বৃত্তাকার মঞ্চের দেয়াল ঘুরে গেলো। আলো-আঁধারীর মধ্যে দেখা গেল ‘হু ওয়ান্টস টু বি এ মিলিনিয়ার’-এর আদলে তৈরি দৃশ্যপট।
১১০টি দেশের মানুষকে মাতিয়ে দিয়ে এবার দেশ টিভির আয়োজনে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘কে হতে চায় কোটিপতি’। ভারতে অনুষ্ঠিত টেলিভিশন শো ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’-এর সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক দর্শকই পরিচিত। পরিচিত টানটান উত্তেজনা তৈরি করতে পারদর্শী উপস্থাপক অমিতাভ বচ্চন ও শাহরুখ খানের সঙ্গে। ‘কে হতে চায় কোটিপতি’-এর মাধ্যমে সেই একই ভঙ্গিতে বাংলাদেশে দর্শকদের সামনে দাঁড়াবেন আনিসুল হক। এটা তার জন্য অনেকটা চ্যালেঞ্জের মতোই । বিষয়টি স্বীকার করে নিলেন আনিসুল হক নিজেও। তিনি বললেন, বিশ্বের শতাধিক দেশে ‘হু ওয়ান্টস টু বি এ মিলিনিয়ার’ কিংবা পাশের দেশের ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’-এর উপস্থাপনায় যারা এসেছেন তারা প্রত্যেকে একেকটি কিংবদন্তি। আমি কোনো কিংবদন্তি নই, কোনো সুপারস্টার নই। তবু আমাকেই দেয়া হয়েছে ‘কে হতে চায় কোটিপতি’ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনের দায়িত্ব। আমি আমার সবটুকু সাধ্য দিয়ে দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করবো।
৯ মে সোমবার দুপুরে হোটেল রূপসীবাংলার উইন্টারগার্ডেনে জমকালো আনুষ্ঠানিকতা ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশ টিভির আয়োজনে রবি নিবেদিত ‘কে হতে চায় কোটিপতি’ রিয়েলিটি শোর উপস্থাপকের নাম ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামান নূর এমপি এবং রবির চিফ মার্কেটিং অফিসার বিদ্যুৎ কুমার বসু। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন দেশ টিভির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান এবং সহযোগী আয়োজক ডেলটা বের চেয়ারম্যান এম ফখারুদ্দিন রাজী ও রেড ডটের কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন লাক্সতারকা মুনমুন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য রাখেন আসাদুজ্জামান নূর। তিনি বলেন, পৃথিবী জুড়ে জনপ্রিয় ও সর্ববৃহৎ রিয়েলিটি শো ‘হু ওয়ান্টাস টু বি এ মিলিনিয়ার’-এর লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়ে দেশ টিভি বাংলাদেশে ‘কে হতে চায় কোটিপতি’-এর আয়োজন করতে যাচ্ছে। এ প্রতিযোগিতায় যে কোনো প্রতিযোগী টানা ১৫টি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে জিতে নিতে পারেন কোটি টাকা। তবে এখানে ভাগ্য পরীক্ষার কোনো সূযোগ নেই। পড়াশোনা আর জ্ঞান চর্চা যারা করেন তারাই এখানে বিজয়ী হতে পারেন। যারা পড়তে ও জানতে ভালোবাসেন তাদের জন্যই এই প্রতিযোগিতা।
রবির চিফ মার্কেটিং অফিসার বিদ্যুৎ কুমার বসু তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় এরকম একটি বড় রিয়েলিটি শো আয়োজনের মধ্য দিয়ে। আশা করছি ‘কে হতে চায় কোটিপতি’ অনুষ্ঠানটি আমাদের দেশের মানুষকে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় উৎসাহিত করবে। লাভবান হবে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম। জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার এই আয়োজনে রবি যুক্ত হয়েছে তার সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে।
‘কে হতে চায় কোটিপতি’-এর উপস্থাপক আনিসুল হক নিজের মনের অনুভূতির কথা জানিয়ে বলেন, আমি গর্ব অনুভব করছি ‘কে হতে চায় কোটিপতি’ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনার সূযোগ পেয়ে। এটি এমন একটি গেম শো, যা মানুষকে পুরোপুরি বদলে দিতে পারে। আমি অর্থপ্রাপ্তির ব্যাপারটিকে বড় করে দেখছি না। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য পড়াশোনা আর জ্ঞানচর্চার প্রয়োজন। পড়াশোনা আর জ্ঞানচর্চা যে কোনো মানুষকে বদলে দেয়। এ অনুষ্ঠানে যারা অংশ নেয় তারা কেউ হারে না, সবাই জয়ী হয়। তিনি টাকা পান আর না পান, তার জ্ঞানের সমৃদ্ধি বাড়ে।
টিভিপর্দায় যেভাবে ‘কে হতে চায় কোটিপতি’ দেখা যাবে, তারই একটি ড্রেসরিহের্সাল অনুষ্ঠানে দেখানো হয়। উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্য থেকে লটারীর মাধ্যমে একজনকে আনিসুল হক ডেকে নেন মঞ্চে। হটসিটে তাকে বসানো হয়। তার মুখোমুখি বসে আনিসুল হক প্রশ্ন আর সম্ভাব্য ৪টি উত্তর মেলে ধরেন। দর্শকরা ‘হু ওয়ান্টাস টু বি এ মিলিনিয়ার’-এর বাংলাদেশ সংস্করণকে আরেকবার তুমুল করতালি দিয়ে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানে দেশ টিভির প্রমোশনাল কুইজবিজয়ী সিলেটের মমিন ইসলামকে পুরস্কৃত করা হয়।
‘কে হতে চায় কোটিপতি’ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার প্রক্রিয়ার কথা জানতে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, দেশটিভিতে আগামী এক সপ্তাহ এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের উপায় জানিয়ে বিশেষ প্রমোশনাল প্রচার হবে। এতে থাকবে কয়েকটি প্রশ্ন। সঠিক উত্তরদাতাদের ডাকা হবে অডিশনে। বিভাগীয় পর্যায়ে ৫টি জোনে এই অডিশন অনুষ্ঠিত হবে। অডিশনে উত্তীর্ণদের পর্যায়ক্রমে ‘কে হতে চায় কোটিপতি’ অনুষ্ঠানের হটসিটে বসার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে। আগামী জুন মাসের মাঝামাঝি নাগাদ অডিশন সম্পন্ন করার পরিকল্পনার কথা তিনি জানালেন। অডিশন পর্ব অংশবিশেষ প্রচার করা হবে দেশটিভিতে।
বাংলাদেশ সময় ১৭১০, মে ০৯, ২০১১