ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

ভেতরে-বাহিরে ন্যান্সি...

তৌহিদ রনি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১১

‘ভেতর বলে দূরে থাকুক বাহির বলে আসুক না...’ থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নম্বরের এই একটি গানই ন্যান্সিকে পৌছে দিয়েছে হাজার হাজার শ্রোতার হৃদয়ের বন্দরে। অডিও, প্লেব্যাক আর স্টেজ শো - গানের এই তিন মাধ্যমেই এখন ন্যান্সি সমান ব্যস্ত।

এই সময়ের গানের ভুবনে ন্যান্সি তৈরি করেছেন ক্রেজ। আসুন শুনি, গানের পাখি ন্যান্সির ভেতর-বাহিরের গল্প।

জন্মসূত্রে যশোরের মেয়ে হলেও ন্যান্সি বেড়ে উঠেছেন সোমেশ্বরী নদীর পাড়ের নেত্রকোনায়। তার পুরো নাম নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি। মা জোৎস্না হক ছিলেন শখের শিল্পী। বয়স যখন মাত্র চার বছর তখনই মায়ের কাছে ন্যান্সির গানে হাতেখড়ি। একটু বড় হয়ে উঠার পর তালিম নেন ফরিদপুরের ওস্তাদ তারাপদ দাসের কাছে।

গানের ভুবনে পথচলা শুরুর কথা জানিয়ে ন্যান্সি বললেন, ‘আসলে মায়ের প্রবল ইচ্ছাতেই আজকের এই অবস্থানে এসে পৌছেছি। মা গান গাইতেন। তার গানের মায়াজালেই আমার আজকের ন্যান্সি হয়ে ওঠা। ’

তবে আজকের ন্যান্সি হয়ে ওঠার পেছনে চমৎকার একটা গল্প আছে। নেত্রকোনায় থাকাকালীন ন্যান্সির বাসায় এক সন্ধ্যায় ঘরোয়া গানের আসরে তার মামা নজরুল ইসলামের সঙ্গে আসেন বিখ্যাত শিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ। সেদিন ন্যান্সির গান শুনে তিনি বেশ খুশি হয়েছিলেন এবং ন্যান্সির মাথা ছুঁয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন। ফেরদৌস ওয়াহিদ তখন ঢাকায় এসে ছেলে হাবীবের কাছে ন্যান্সির কন্ঠের স্বকীয়তা ও মাধুর্যের প্রশংসা করেন।

হাবীব তখন ‘ভালবাসবো বাসবোরে ...’ গানটির কোরাসের জন্য নতুন মেয়ে খুঁজছিলেন। পরে হাবীব ন্যান্সিকে তার স্টুডিওতে ডেকে পাঠান। সেবার ঢাকায় এসে ন্যান্সিকে গানটির কোরাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়েছিল। কিন্তু সেদিন হাবীব ঠিকই ন্যান্সির জাতটা চিনেছিলেন। তাই তিনি আবারও ন্যান্সিকে ডেকে পাঠান। এবার হাবীব ন্যান্সিকে দিয়ে করিয়ে ফেলেন ফ্রেশ সয়াবিন তেলের চমৎকার একটা জিঙ্গেল। পুরো মিডিয়া জগতে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায় নবীন এই শিল্পীর গায়কী নিয়ে। এরপর আর ন্যান্সিকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। জনপ্রিয় অনেক বিজ্ঞাপন, টিভিনাটক আর চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করে ন্যান্সি শ্রোতাদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন।

ন্যান্সির গাওয়া গানগুলো গত কয়েকবছরের সবচেয়ে সফল ও জনপ্রিয় গানের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। ‘বাহির বলে দূরে থাকুক’, ‘হৃদয়ের কথা’, ‘পৃথিবীর যত সুখ’, ‘এতদিন কোথায় ছিলে’, ‘দুই দিকেই বসবাস’, ‘চাঁদকে যেমন ঘোমটা দিয়ে’, ‘ভালবাসা অধরা’, গানগুলো বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এত জনপ্রিয় গান করেও ন্যান্সি চলছেন স্রোতের বিপরীতে । বেশি বেশি গান করা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন। তাই এখন পর্যন্ত তার একক অ্যালবামের সংখ্যা মাত্র একটি।

ন্যান্সির বর্তমান ব্যস্ততা সম্পর্কে কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আরফিন রুমীর সুর ও সঙ্গীতে দ্বিতীয় অ্যালবামের কাজ একটু একটু করে আগাচ্ছে। ভাল কিছু উপহার দেয়ার জন্য কিছুটা সময় নিচ্ছি অ্যালবাম রিলিজ দিতে। এছাড়াও সোহেল আরমানের লেখা গান নিয়ে একটি দ্বৈত অ্যালবামে কাজ করছি আরফিন রুমীর সাথে। আর প্লেব্যাক করছি ‘লাল টিপ’সহ দুটি চলচ্চিত্রে।

বাস্তবজীবনে ন্যান্সি বেশ গোছালো ও ধৈর্যশীল স্বভাবের মেয়ে। তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও পরম মমতায় আগলে রেখেছেন নিজের ঘর সংসার। স্বামী সৌরভ আর তিন বছরের একমাত্র কন্যা রোদেলাকে নিয়ে ন্যান্সির টোনাটুনির সংসার। সাংসরিক জীবনের কথা জানিয়ে  ন্যান্সি বলেন, একটা সংসারে অনেক রকম কাজ থাকে। আমি আর সৌরভ কাজগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছি। আমি যখন সকালে উঠে গানের অনুশীলনে বসি সৌরভ তখন সব দেখাশোনা করে কিংবা বাহিরে যখন বের হই তখন সে আমার সঙ্গী হয়। আবার দূরে যখন থাকি তখন ঠিকই খানিকক্ষণ পর পরই ফোনে একে অন্যের খোঁজ-খবর  নিই। আসলে সংসার জীবনে পারস্পারিক সহযোগিতা অনেক বড় একটা বিষয়।

ন্যান্সি আধুনিক গান করলেও মনের মধ্যে লালন করেন একটি স্বপ্ন। নজরুল সঙ্গীতের প্রতি তার রয়েছে অসম্ভব দূর্বলতা। স্বপ্ন দেখছেন একটা পূর্ণাঙ্গ নজরুল সঙ্গীতের অ্যালবাম বের করার। তবে ন্যান্সি বর্তমান সময়ে দাড়িয়ে সবচেয়ে বড় যে স্বপ্নটা দেখছেন সেটি হল একটি হাসপাতাল নির্মাণের। দুস্থ, অসহায়, অভাবী মানুষেরা সেখানে বিনা অর্থে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। গানের পাখি ন্যান্সির এই রঙিন স্বপ্নটা পূরণ হবে এটাই তার ভক্তদের প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ সময় ১৬৫০, এপ্রিল ২৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।