বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কৃতী পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধের ছবি ‘ওরা এগারোজন’ দিয়ে শুরু করেছিলেন পথচলা।
নতুন করে দেবদাস নির্মাণের কাজে কেন হাত দিলেন?
শুরুতেই বলে রাখি আমি মূলত সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্র নির্মাতা। ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি আমার ঝোঁক। বাংলা সাহিত্যের অনেক কাসিক গল্প-উপন্যাস আমার পড়া। একটা ভালো সাহিত্য পাঠের পর তার চিত্ররূপ কল্পনা করে আমি এক ধরনের তৃপ্তি পাই। আমার পড়া সেরা উপন্যাসগুলোর একটি হলো শরৎচন্দ্রের দেবদাস। এটি এমন একটি জনপ্রিয় উপন্যাস যা নিয়ে তিনটি ইন্ডাস্ট্রিতে এ পর্যন্ত ছয়টি চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। ত্রিশ বছর আগে আমি একবার দেবদাস তৈরি করেছিলাম। আজকের প্রজন্ম বুলবুল আহমেদ-কবরীকে নিয়ে তৈরি করা আমার সেই দেবদাস দেখেনি। স্যাটেলাইট প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের তরুণ প্রজন্মের সাহিত্যের সঙ্গে যোগাযোগটা কম। বাংলা সাহিত্যের ভা-ার যে কতটা সমৃদ্ধ তা তারা জানে না। দ্বিতীয়বার দেবদাস নির্মাণের কাজে হাত দিয়েছি আমি আসলে তরুণ প্রজন্মের দর্শকদের জন্যই। আমার বিশ্বাস তারা এই সময়ের টপ হিরো-হিরোইনকে নিয়ে তৈরি করা রঙিন দেবদাস দেখবে। বাংলা সাহিত্যে যে দেবদাসের মতো চমৎকার প্রেমের উপন্যাস আছে, তা জেনে তারা মুগ্ধ হবে। সেই মুগ্ধতা নিয়ে তারা সাহিত্যের প্রতি ঝুঁকবে। সাহিত্যের প্রতি তরুণ প্রজন্মের আকর্ষণ তৈরির জন্যই আবার আমি নতুন করে দেবদাস নির্মাণ করছি।
তরুণ প্রজন্মের সামনে আছে মুম্বাইয়ের সঞ্জয় লীলা বানসালির সেই জাঁকজমকপূর্ণ দেবদাস। সেক্ষেত্রে আপনার দেবদাস তাদের কতটুকু আকর্ষণ করতে পারবে?
আমি অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেবদাস উপন্যাসের চলচ্চিত্র রূপ তৈরি করছি। মূল উপন্যাসে যেখানে যতটুকু আছে আমি তা অবিকল রেখেই দেবদাস বানাচ্ছি। কোনো ধরনের বিকৃতি বা বাড়তি সংযোজনের মধ্যে আমি যাইনি। কাজেই অন্য ইন্ডাস্ট্রির বিজাতীয় দেবদাসের সঙ্গে আমার তৈরি দেবদাসের তুলনা করাটা ঠিক হবে না। আমার বিশ্বাস অবশ্যই নতুন প্রজন্মের দর্শকরা ছবিটি দেখতে আসবে। কারণ দেবদাসের মধ্যে এমন কিছু উপাদান আছে যা যুগ যুগ ধরে বাঙালিকে আকর্ষণ করবে।
বুলবুল আহমেদ আর কবরীর জায়গায় কেমন করেছেন শাকিব খান আর অপু বিশ্বাস?
সত্যি বলতে কি শুটিংয়ের সময় আমার শাকিব আর অপু না, আমার সামনে যেন বুলবুল-কবরীই দাঁড়ানো। শুটিংয়ের সময় আমি এতোটাই নিমগ্ন থাকি যে, কাকে কী বলি কিছুই মনে রাখতে পারি না। সেদিন শুটিং শেষে দেখি অপু বিশ্বাস আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে। ঘটনা কী? একজন এসিস্টেন্ট এসে বলল, লাস্ট দৃশ্যটা টেক করার সময় আপনি অপু ম্যাডামকে কবরী নামে ডেকেছেন। অনেকের মতে এ পর্যন্ত যতোগুলো দেবদাস তৈরি হয়েছে তার মধ্যে সেরা পার্বতী ছিলেন কবরী। সত্যিই কবরীর সেই অভিনয় এখনো আমার চোখে লেগে আছে। অপু বিশ্বাসকে পার্বতী চরিত্রে কাস্ট করার সময় আমার নিজের ভিতরই দ্বিধা ছিল। অপু তো এখন পর্যন্ত সাহিত্যনির্ভর ছবিতে তেমন কোনো সিরিয়াস চরিত্র করেননি। তাই সন্দেহ ছিল সে কতটুকু পার্বতী হতে পারবে। অপু পেরেছে এবং ভালোভাবেই পেরেছে। আসলে চরিত্রটি নিয়ে সে ছিল খুবই সিরিয়াস ও আন্তরিক। পার্বতী চরিত্রটি করার জন্য তাকে প্রচুর হোমওয়ার্ক করতে হয়েছে। উপন্যাসটি পড়েছে কমপক্ষে দশবার। পরিশ্রমের ফল পেয়েছে হাতেনাতে। অনেক ক্ষেত্রে তার অভিনয় কবরীকে ছাড়িয়ে গেছে বলে আমার মনে হয়েছে। শাকিব খান এ সময়ের এক নম্বর নায়ক, কাজেই সাংঘাতিক ব্যস্ত। কিন্তু দেবদাসের শুটিংয়ে সময় দিতে মোটেও কার্পণ্য ছিল না তার। তাকে নিয়ে যাবার জন্য অন্য প্রডাকশন থেকে লোক এসে দাঁড়িয়ে আছে। অথচ সেদিকে তার ভ্রƒক্ষেপ নেই। আমি তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য হয়তো দ্রুত শট ওকে করছি। কিন্তু শাকিব বলছে, না চাষী ভাই এই শটটা ভালো হয়নি। এই শটটার আরেকটা টেক নিন। আমার প্রত্যাশার চেয়েও অনেক ভালো অভিনয় করেছেন শাকিব। আর চন্দ্রমুখী চরিত্রে মৌসুমী আরেকবার প্রমাণ করেছেন তার অভিনয়ক্ষমতা। পার্বতী চরিত্রের চেয়ে চন্দ্রমুখী চরিত্রটি অনেক বেশি ক্রিটিক্যাল। এখানে সে এমন কিছু এক্সপ্রেশন দিয়েছে, যা দেখে আমি চমকে গেছি। ছোটপর্দার শক্তিমান অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম চুনিলাল চরিত্রে বড়পর্দাতেও ছিলেন সাবলীল। সব মিলিয়ে অভিনয় শিল্পীদের কাছ থেকে যা পেয়েছি তাতে আমি স্যাটিসফাইড।
কবে নাগাদ দর্শক রঙিন দেবদাস দেখতে পাবে?
ছবিটি এখন আছে এডিটিং টেবিলে। ডাবিং, প্রিন্টিং,সেন্সর সব মিলিয়ে আরো মাসখানেক লেগে যেতে পারে। আশা করি আসছে রোজার ঈদে ছবিটি দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে পারব।
আপনার পরবর্তী প্রজেক্ট কী?
এখনো ঠিক করিনি। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি বানাই না অনেকদিন হয়ে গেল। একটা মুক্তিযুদ্ধের ছবির কাজে হাত দেওয়ার ইচ্ছে আছে। আবার ‘বীর ঈসা খাঁ’ নামে একটা চিত্রনাট্য তৈরি করা আছে, সেটার কাজও ধরতে পারি। আবার তারাশঙ্করের ‘কবি’ উপন্যাসের চলচ্চিত্ররূপ তৈরির কাজেও হাত দিতে পারি। আসলে নিশ্চিত করে এখনই কিছু বলতে পারছি না।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৪৩০, জুলাই ২২, ২০১০