‘হুমায়ুন ফরীদি এমন একজন মানুষ, যিনি কখনো নিয়ম মানেন নি। কাজেই তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানটিও হবে অনিয়মে ভরপুর।
আনুষ্ঠানিকতা শুরুর নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই ছায়ানট মিলনায়তন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় শুভানুধ্যায়ীদের ভিড়ে। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, মিডিয়ার অনেক তারকাকেও পুরো অনুষ্ঠানে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। অনুষ্ঠান শুরুর খানিকক্ষণের মধ্যে উপস্থাপনায় আফজাল হোসেনের পাশে এসে দাঁড়ান ফরীদির আরেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু লেখক ইমদাদুল হক মিলন। ফরীদির টিভিনাটকে হাতেখড়ি হয়েছিল নাট্যকার-নির্মাতা আতিকুল হক চৌধুরীর মাধ্যমে। হুমায়ুন ফরীদিকে জন্মদিনের উত্তরীয় পরিয়ে দেন তিনি।
এ সময় হুমায়ুন ফরীদি দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমাদের সবার প্রিয় মুক্তিযোদ্ধা ও পপশিল্পী আজম খান স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। আমার এই জন্মদিনটি তার প্রতি উৎসর্গ করছি। আমাদের সবার প্রার্থনা তিনি যেন সুস্থ হয়ে সবার মাঝে ফিরে আসেন’।
ফরীদি সম্পর্কে বলতে গিয়ে আতিকুল হক চৌধুরী বললেন,‘আফজাল হোসেন আর সুবর্ণা মোস্তাফা একদিন বিটিভিতে এলেবেলে টাইপের এক তরুণকে (ফরীদি) আমার কাছে নিয়ে আসেন। প্রথমবার কথা বলার পর আমার মনে হয়েছে, ইন্টারেস্টিং ক্যারেকটার। ’
ফরীদি সম্পর্কে বলার জন্য ডাকা হয় বরেণ্য নাট্যজন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, মামুনুর রশীদ, তারিক আনাম খান ও অভিনেত্রী তমালিকা কর্মকারকে। নাসির উদ্দিন ইউসুফ ফরীদিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘আজকে আমি ভীষণ আনন্দিত। কারণ আজকে ফরীদিকে এই প্রথমবারের মতো বিব্রত আর অসহায় দেখতে পাচ্ছি। ’
মামুনুর রশীদ বললেন, ‘৭৫-এর মাঝামাঝিতে উদভ্রান্ত এক তরুণের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। দু’একটা কথাবার্তা বলার পর তরুণটি আমার কাছে জানতে চেয়েছিল, জীবন সম্পর্কে আপনার ধারণা কী ? আজ আমি ফরীদিকে সেই প্রশ্নটি করতে চাই। জবুথবু হয়ে বসে থাকা হুমায়ূন ফরীদি মাইক্রফোন হাতে নিয়ে উত্তর দিলেন, জীবন সম্পর্কে ধারণা ক্রমাগত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া। ’
তারিক আনাম খান ফরীদির বর্তমান জীবনের নিঃসঙ্গতার দিকে দৃষ্টিপাত করে বলেন, ‘কে বলেছে ফরীদি একা হয়ে গেছেন! ফরীদিকে অভিনন্দন জানাতে ভালোবাসা নিয়ে আজ এতো মানুষ এখানে এসেছে। এতে প্রমাণ হয় হাজার হাজার মানুষ ফরীদির সঙ্গে আছেন। ’
তমালিকা কর্মকার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘ফরীদি ভাই জানতেন আমি ছবি দেখতে খুব ভালোবাসি। ছবি দেখার জন্য তিনি আমাকে ভিসিআর কিনে উপহার দিয়েছিলেন। ’
উপস্থাপক আফজাল হোসেন অতিথিদের অনিয়মের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে অনুষ্ঠানের মাঝ পর্যায়ে মানপত্র পাঠের জন্য মঞ্চে ডাকেন অভিনেত্রী ও নির্মাতা আফসানা মিমিকে। মানপত্র পাঠের পর কাটা হয় বিশাল আকৃতির কেক। এসময় পুরো মিলনায়তনে রব ওঠে, ‘হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ। ’
দীর্ঘদিনের বন্ধু আফজাল হোসেন তার পক্ষ থেকে জন্মদিনের উপহার হিসেবে হুমায়ুন ফরীদির হাতে তুলে দেন তার সম্পাদনায় প্রকাশিত একটি বই ‘হুমায়ুন ফরীদির জন্মোৎসব বালাইষাট’। বইটিতে ফরীদিকে নিয়ে লিখেছেন সৈয়দ শামসুল হক, হুমায়ূন আহমেদ, আতিকুল হক চৌধুরী, নির্মলেন্দু গুণ, মামুনুর রশীদ, আলী যাকের, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ফেরদৌসী মজুমদার, আফজাল হোসেন প্রমুখ। আনুষ্ঠানিকভাবে হুমায়ুন ফরীদি বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন। এ সময় অপর উপস্থাপক ইমদাদুল হক মিলন ফরীদির মনের অনুভূতি জানতে চাইলে সদামুখর ফরীদি হঠাৎই নীরব হয়ে যান। এভাবে চললো টানা কয়েকটি মুহুর্ত। এক সময় নীরবতা ভাঙ্গলেন ফরীদি, বললেন,‘এ মনিহার আমায় নাহি সাজে...। ’
অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী মিতা হক, ফাহমিদা নবী ও সজীব। জনপ্রিয় উপস্থাপক ও নির্মাতা আবদুর নূর তুষার হুমায়ুন ফরীদিকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। অনুষ্ঠানের শেষ অংশে তথ্যচিত্রটি প্রদর্শন করা হয়।
ঝলমলে এ অনুষ্ঠানে তারকাদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্য করার মতোই। অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ে মঞ্চে এসে হুমায়ুন ফরীদিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান সাংবাদিক আবেদ খান, জনপ্রিয় উপস্থাপক ও নির্মাতা হানিফ সংকেত, নাট্যকার মান্নান হীরা, মডেল ও নৃত্যশিল্পী মৌ, অভিনেতা আজাদ আবুল কালাম, নির্মাতা গাজী রাকায়েতসহ আরো অনেকে।
বাংলাদেশ সময় ২২৪৫, মে ২৯, ২০১১