বাবা ও ভাইয়ের শাসন থেকে নিরাপত্তার জন্যে পুলিশের সাহায্য চাইতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হ্যারি পটারের বাঙালি অভিনেত্রী আফসান আজাদ। তার নিরাপত্তার অনুরোধকে মামলা হিসেবে আদালতে প্রেরণ করায় ২৮ বছর বয়সী ভাই আশরাফ আজাদ এখন জেলদন্ডের মুখোমুখি।
আফসানকে হত্যার হুমকি ও মারধরের অভিযোগে পুলিশ আদালতে মামলা প্রেরণ করলেও প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০ ডিসেম্বর সোমবার আদালত হ্যারি পটার অভিনেত্রীর বাবা ৫৪ বছর বয়সী আব্দুল আজাদকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন। তবে আব্দুল আজাদকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে এ ধরনের আর কোনও অভিযোগ যেন না ওঠে।
২০ ডিসেম্বর সোমবার ব্রিটেনের ম্যানচেস্টার ক্রাউন কোর্টে বোনকে শাসনের কথা স্বীকার করায় আদালত আশরাফ আজাদকে তিরস্কার করে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি করেন। শাস্তি-পূর্ববর্তী আদালত কার্যক্রমের রিপোর্ট অনুযায়ী ধারণা করা হচ্ছে, শুনানিতে আশরাফ আজাদকে দোষী সাব্যস্ত করা হতে পারে। আর তাই যদি হয় তবে জেলদন্ড ভোগ করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না হ্যারি পটার অভিনেত্রীর ভাইয়ের।
বিচারক রজার টমাস কিউসি বলেন, হ্যারি পটার অভিনেত্রীর ভাইয়ের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের চূড়ান্ত পরিণতি কী হবে তা আদালত এখনও বলতে পারছে না, তবে যে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয়েছে তা ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এতে জেলদন্ডের বিধান রয়েছে। আদালত আফসানের বাবা আব্দুল আজাদকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, মেয়ের প্রতি তার ভবিষ্যৎ আচরণ সম্পর্কে অবশ্যই তাকে সতর্ক থাকতে হবে। নিরাপত্তার অনুরোধ যে এভাবে ভাইকে জেলদন্ডের মুখোমুখি করবে তা ভাবতে পারেননি হ্যারি পাটার অভিনেত্রী আফসান আজাদ। আর তাই আদালতে দাঁড়িয়ে নিজের অভিযোগকে অনেকটা ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন তিনি।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, চলতি বছরের ২১ মে আফসান তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে টেলিফোনে কথা বলার সময় ভাই আশরাফ আজাদ তা শুনে ফেলেন। আর এতেই বাঁধে যত বিপত্তি। একটি হিন্দু ছেলের সাথে বোনের সম্পর্কের কথা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আশরাফ এবং রাগান্বিত হয়ে বোন আফসানকে তিরস্কার করতে থাকেন। এক পর্যায়ে আফসানের গায়েও হাত তোলেন আশরাফ। আশরাফ এ সময় বাবা আব্দুল আজাদকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলেন, তোমার মেয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। একটি হিন্দু ছেলের সাথে সে সম্পর্ক করেছে। এখন মেয়েকে তুমি কী করবে তা ভেবে দেখো।
বাবা ও ভাইয়ের চিৎকার-চেঁচামেচিতে ভয় পেয়ে যান আফসান এবং দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে নিরাপত্তার আবেদন করেন। পুলিশের কাছে নিরাপত্তার আবেদনের সময় আফসান উল্লেখ করেন, ভাইয়ের চিৎকার-চেঁচামেচিতে বাবা আব্দুল আজাদও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এ সময় তিনি বলেন, প্রয়োজনে মেয়েকে মেরে ফেলব, তবু হিন্দু ছেলের হাতে তুলে দেব না। কিন্তু তার নিরাপত্তার আবেদন হত্যা হুমকির অভিযোগ হিসেবে আদালতে উপস্থাপন হওয়ায় ভয় পেয়ে যান হ্যারি পটার অভিনেত্রী এবং বাবা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ আনতে অস্বীকার করেন। পুলিশের কাছে দেওয়া তার জবানবন্দি অস্বীকার করে আফসান আদালতকে বলেন, আমি আমার বাবা ও ভাইকে প্রচন্ড ভালোবাসি। আমি তাদের বিরুদ্ধে হত্যার হুমকির কোনও অভিযোগ আনিনি। তিনি বলেন, আমি নিজে ভালো বাংলা বলতে পারি না এবং বুঝিও না। একটি মুসলমান পরিবারের ধর্মীয় রীতিনীতি ও ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে রাগের মাথায় বাবা ও ভাই আমাকে শাসন করেছেন।
হ্যারি পটার অভিনেত্রী বলেন, যেহেতু বাংলা বুঝি না, সেহেতু বাবার ‘হিন্দু ছেলের সাথে যেতে হলে আমার লাশের উপর দিয়ে যেতে হবে’ এই উক্তিকে হত্যার হুমকি মনে করি এবং বাংলা উচ্চারণে তাদের রাগান্বিত চিৎকার-চেঁচামেচিতে ভয় পেয়ে আমি পুলিশের কাছে গিয়ে নিরাপত্তা চেয়েছি।
আফসানের বাবা আদালতকে জানান, আমি মেয়েকে হত্যার কোনও হুমকি দেইনি। আমাদের ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার কারণে একটি হিন্দু ছেলের সাথে তাঁর সম্পর্কের বিরোধিতা করেছি মাত্র। রাগান্বিত হয়ে আমার ছেলে আশরাফ তার গায়ে হাত তুললে আমি তাতে বাধা দিই এবং পরে আফসানকে ব্যথা নিরোধক ওষুধও খেতে দিই।
আফসান আজাদ হ্যারি পটার-৪ চলচ্চিত্রে নায়ক হ্যারি পটারের সহপাঠী পাদমা পাতিলের চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। হ্যারি পটারে অভিনয় করায় তিনি ব্রিটেনের তরুণ প্রজন্মের কাছে অনেকটা সেলিব্রিটি হিসেবে আভির্ভূত হন। বাঙালি বংশোদ্ভূত অভিনেত্রী আফসান আজাদের বাবা-মার দেশের বাড়ি বাংলাদেশের সিলেটে। আফসান ম্যানচেস্টারের রাসহোল্ম এলাকার জবেরিয়ান কলেজে এএস লেবেলে পড়াশোনা করছেন। ২২ বছর বয়সী আফসান আজাদ ২০০৫ সালে প্রথম ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্যা গবলেট অব ফায়ার’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান। ওই সময়কে তিনি তার জীবনের সবচেয়ে বড় অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সময় হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।
বাংলাদেশ সময় ২৩০০, ডিসেম্বর ২২, ২০১০