ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

প্রজন্মের পর প্রজন্মে সোলস

বিপুল হাসান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১১

১৯৭২ থেকে ২০১১ সাল, আর মাত্র কয়েক মাস পরই দেশের ঐতিহ্যবাহী ব্যান্ড দল সোলস পূর্ণ করতে চলেছে চার দশক। এই লম্বা সময়ে সোলস দেশকে উপহার দিয়েছে তপন চৌধুরী, নকীব খান, আইয়ুব বাচ্চু, নাসিম আলী খান, পার্থ বড়ুয়ার মতো গুনী শিল্পী।

অনেকে এসেছেন, অনেকে বেরিয়ে গেছেন। থেমে থাকেনি সোলস। চট্টগ্রামে গড়ে ওঠা এই ব্যান্ডটি প্রজন্মের পর প্রজন্মের মাঝে ধরে রেখেছে জনপ্রিয়তা।

সম্প্রতি নতুন অ্যালবাম ‘জ্যাম’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে সোলস। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাওয়ার ঐতিহ্য নিয়ে সোলসের এ অ্যালবামটি রিলিজ দেওয়া হয়েছে মোবাইল ফোনে। গ্রামীণফোন থেকে সোলসের নতুন অ্যালবাম ‘জ্যাম’-এর গানগুলো ডাউনলোড করে বর্তমানে শুনতে পারছেন শ্রোতারা। দু’মাস পর এটি সিডি আকারে অডিও বাজারে আসবে।

নতুন এ অ্যালবামে রয়েছে ‘সোলস ফিচারিং ইউ’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীর লেখা গানের কথা এবং একই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী একজন যন্ত্রশিল্পীর বাজানো ইন্সট্রুমেন্টাল। দুমাস অগে এই প্রতিযোগিতার আহ্বান জানানো হয়েছিল। হাজার হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে গীতিকার হিসেবে মাহফুজ রহমান ও বেহালা বাদক জাহিদ আনোয়ার মনোনীত হন। বিচারকদের দেওয়া নম্বর এবং শ্রোতা-দর্শকদের ভোটের ভিত্তিতে চূড়ান্ত বিজয়ী নির্বাচন করা হয়। ‘জ্যাম’ অ্যালবামটির বিভিন্ন গানের কথা লিখেছেন আশরাফ বাবু, আশিক, কবির বকুল, টিআই অন্তর, রনি ও প্রতিযোগিতায় বিজয়ী নবীণ গীতিকার মাহফুজ। গ্রামীণফোন সূত্রে জানা গেছে, সোলসের এই অ্যালবামটি গান শুনতে গ্রাহকদের কাছ থেকে তারা বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছেন। Souls

সোলসের বিশ বছরের কান্ডারি ও প্রধান ভোকাল পার্থ বড়ুয়া ‘জ্যাম’ অ্যালবামটি সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, দেশ জুড়ে ছড়িয়ে আছে সোলসের অগুনতি ভক্ত। এ পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে যেটুকু সাড়া পেয়েছি তাতে মনে হচ্ছে অ্যালবামটির গানগুলো তাদের পছন্দ হয়েছে। এ অ্যালবামের মাধ্যমে  আমরা দুজন নবীন সঙ্গীত-তারকাকে দেশবাসীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারায় আমাদের আনন্দের মাত্রাটা অনেক বেড়ে গেছে। সোলস তার নিজস্ব কমিটমেন্ট থেকেই গ্রামীণফোনের সহযোগিতায় ‘সোলস ফিচারিং ইউ’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। আগামীতেও নবীন ও মেধাবী মিউজিশিয়নদের সুপরিচিত করে তুলতে আমাদের এ ধরণের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।

মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ‘জ্যাম’ অ্যালবামটি রিলিজ দেওয়া সম্পর্কে পার্থ বড়ুয়া বলেন, অডিও প্রযোজক-পরিবেশকরা শিল্পীদের প্রাপ্য সম্মানী থেকে বঞ্চিত করেন প্রায়ই। তারা নিজস্ব মুনাফার ঝুলির ওজন বাড়াতে নানারকম মিথ্যাচার ও প্রতারণার আশ্রয় নেন। এই অনাচার-অব্যবস্থা রোধের জন্যই অ্যালবামটি গ্রামীণফোনের মাধ্যমে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। এ সময় এরকম একটি প্লাটফর্ম আমাদের ব্যান্ডের জন্য খুবই প্রয়োজন ছিল।

এতে অ্যালবামটিকে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পার্থ বড়ুয়া বলেন, আমি এমনটা মনে করি না। বরং মোবাইল ফোন আজ যে জায়গায় এসেছে, তাতে শ্রোতাদের হাতে হাতে অ্যালবামটির গানগুলো পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে তারা কাজ করতে পারে। এটাকে একধরণের প্রমোশনালও বলা যেতে পারে। তাছাড়া দুমাস পর তো এটি সিডি আকারে বাজারে আসছেই।

সোলসের দীর্ঘদিনের সদস্য ও অন্যতম ভোকাল নাসিম আলী খান বাংলানিউজকে বলেন, এখন চলছে ডিজিটাল যুগ। গ্রামীণ ফোনের মাধ্যমে ডিজিটাল ফরম্যাটেই বেরিয়েছে ‘জ্যাম’ অ্যালবামটি। কারণ সোলস সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পছন্দ করে।

সোলসের সর্বশেষ ‘ঝুটঝামেলা’ অ্যালবামটি প্রকাশ হয়েছিল ২০০৭ সালে। চার বছর পর নতুন অ্যালবাম ‘জ্যাম’ বের করা সম্পর্কে  নাসিম আলী খান বলেন, গানে সোলস সবসময় কোয়ালিটির প্রতি গুরুত্ব দেয়। কোয়ানটিটি আমাদের কাছে মুখ্য নয়। সময়ের উপযোগী ভালো গানের জন্য আমরা লম্বা সময় নিয়েই এ অ্যালবামটি তৈরি করেছি। বিষয়ভিত্তিক গান নিয়ে পুরো অ্যালবামটি সাজানো হয়েছে। সোলসের ঐতিহ্য অনুযায়ী এ অ্যালবামের বিভিন্ন গানেও শ্রোতারা পাচ্ছেন বৈচিত্রের আমেজ।

সোলসের বর্তমান লাইন আপ

নাসিম আলী খান : ভোকাল
পার্থ বড়ুয়া : ভোকাল ও লিড গিটার
জাকির হাসান রানা : বেস গিটার
তুষার গোমেজ : কি-বোর্ড
তুষার রঞ্জন দত্ত : পারকিউশনস
মাসুম : ড্রামস

Soulsএক নজরে সোলস

প্রতিষ্ঠা : ১৯৭২ সালে চট্টগ্রামে।
প্রথম নাম : সুরেলা।
প্রতিষ্ঠাতা সদস্য : সাজেদ উল আলম, সুব্রত বড়ুয়া রনি, লুলু, এনায়েত হোসেন।
নাম পরিবর্তন (সোলস): ১৯৭৪ সাল।
উল্লেখযোগ্য সাবেক সদস্য : তপন চৌধুরী, নকিব খান, পিলু খান, শাহেদ, রুডি, লরেঞ্জো, আহমেদ নেওয়াজ, তাজুল ইমাম, আইয়ুব বাচ্চু, আশিক প্রমুখ।
প্রথম একক অ্যালবাম : সুপার দ্য সোলস (১৯৮০)।
একক অ্যালবাম : কলেজের করিডোরে (১৯৮২), মানুষ মাটির কাছাকাছি (১৯৮৭), ইস্ট এন্ড ওয়েস্ট (১৯৮৮), এ এমন পরিচয় (১৯৮৯), আজ দিন কাটুক গানে (১৯৯২), অসময়ের গান (১৯৯৭), মুখরিত জীবন (২০০০), উঠান (২০০২), টু-লেট (২০০৫), ঝুটঝামেলা (২০০৭) এবং জ্যাম (২০১১)।
মিক্সড অ্যালবাম : অর্ধ শতাধিক।
কনসার্ট : দেশ-বিদেশে চার সহস্রাধিক।
বিদেশে উল্লেখযোগ্য কনসার্ট : আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই, ভারত প্রভৃতি।

সোলসের সেরা  ১০ নির্বাচিত গান

১. মন শুধু মন ছুঁয়েছে ও সে তো মুখ খুলেনি

২. কলেজের করিডোরে দেখেছি চোখ দুটি ছিল যার সুন্দর

৩. এই মুখরিত জীবনে চলার বাঁকে অজানা হাজার কতো কাজের ভিড়ে

৪. ফরেস্ট হিলের এক দুপুরে কথা ছিল তুমি আসবে

৫. এ এমন পরিচয় অনুমতি প্রার্থণা সবিনয় নিবেদন

৬. কেনো এই নিঃসঙ্গতা কেনো এই মৌনতা

৭. ব্যস্ততা আমাকে দেয় নি অবসর তাই বলে ভেবো না স্বার্থপর

৮. চায়ের কাপে পরিচয় তোমার সাথে শানকিতে হাত রেখে

৯. বৃষ্টি দেখে অনেক কেঁদেছি কতোই আর্তনাদ

১০ সারাদিন তোমায় ভেবে হলো না আমার কোনো কাজ


বাংলাদেশ সময় ০০৪০, আগস্ট ২২, ২০১১।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।