ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

পপগায়িকা পিলু মমতাজের চিরবিদায়

বিপুল হাসান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৪ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১১

সত্তর ও আশির দশকের জনপ্রিয় পপগায়িকা পিলু মমতাজ আর নেই। ২২ মে রোববার দিবাগত রাত ৩টায় তিনি ঢাকার ডিওএইচএস বারিধারার বাসভবনে আকস্মিকভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং অচেতন হয়ে পড়েন।

তাৎক্ষণিকভাবে অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৫২ বছর। তিনি স্বামী কর্নেল (অব.) আনোয়ারুজ্জামান ও এক মেয়ে হোমায়রা জামান মৌকে রেখে যান।

পিলু মমতাজের মৃত্যুতে দেশের সঙ্গীতাঙ্গনে নেমে আসে  শোকের ছায়া। সোমবার সকাল থেকে তার বারিধারার বাসভবনে শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনের ব্যক্তিত্ব ও শুভানুধ্যায়ীরা ভীড় করেন। বিকালে বাদ আসর বারিধারা জামে মসজিদে নামাজে জানাজার পর এই শিল্পীকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সঙ্গীত সংগঠনের সদস্যরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।


পিলু মমতাজের জন্ম ঢাকায়। তিনি ওস্তাদ মমতাজ আলী খানের কন্যা। সাতবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে পপসঙ্গীত তথা আজকের ব্যান্ড সঙ্গীতের প্রসারে পিলু মমতাজ পালন করে গেছেন অগ্রণী ভূমিকা। সত্তর দশকে আজম খান, ফকির আলমগীর, ফেরদৌস ওয়াহিদ, নাজমা জামানের সঙ্গে পপ ধারার গানের অন্যতম প্রবর্তক তিনি।

পপসঙ্গীতে পারফর্মেন্স একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পিলু মমতাজ সেটি উপলব্ধি করেন এবং উপস্থাপন করেন। স্টেজে পিলু মমতাজের আকর্ষণীয় পারফর্মেন্স তাকে করে তোলে জনপ্রিয়। শুধু স্টেজেই নয়, বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতারে তিনি আশির দশকে নিয়মিত পপগানের পাশাপাশি আধুনিক গানও পরিবেশন করেছেন। আসাদুজ্জামান নূরের বিপরীতে অভিনয় করেছেন বিটিভির ‘টারজান আসছে’ নামে একটি নাটকে।

পিলু মমতাজের গাওয়া বিখ্যাত গানগুলোর মধ্যে রয়েছে-  একদিন তো চলে যাবো পরের ঘরনী হবো, চারা গাছে ফুল ফুইটাছে ডাল ভাইঙ্গো নারে মালি, মাঝি নাও ছাইড়া দে পাল উড়াইয়া দে, নানীগো নানী আমারেনি নিয়া যাইবা ভাইসাবের বাড়ি, ওরে ও সাম্পানওয়ালা,  রিতা চলে যেও না প্রভৃতি।   রুনা লায়লার পর দেশ-বিদেশের মঞ্চে ‘দমাদম মাস্কালান্দার’ গানটি সেসময় পিলু মমতাজ-ই আকর্ষণীয়ভাবে পরিবেশন করতেন।

তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়ার পরও নব্বই দশকের শুরুতে পিলু মমতাজ অজানা কারণে সঙ্গীত থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। বেছে নেন নিভৃত জীবনযাপন।

পিলু মমতাজ প্রসঙ্গে ফকির আলমগীর বলেন, তার এ হঠাৎ চলে যাওয়া সত্যিই মেনে নেবার মতো নয়। খবরটি শোনার পর থেকেই নিজেকে খুব একা একা লাগছে। আজ বাংলাদেশে মিলা, তিশমা, কানিজ সুবর্ণা যেভাবে মঞ্চ কাঁপিয়ে গান গাইছে এইধারার পথ প্রদর্শক পিলু মোমতাজ। তাই তার অবদানকে ভুলে গেলে চলবেনা। অজানা কারণে গানের জগত থেকে দূরে সরে যান। সম্প্রতি তাকে আবার গানে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল।

সর্বশেষ চ্যানেল আই সিটিসেল অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে তিনি আমি আর ফেরদৌস ওয়াহিদ একসাথে গান গেয়েছিলাম। ফিরোজ সাইকে উৎসর্গ করে গেয়েছিলাম ‘এক সেকেন্ডের নাই ভরসা’ গানটি। সেই গানটি যেন সত্যি হয়ে গেলো আজ পিলু মমতাজের জীবনেও।

প্রায় পাঁচশোরও বেশি স্টেজশোতে একসঙ্গে গান গেয়েছেন ফেরদৌস ওয়াহিদ ও পিলু মমতাজ। তার সম্পর্কে বলতে গিয়ে ফেরদৌস ওয়াহিদ বললেন, আমরা একজন আরেকজনকে তুই বলে সম্বোধন করতাম। সর্বশেষ তার চ্যানেল আই সিটিসেল অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে একসঙ্গে গান গেয়েছিলাম। ফেরদৌস ওয়াহিদ পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণ করে বললেন, আমার মনে পড়ছে ১৯৭৭ সালে রংপুরে একই স্টেজে একসঙ্গে আমরা গান গেয়েছিলাম। সে সময় অনুষ্ঠানে দশ হাজারেরও বেশি দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতি আমাদের অবাক করে দিয়েছিলো। অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন পিলু মমতাজ। সেই দিনটি সত্যিই সেদিনটি ভোলার নয়। তবে গানের দৈন্যদশা নিয়ে তার মধ্যে খুবই হতাশা ছিল বলেই তিনি গান থেকে দূরে সরে যান। নিয়মিতভাবে তাকে আর গানে ফেরানো যায় নি।

পিলু মমতাজের গাওয়া জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘একদিন তো চলে যাবো পরের ঘরনী হবো’। মনিরুজ্জামান মনিরের লেখা এ গানটির সুরকার শেখ সাদী খান। পিলু মমতাজ প্রসঙ্গে শেখ সাদী খান বলেন, খুবই প্রতিভাবান শিল্পী ছিলেন পিলু মমতাজ। মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন চমৎকার। যেখানেই যেতেন জামিয়ে রাখতেন। আমার সুর করা ‘একদিন তো চলে যাবো’ গানটি তার কন্ঠে বেশ মানিয়েছিল। একধরণের অভিমান নিয়েই তিনি গানের জগত থেকে দূরে সরে যান। তিনি যে গায়কী ঢঙে গান করতেন তাই অনুসরণ আজকের অনেক পপগায়িকা। সঙ্গীতাঙ্গনে পিলু মমতাজের অবদান অস্বীকার করার কোন উপায়ই নেই।

পিলু মমতাজ সম্পর্কে তার মেয়ে হোময়রা জামান মৌ বলেন, কী অভিমান থেকে আমার মা গান থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে আনেন তা আমি জানি না। তবে মা বাইরের জগতের গান থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলেও সঙ্গীতচর্চার মধ্যেই ছিলেন। ঘরে তিনি নিয়মিত সঙ্গীতচর্চা করতেন। সবসময় দেশ-বিদেশের গান শুনতেন।

বাংলাদেশ সময় ১৮৩০, মে ২৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।