলায় দিনের বিভিন্ন সময় যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কলাকুশলী, অভিনেতা-অভিনেত্রী, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব, সঙ্গীত তারকাসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দর্শক। এছাড়া মেলায় ছিল প্রয়াত শিল্পী-কুশলীদের স্থিরচিত্র প্রদর্শনী।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
মেলায় বিভিন্ন সময় স্টেজ পারফর্ম করেন চিত্রনায়িকা অঞ্জনা, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, মৌসুমী, ওমর সানী, মিশা সওদাগর, কাবিলা, সুব্রত, দীঘি, অমিত হাসান, শিল্পী, রোমানা, শিমলা, সম্রাট, নিপুণ, সজল, ইমন, নীরব, তমা মির্জা, নিলয়, মিমো, রোজ প্রমুখ। সঙ্গীত পরিবেশন করেন সুবীর নন্দী, এন্ড্রু কিশোর, রফিকুল আলম, কনকচাঁপা, মনির খান, রিজিয়া পারভীন, আলম আরা মিনু, আগুন, আইয়ুব বচ্চু, সিঁথি প্রমুখ।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৮৪৫, ডিসেম্বর ১৯, ২০১০